দিনভর বৈঠক ফলশূন্য
রেলের কর্মবিরতিতে সারা দেশে লাখো যাত্রীর ভোগান্তি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: যুগান্তর
রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সারা দেশে লাখো ট্রেনযাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে টিকিট নিয়ে স্টেশনে এসে নিরাশ হয়ে ফিরে যান তারা। সোমবার মধ্যরাত থেকে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্টাফদের দাবি মেনে ট্রেন চলাচল শুরুরও কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। সোম ও মঙ্গলবার দিনভর রানিং স্টাফ, রেলওয়ে উপদেষ্টা, সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক হলেও ফলাফল শূন্য। ওই অবস্থায় আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, ‘দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন জারি করলেই কেবল ট্রেন চালাবেন সংশ্লিষ্ট স্টাফরা। নতুবা লাগাতার চলবে তাদের ধর্মঘট। বন্ধ থাকবে সব ধরনের ট্রেনের চাকা। রাজশাহী স্টেশনে ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা। ময়মনসিংহ জংশনে যাত্রীবাহী ট্রেন রেখে পালিয়েছেন চালক। যাত্রীদের জিম্মি করে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। অন্যদিকে আন্দোলনরত রেল কর্মচারীদের ‘যৌক্তিক দাবি’ আগেই মেনে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে বেরিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে রেলওয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) মো. নাহিদ হাসান খাঁন যুগান্তরকে জানান, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত সব ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। যাত্রীদের টিকেট রিফান্ড অপশন অচিরেই চালু করা হবে।
সোমবার মধ্যরাত থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণার পর মঙ্গলবার ভোর থেকে সারা দেশে সব ধরনের ট্রেন চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে ট্রেনগুলো। ঘোষণা অনুযায়ী কোনো ট্রেন এক ইঞ্চিও নড়েনি। ১১১টি আন্তঃনগর ট্রেনসহ প্রায় ৩৬৭টি ট্রেনের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রীরা যাত্রার তারিখ থেকে ৯ দিন পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট কাটতে পারেন। ফলে ১০ দিনের মধ্যে যারা টিকিট কেটেছেন, তাদের যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার যাদের ট্রেন যাত্রা ছিল, তাদের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশনসহ বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীরা আসেন। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সবাই ফিরে যান। তবে চরম ক্ষোভ জানিয়ে অধিকাংশ যাত্রী বলেছেন, এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা এর আগে হয়নি। শিশু-বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষ আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। কমলাপুর স্টেশনের পাশে নির্ধারিত বিআরটিসি বাস রাখা হলেও ওইসব বাসে তেমন যাত্রী উঠতে দেখা যায়নি। তবে একান্ত নিরুপায় হয়ে অনেক যাত্রীকে বিআরটিসি বাসে চড়তে দেখা গেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় এ বাস সেবা দেওয়া হয়। যেসব যাত্রীর ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল, তাদের আহ্বান করা হয়-ওই টিকিট দিয়ে বাসে গন্তব্যে পৌঁছা যাবে। এদিকে বিআরটিসির বাস ট্রেনের শিডিউল অনুযায়ী না হওয়ায় এবং যাত্রীদের বিভিন্ন গন্তব্যে ওইসব বাস না যাওয়ায় দুর্ভোগ আরও চরমে ওঠে।
মঙ্গলবার ভোর থেকে কমলাপুর স্টেশনে সরেজমিন দেখা যায় ট্রেনযাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। প্রতিদিন ভোর ৬টা ৪০ মিনিট থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত অন্তত ১৩টি আন্তঃনগর ট্রেন কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। ওইসব ট্রেনের যাত্রীরা রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোরেই রওয়ানা দিয়ে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে আসেন। স্টেশনে প্রবেশ করেই জানতে পারেন সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে অপেক্ষা করে অধিকাংশ যাত্রী ফেরত যান। ক্ষোভ উগরে যান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি। চট্টগ্রামগামী যাত্রী আতিকুল ইসলাম তার অসুস্থ মা-বাবা এবং স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মহানগর প্রভাতি এক্সপ্রেস দিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা। ভোরেই মোহাম্মদপুর থেকে স্টেশনে এসে পৌঁছেন। এসে জানতে পারেন ট্রেন চলাচল বন্ধ। অপেক্ষা করেন সকাল ৯টা পর্যন্ত। আশা-যদি ট্রেন ছাড়ে, তাহলে যেতে পারবেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্টেশন থেকে বের হওয়ার পথে তিনি বললেন, এ দেশ কখনোই সভ্য হবে না। এত বড় একটা সংস্থা কেন তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারে না। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে কী লাভ। কেন উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয় না। কোন অপরাধে হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগ পোহাল।
কমলাপুর স্টেশনে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের এক পুলিশ যাত্রী (টিকিট নং ডিএইচতে-০৩৫৯৪৯৩৯) কান্না করছিলেন। নিজেকে আড়াল করে বলছিলেন, পরিবারে বিয়ে চলছে। তাই ঢাকা থেকে ৫ জন সদস্য ট্রেনে করে যাওয়ার জন্য কমলাপুর স্টেশনে এসেছিলেন। এসে দেখেন সবই এলোমেলো। অসুস্থ সদস্যও রয়েছেন, তাদের নিয়ে তো আর বিআরটিসি বাসে যাওয়া যাবে না। সবই মেনে নিতে হয়-মেনেই নিচ্ছেন। তবে হৃদয়ের যে কষ্ট-আকুতি, তা কে শুনবে।
এদিকে সোমবার মধ্যরাত থেকে কমলাপুর স্টেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের আড়াল করে রাখেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বারবার সংঘবদ্ধ লোকজন এসে স্টেশন ম্যানেজার, মাস্টারের রুমে হানা দিচ্ছিল। সাধারণ যাত্রীরা মারমুখী হয়ে উঠেছে। কমলাপুর স্টেশন সোমবার রাত থেকেই থমথমে ছিল। দুপুরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্টেশনের ভিআইপি কক্ষে লাগাতার বৈঠক করছিলেন। কক্ষের বাইরে ছিল কড়া পাহারা। সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ শোনারও কেউ ছিলেন না।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে স্টেশনে পৌঁছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। তিনি সাধারণ যাত্রী ও গণমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন, যাত্রীদের জিম্মি করে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি দুঃখজনক। আলোচনার দরজা খোলা। আমরা আলোচনা করতে চাই। তিনি বলেন, এতে সাধারণ মানুষই বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। কোনো যাত্রী যদি স্টেশনে আসেন, তাদের জন্য আমরা বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, স্টাফদের মাইলেজ অ্যালাউন্সের যে দাবি, তা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। তাদের এ দাবির অনেক অংশ আমরা ইতোমধ্যে পূরণ করেছি। বাকি দাবিগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করতে প্রস্তুত আছি। রেল তো কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এখানে আলোচনার সুযোগ আছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রীদের জন্য ১০টি করে ২০টি বাস দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে বাস আরও বাড়ানো হবে। মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। এই রানিং স্টাফরা হলেন গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। তারা সাধারণত দীর্ঘ সময় ট্রেনে দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে মঙ্গলবার যখন কমলাপুর স্টেশন ঘিরে উত্তেজনা, তখন দুপুর পৌনে ২টার দিকে কর্মবিরতি থেকে সরে আসতে রানিং স্টাফদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। কিন্তু বৈঠকে কোনো সুরাহা না হওয়ায় রানিং স্টাফরা বেরিয়ে যান। বৈঠক থেকে বের হয়ে শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস যুগান্তরকে বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করছি, শ্রমিক ও শ্রমিকনেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এখন আমরা রেলওয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছি রেলভবনে। আশা করছি সমস্যার সমাধান হবে।
রাজশাহী স্টেশনে ভাঙচুর যাত্রীদের : ট্রেন বন্ধ থাকায় টিটিইদের কক্ষের চেয়ার-টেবিলসহ রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে পেতে রাখা বেশকিছু চেয়ার ভাঙচুর করেন ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। মঙ্গলবার স্টেশনে আসা কয়েকশ যাত্রী ট্রেন না পেয়ে সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বিক্ষোভ ও ভাঙচুর চালান বলে জানিয়েছেন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার শহীদুল আলম। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পরে টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে তারা বাড়ি ফেরেন।
চট্টগ্রাম থেকেও ছেড়ে যায়নি কোনো ট্রেন : সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। তবে বিকল্প হিসাবে চালু করা হয় বিআরটিসি বাস সার্ভিস। ফলে অনেক যাত্রী স্বস্তিতে রওয়ানা দেন গন্তব্যের উদ্দেশে। অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলা করতে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দাবি আদায়ে দিনভর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা। সরেজমিন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন অনেক যাত্রী। স্টেশনে গিয়ে কেউ কেউ টিকিটের টাকা ফেরত নিলেও অনেকেই গন্তব্যে কিভাবে পৌঁছবেন, তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন। যাদের জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল, তারা পড়েছেন সবচেয়ে বেকায়দায়। ঢাকা, কুমিল্লা ও সিলেটগামী যাত্রীরাই বিআরটিসি বাসে যাতায়াতের সুযোগ পেয়েছেন। ট্রেনের টিকিট দেখিয়ে তারা বিকল্প যাত্রার এই সুযোগ পান। অন্যান্য গন্তব্যের যাত্রীরা সেই সুযোগ পাননি। কর্মবিরতির কারণে চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে সারা দেশে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলও বন্ধ রয়েছে। সন্ধ্যায় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পাহাড়তলী শাখার সম্পাদক গোলাম শাহরিয়ার বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকাল থেকে দিনভর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে। আমাদের দাবি নিয়ে এ পর্যন্ত একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। আমরা আর কোনো বৈঠকে বসতে চাই না। দাবি মানা হলেই কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হবে।
সিলেটে রিফান্ড ও বিআরটিসি বাস নিয়ে অভিযোগ : হঠাৎ ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও অফিসগামী যাত্রীরা। তাছাড়া টিকিটের টাকা ফেরত পাওয়া এবং বিআরটিসি বাস নিয়েও যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার সরেজমিন সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা টিকিট হাতে স্টেশনে এসেছেন কিন্তু ট্রেন না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। জরুরি প্রয়োজন থাকায় কেউবা বাধ্য হয়ে বাসে যাচ্ছেন গন্তব্যে। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, রেল কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরতের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে বলছে, কিন্তু ওয়েবসাইট ঠিকভাবে কাজ করছে না। অনেক চেষ্টার পর আবেদন করলে দেখা যাচ্ছে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এদিকে রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেনের বদলে বাসের ব্যবস্থা করলেও তাতে আগ্রহ নেই যাত্রীদের।
ময়মনসিংহ জংশনে যাত্রীবাহী ট্রেন রেখে পালালেন চালক : মোহনগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশনে রেখে পালিয়ে যান চালক। কিছু সময় পর ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে না যাওয়ায় বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা হইচই শুরু করেন। পরে স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট নাজমুল হক খানকে ঘণ্টাখানেক অবরুদ্ধ করে রাখেন যাত্রীরা। এ সময় স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট টিকিটধারী যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরতের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এই স্টেশনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এদিকে ট্রেনটি গন্তব্যে না যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। পরে তারা বাসে ঢাকায় ফেরেন। যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রেনটি ছাড়ল কেন? আমরা বাসে অথবা বিকল্প পথে গন্তব্যে ফিরতাম। তারা ট্রেনটি ছাড়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, স্টেশন মাস্টার ও চালকের শাস্তি দাবি করেন। ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট নাজমুল হক খান বলেন, চালকের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। চালকের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করে ব্যর্থ হই।
কুমিল্লায় বিআরটিসি বাস সেবা : কুমিল্লা স্টেশন ও লাকসাম রেলওয়ে জংশনসহ কুমিল্লার ১৫টি স্টেশনে আটকে পড়া যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া বাতিল হওয়া ট্রেনের টিকিট অনলাইনের মাধ্যমে যাত্রীরা ফেরত নিচ্ছেন।
ঈশ্বরদী (পাবনা) : উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ও বড় রেল স্টেশন ঈশ্বরদীতে এসে আবার ফিরে গেছেন শত শত যাত্রী। ভোর সাড়ে ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এ স্টেশন থেকে তিনটি ট্রেন ছেড়ে যায়। এরপর আর কোনো ট্রেন ছাড়েনি।
বিভিন্ন স্টেশনে দুর্ভোগ : এদিকে সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন স্টেশনে দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়। খুলনা, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ, চাঁদপুর, গাইবান্ধা, আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ দেখা যায়। সব যাত্রীই বলছেন হঠাৎ করে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরটি তারা জানতেন না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশনে একটি যাত্রীবাহী ও একটি ভারতীয় মালবাহী ট্রেন আটকা পড়েছে। পার্বতীপুর স্টেশনে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।
রেল ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জামায়াতের : বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে রেল ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শুক্রবার থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইজতেমায় সারা দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক মুসলমান অংশগ্রহণ করে থাকেন। মঙ্গলবার থেকে রেল কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। আন্দোলনকারী সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমাদের আন্তরিক অনুরোধ-তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার স্বার্থে ধর্মঘট প্রত্যাহার করুন। ন্যায়সংগত দাবিদাওয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান করুন। ধর্মঘট আহ্বানকারী সংশ্লিষ্ট সবাই ধর্মীয় ও মানবিক এ বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন গোলাম পরওয়ার।