এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম
ছাত্রদল নেতাকে ছিনিয়ে নিতে থানায় হামলা
৫ পুলিশ আহত, হামলাকারীদের ৬ জন গ্রেফতার * সংগঠন থেকে বহিষ্কার ছাত্রদলের দুই কেন্দ্রীয় নেতা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীকে ছাড়িয়ে নিতে রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় হামলা চালিয়েছেন ছাত্র ও যুবদলের কতিপয় ক্যাডার। অর্ধশতাধিক দুর্বৃত্ত নিয়ে হামলাকালে পুলিশের একজন এসিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তবে পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত তারা আসামিকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যর্থ হন। ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার ভোরে। এ ঘটনায় পুলিশ পৃথক মামলা দায়েরসহ জড়িতদের মধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র যুগান্তরকে জানায়, এ ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রদল ও যুবদলের বেশ কয়েকজন জড়িত। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন মিথুন ও সহসাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান রাসেলকে শুক্রবার সংগঠন থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম রাতে গণমাধ্যমকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানান।
১০ জানুয়ারি রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির জ্যেষ্ঠ যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হককে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ‘ইমন গ্রুপ’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে নিউমার্কেট থানায় মামলা করেন সমিতির জ্যেষ্ঠ যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল হাসান।
এদিকে ইমন গ্রুপের অন্যতম সহযোগী হলেন মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে মিথুন (৩৫)। তিনি ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্মসম্পাদক। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের এক নেতা মিথুনের রাজনৈতিক পরিচয় যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, মিথুন ধানমন্ডি এলাকায় থাকেন।
সূত্র জানায়, ইমন গ্রুপের মূল হোতা সানজিদুল হাসান ইমনের হয়ে ধানামন্ডি এলাকায় নানা খাতের চাঁদা তোলার কাজ করেন এই মিথুন। পুলিশ যখন তাকে ভোরে তিনশ ফুট এলাকা থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে, তখন মিথুনের নির্দেশে তার ক্যাডাররা নিউমার্কেট থানায় তাকে ছাড়িয়ে নিতে হামলা চালায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) তারিক লতিফ যুগান্তরকে বলেন, ‘শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে ৩০০ ফিট থেকে গ্রেফতার করা হয় ছাত্রদল নেতা মিথুনকে। ভোর ৫টার দিকে তাকে নিয়ে নিউমার্কেট থানায় পৌঁছলে হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি জানান, ‘রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় অভিযুক্ত সন্ত্রাসী ইমনের ডান হাত মিথুন। তদন্তে তার সম্পৃক্ততা থাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে।’
নিউমার্কেট থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গ্রেফাতার ছাত্রদল নেতা মিথুনকে বহনকারী পুলিশের গাড়ি শুক্রবার ভোরে নিউমার্কেট থানা প্রাঙ্গণে প্রবেশকালে অর্ধশতাধিক দুর্বৃত্ত বাধা দেয়। প্রথমে তারা মিথুনকে গ্রেফতারের কারণ জানতে চান। এসি তারিক লতিফ কারণ স্পষ্ট করলেও তারা রীতিমতো পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। মিথুনকে ছাড়িয়ে নিতে একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল, লাঠিসোঁটা, লোহার রড ও চাপাতি দিয়ে হামলা চালায়। এ সময় ইটের আঘাতে সহকারী কমিশনার (এসি) তারিক লতিফ পায়ে আঘাত পান। একই সঙ্গে আহত হন ধানমন্ডি পূর্ব ফারির এসআই মেজবাহ, নিউমার্কেট থানার এসআই আরব আলী, এসআই সুমিত ও থানার টেলিফোন অপারেটর কনস্টেবল আনোয়ার।
পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওমর ফারুক বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহার নামীয় আসামিরা হলেন মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে মিথুন, মো. বশির ইসলাম, মো. হাসান, মো. ইমন, মো. মাসুম মাহমুদ, মো. আলামিন, মো. আকবর আলী, শরীফ, তরিকুল (কাঁঠালবাগান যুবদল), হীরা, তৈফিক, পারভেজ, দুর্জয় ও চঞ্চল।
এ মামলায় হামলাকারী বশির ইসলাম, মোহাম্মদ হাসান, মোহাম্মদ ইমন, মাসুম মাহমুদ, মোহাম্মদ আলামিন ও আকবর আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের শুক্রবার আদালতে পাঠালে বশির ইসলামকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। অন্যদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসিন উদ্দিন আতিক যুগান্তরকে বলেন, মিথুনকে পুলিশের গাড়ি থেকে ছাড়িয়ে নিতে তার সমর্থকরা চেষ্টা করেছিল, তবে পারেনি।