ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
মধ্যরাতে নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকা রণক্ষেত্র
আহত ২০ চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন * পুলিশের টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ
যুগান্তর প্রতিবেদন ও ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে রোববার গভীর রাতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ -যুগান্তর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কয়েক ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় দফায় দফায় পালটাপালটি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে নীলক্ষেত ও নিউ মার্কেট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে চার প্লাটুন বিজিবিও মোতায়েন করা হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের রাজধানীর অন্য হাসপাতাল-ক্লিনিকে নেওয়া হয়েছে। রাত আড়াইটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুপক্ষের মধ্যে পালটাপালটি ধাওয়া চলছিল। এ ঘটনা কেন্দ্র করে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, রাত ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপচার্যের (শিক্ষা) বাসভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়ে সাইন্সল্যাব মোড় থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা কলেজে প্রবেশ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ঘোষণা দেন, এক ঘণ্টার মধ্যে উপ-উপচার্য (শিক্ষা) ক্ষমা না চাইলে তারা ঢাবিতে প্রবেশ করবেন। এদিকে ঢাবি শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই বিভিন্ন হল থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে অবস্থান নেন। পরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওয়ানা শুরু করলে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা কলেজের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরাও। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখ নীলক্ষেতসংলগ্ন মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ গেটের দিকে এলে রাত পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দেন। এতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেতের দিকে চলে যান। পরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পুলিশ মাঝখানে শক্ত অবস্থানে থেকে দুপক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করে।
পরে রাত ১২টা ৪০ মিনিটে উভয়পক্ষের শিক্ষার্থীদের থামাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ঘটনাস্থলে যান। তিনি নীলক্ষেত মোড় থেকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর হাসনাত উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করলে উভয়পক্ষের তোপের মুখে পড়েন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হাসনাতকে উদ্দেশ করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। পরে তিনি ক্যাম্পাসের দিকে চলে যান। অন্যদিকে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা এ সময় কলেজের সামনে এসে অবস্থান নেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
আহদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন-মনিরুল, ইমতিয়াজ, সাগর, শামিম, রিপন, ইসমাইল ও মাহিন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
এর আগে, সন্ধ্যা ৬টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, রোববার বিকালে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে ঢাবি উপ-উপচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এর জেরে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন। ঢাবি প্রো-ভিসি ড. মামুন আহমেদ ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান তারা। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ বলেন, সন্ধ্যায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা রাত পৌনে ১১টায় সায়েন্সল্যাব মোড় ছেড়ে ক্যাম্পাসে উপ-উপাচার্যের বাসার দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এরও আগে সন্ধ্যায় ভর্তি পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় ও মিরপুর সড়কের টেকনিক্যাল মোড় অবরোধ করেন সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। রোববার সন্ধ্যায় একে একে এসব মোড় অবরোধ শুরু হলে আশপাশের সড়কগুলোয় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়, ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ, বিশেষ করে অফিস ফেরত চাকরিজীবীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এসব জায়গায় ছাত্ররা অবরোধ শুরু করেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার রাজীব গাইন বলেন, ঢাকা কলেজের ছাত্ররা সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় আটকে রেখেছে। একই কলেজের আরেকটি অংশ অবস্থান নিয়েছে শাহবাগ মোড়ে। ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সহকারী কমিশনার বিমল চন্দ্র বর্মণ বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা টেকনিক্যাল মোড় অবরোধ করেন। মাঝখানে কিছুক্ষণের জন্য তারা অবরোধ তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু সময় পর আবারও গিয়ে সড়কে বসে পড়েন।