খুনি হাসিনার দরবেশ বাবারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে: সারজিস আলম
দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, নিজের স্বার্থে ঢাকা-১ ও ঢাকা-২ আসন ভেঙে একটি আসন বানিয়েছেন সালমান এফ রহমান। খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তার দোসর দরবেশরা এখনো চারদিকে ষড়যন্ত্র করছেন। এছাড়া যারা আমাদের সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই করেছেন, তারাও নতুন কায়দায় ব্যক্তিগত স্বার্থকে সামনে রেখে চলছেন। তবে ছাত্ররা তাদের এ চক্রান্ত ও স্বার্থ হাসিলের পথকে রুদ্ধ করবেই। মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার দোহার উপজেলার জয়পাড়া বড় মাঠে শ্রমিক-জনতার মাঝে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সারজিস আলম বলেন, ‘নতুন বোতলে পুরোনো মদ ঢেলে সেই আগের মতোই সবকিছু দখলের চেষ্টা চলছে। কিছু দল, কিছু গোষ্ঠী এদেশের মানুষের জন্য কোনো চিন্তা করছে না। তারা তাদের আখের গোছানোর চেষ্টা করছে। যে যতই চক্রান্ত করুক। এখন আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ধরনটা হবে ভিন্ন। এদেশের ছাত্র-জনতা ও কৃষক-শ্রমিক সব পারে। তাদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে আমরা মাঠে আছি, থাকব, ইনশাল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘দোহার-নবাবগঞ্জে আগের মতো হাত পেতে পেছন দরজা দিয়ে পকেট ভারীর অভ্যাস এখনো শেষ হয়নি। নতুন করে আবার কেউ সেটা করার চেষ্টা করছে। তাদের এ আশা হাতাশায় পরিণত হবে অচিরেই। ছাত্র-জনতা নব্য কোনো স্বৈরাচারকে নতুন বাংলাদেশের মসনদে বসাবে না। এদেশে চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের হাতবদল হয়েছে। হাটঘাট-বাজার থেকে শুরু করে অফিস-আদালতে তারা থাবা মারার চেষ্টা করছে। আপনারা সতর্ক থাকবেন।’
সারজিস আরও বলেন, ‘যারা ভালো কাজ করবেন। তাদের জনগণ সম্মান জানাবে। সেই রাজনীতির দিকে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রায় ছাত্র-শ্রমিকের বিকল্প নেই। তাদের আত্মাহুতির মাধ্যমেই আজ দেশে হাসিনার একনায়ক শাসনব্যবস্থার বিলোপ হয়েছে। ভবিষ্যতেও কেউ এভাবে করবে না তারও কিন্তু গ্যারান্টি নেই।’
তিনি আগামী দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় দোহারের প্রায় এক হাজার রিকশা শ্রমিকের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। এছাড়া জুলাই বিপ্লবে নিহতদের স্মরণে দোয়া এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করা হয়। এর আগে সারজিস আলম ও নাগরিক কমিটির নেতারা নবাবগঞ্জ শহিদ মিনারেরও পথসভা করেন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. নিজাম উদ্দিন, নারীবিষয়ক সম্পাদক সাদিয়া ফারজানা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম, রাসেল আহমেদ, স্থানীয় নাগরিক কমিটির নেতা সালাহ উদ্দিন, রিফাত হোসেন, ছাত্র আন্দোলনের শাকিল আহমেদ, সুরভী আক্তার, রুমি, মো. মোস্তফা আহমেদ, আরাফ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি, শুধু হাতবদল হয়েছে : কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, উপজেলা পরিষদের শহিদ মিনার চত্বরে এক পথসভায় সারজিস আলম বলেছেন, ‘খুনি হাসিনার সময় কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি ও প্লট নিয়ে বাণিজ্য চলত। দুঃখের বিষয়, এখনো কেরানীগঞ্জে সেই চাঁদাবাজি ও প্লট বাণিজ্য চলছে। চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি, শুধু হাতবদল হয়েছে। আপনারা সবাই একত্রিত হয়ে চাঁদাবাজদের হাতগুলো ভেঙে দিবেন।’
বুড়িগঙ্গার খালগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে আসার পথে দেখলাম খালগুলো ডাস্টবিনের মতো, না হয় নর্দমার মতো পরিণত হয়েছে। খালগুলো যদি সুন্দরভাবে খনন করা যেত, তাহলে হয়তো কেরানীগঞ্জ একটি পর্যটন এলাকা হিসাবে গড়ে উঠতে পারত। খাল খনন ও কেরানীগঞ্জের উন্নয়নে বাজেট এসেছে। কিন্তু ভণ্ড পির ও তার মুরিদরা বাজেটের টাকা দেশের বাইরে পাচার করেছে। এখন সেই ভণ্ড পিরেরা অপকর্মের দায়ে জেলখানায় রয়েছে। সেখান থেকে তারা আবারও সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলছে। এসব ভণ্ড পির, যাদের নিজেদের অস্তিত্ব নেই, তারা নিজেরাও জানে না বাংলার মানুষের কত বড় ঘৃণার জায়গায় তারা রয়েছে।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘বলা হচ্ছে, এখানকার তরুণরা বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত কাজে লিপ্ত হচ্ছেন। কিন্তু এই তরুণরা যে মাঠগুলোয় খেলবেন এবং যে জায়গাগুলোয় সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বিচরণ করবেন, সেই জায়গাগুলো হায়েনারা দখল করে নিয়েছে। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন গড়তে কেরানীগঞ্জে যে উপাদানগুলো প্রয়োজন ছিল, সেগুলো তারা দখল করেছে। আবার তারাই কেরানীগঞ্জে ফিরে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করছে।’
জুলাই অভ্যুত্থানে কেরানীগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ‘আপনারা যারা এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা এই কেরানীগঞ্জের নেতৃত্বের হাল ধরতে প্রস্তুত থাকুন। আপনারা যদি সেই সাহস নিয়ে কেরানীগঞ্জের মাটিতে দাঁড়ান, হয়তো প্রথম দিনে আপনার সঙ্গে ১০০ জন দাঁড়াবে; কিন্তু এ সংখ্যাটা কয়েকদিনের ব্যবধানে কয়েক হাজারে পরিণত হবে। এ সংখ্যাটা কয়েক মাসের ব্যবধানে লাখে পরিণত হবে। আমরা বিশ্বাস করি, ১০০ জন নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে শুরু করলে অচিরেই সেটি লাখে পরিণত হবে। কিছু অর্থের বিনিময়ে আমরা যদি কারও কাছে নিজেদের বিক্রি করে দিই, তাহলে সাময়িক কিছু ক্ষমতার কারণে দাসত্ব বরণ করে নিতে হবে। সেই বেড়াজালে ১৬ বছরের মতো আবারও আমাদের বন্দি হতে হবে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী হাসিবুল ইসলাম, রাসেল আহমেদ, কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি আল-আমিন, মিনহাজ হোসেন, জাবেদ হোসেন ও সায়মন চৌধুরী।