Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আ.লীগ ‘অবৈধ বিক্ষোভের’ সাহস দেখালে ব্যবস্থা

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের ব্রিফিং

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আ.লীগ ‘অবৈধ বিক্ষোভের’ সাহস দেখালে ব্যবস্থা

ছবি: সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগের পতাকাতলে কেউ ‘অবৈধ বিক্ষোভ’ করার সাহস করলে তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনো ধরনের প্রচেষ্টার সুযোগ দেব না। বুধবার ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন। এরপর বুধবার বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিং করেন শফিকুল আলম। এ সময় তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে এত বড় একটা হত্যাকাণ্ডের পরও আওয়ামী লীগের কোনো অনুশোচনা নেই। সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন দাবিতে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মঙ্গলবার ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ, ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক কঠোর হরতাল। এর আগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। দলের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দলটির নেতাকর্মীর অনেকেই বিদেশে। দেশে থাকা নেতারা আত্মগোপনে। এমন অবস্থায় ফেসবুকে দলটি কর্মসূচির কথা জানাল।

সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে শেখ হাসিনা জোরপূর্বক গুম ও হত্যার সরাসরি নির্দেশদাতা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় একটা হত্যাকাণ্ড হলো, আপনার-আমার চোখের সামনে বাচ্চা ছেলেমেয়েদের খুন করা হলো, শত শত ছেলে অন্ধ হয়ে গেছে, অনেকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও তো আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই, অনুতপ্তও নয়। তার ওপর তারা মিথ্যা কথা বলছে যে, তিন হাজার পুলিশ সদস্য মারা গেছে। কত বড় জালিয়াতি, কত বড় মিথ্যা কথা।’ এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যারা ক্লিন আছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল না, তারা কি অনুতপ্ত হয়েছে? তারা কি বলেছে আমরা অনুতপ্ত? যারা অন্যান্য নেতা আছেন তারা কি বলেছেন যে পার্টি এই কাজ করেছে আমরা অনুতপ্ত, ক্ষমা চাই? ৭১টি শিশুকে তারা মেরেছে। হেলিকপ্টার দিয়ে মেরেছে। ‘আওয়ামী লীগের কে এসে বলছে যে, হাসিনার লিডারশিপ মানি না, আমি একটা ক্লিন লিডারশিপ চাই। কে এসে অনুতপ্ত হচ্ছে।’

ফেসবুকে শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো ন্যায্য বিক্ষোভ বন্ধ বা নিষিদ্ধ করেনি। আমরা সমাবেশ করার স্বাধীনতা এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। কিন্তু বুধবার সকালে গণমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাড়ে পাঁচ মাসে কেবল ঢাকায় কমপক্ষে ১৩৬টি বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বিক্ষোভের ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবু সরকার কখনো বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি।’ সরকারের কি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে বিক্ষোভ করার সুযোগ দেওয়া উচিত এ প্রশ্ন তুলে শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘জুলাই-আগস্টের ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায়, আওয়ামী লীগের কর্মীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হত্যায় অংশ নিয়েছিল। তাদের পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শহিদ হয়েছেন কয়েকশ তরুণ শিক্ষার্থী, এমনকি শিশুরাও। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় গণহত্যা, খুন ও তাণ্ডবের জন্য দায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার।’

তিনি আরও লেখেন, ‘মঙ্গলবার কয়েকজন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মীর সাক্ষাৎকারের বরাতে নিউইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, শেখ হাসিনা তার ১৬ বছরের একনায়কত্বের শাসনামলে সরাসরি হত্যা এবং জোরপূর্বক গুমের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি একটি চোরতন্ত্র (ক্লেপ্টোক্রেসি) এবং খুনি শাসনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিরপেক্ষ ও স্বাধীন একটি প্যানেল বলছে, শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে তার ঘনিষ্ঠরা ২৩৪ বিলিয়ন (২৩ হাজার ৪০০ কোটি) ডলার পাচার করেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি থেকে কোটি কোটি ডলার চুরির দায়ে হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে এখন তদন্ত চলছে।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘প্রায় সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তি জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন। প্রায় তিন হাজার জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শাপলা চত্বরের সমাবেশ এবং মাওলানা সাঈদীর বিচারিক রায়ের পর বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। পুলিশ বাহিনী হাসিনার শাসনামলে পুলিশ লীগে পরিণত হয়েছিল। হাসিনার একনায়কতন্ত্রে প্রায় ষাট লাখ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ভুয়া ও গায়েবি মামলা দেওয়া হয়। এমনকি দেশের প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতিকেও নির্মমভাবে মারধর করা হয়, পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। পাঠানো হয় নির্বাসনে। যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ এই গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড এবং প্রকাশ্য দুর্নীতির জন্য ক্ষমা না চাইবে, যতক্ষণ তাদের অন্যায়কারী নেতাকর্মীরা বিচারব্যবস্থার কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদের অপরাধের জন্য বিচারকার্যের প্রক্রিয়া শুরু করে পাপমোচন করতে উদ্যোগ না নেবে। যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ তাদের বর্তমান নেতৃত্ব ও ফ্যাসিবাদী আদর্শ থেকে নিজেকে আলাদা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া হবে না।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘মিত্রবাহিনী কি নাৎসিদের বিক্ষোভ করার অনুমতি দিয়েছিল?’ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব আরও লিখেছেন, পৃথিবীর কোনো দেশ কি একদল খুনি এবং দুর্নীতিবাজ চক্রকে আবার ক্ষমতায় আসতে দেবে? কোনো দেশই জবাবদিহি ছাড়া স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরার অনুমতি দেয় না। বাংলাদেশের জনগণ এই খুনিরা কোনো প্রতিবাদ-সমাবেশ করলে তার বিরুদ্ধে কঠিন জবাব দেবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনো ধরনের প্রচেষ্টাকে সুযোগ দেব না। আওয়ামী লীগের পতাকাতলে কেউ যদি অবৈধ বিক্ষোভ করার সাহস করে তবে তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম আরও বলেন, ফেব্রুয়ারিতে সংস্কার কমিশন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে। এই প্রতিবেদনের আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। এরপর সে আলোকে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ হবে। প্রেস সচিব বলেন, এই সরকার এমন কোনো আইন করবে না যেটা সাধারণ মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ করে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সরকার বা পুলিশ মামলা করেনি। ভুক্তভোগীরা (ভিকটিম) মামলা করেছে। এছাড়া তিনি জানান, এই সরকারের আমলে রপ্তানি বেড়েছে। বিভিন্ন বন্দরের কার্যক্রম বেড়েছে। পৃথিবীর চারটি বড় কোম্পানি চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বন্দর ব্যবস্থাপনা করতে চায়। দেশের রপ্তানি বাড়ার কারণেই তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তার মতে, আগের সরকার ইপিজেড করার নামে জমি দখল করেছিল। তাই কেউ বিনিয়োগ করতে চায়নি। কোরিয়ান ইপিজেডে সমস্যা ছিল। বিগত সরকার তা সমাধান করেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুতই সেই সমস্যার সমাধান করবে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম