
প্রিন্ট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪৫ এএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের ভূমিকা জোরদার, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়ানোসহ নানা বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন।
চীন সফররত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বৃহস্পতিবার সকালে সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে (এসআইআইএস) এক সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন এসআইআইএস-এর প্রেসিডেন্ট ড. চেন ডংজিয়াও। ‘আওয়ার শেয়ার্ড ভিশন ফর পিস, স্ট্যাবিলিটি অ্যান্ড প্রসপারিটি’ শীর্ষক সেমিনারে একটি নিরাপদ ও উন্নত বিশ্বের জন্য বাংলাদেশ ও চীনের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়গুলোয় গুরুত্ব দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজন, কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, মিডিয়া প্রতিনিধি, এসআইআইএস-এর সিনিয়র নেতৃত্ব এবং বিশেষজ্ঞ ও সাংহাই পররাষ্ট্রবিষয়ক অফিসের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। ড. চেন ডংজিয়াও বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিক এবং বিকশিত অংশীদারত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে একাডেমিক ও গবেষণা সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোকপাত করেন। বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা এগিয়ে নিতে দুই দেশের ভূমিকার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মো. তৌহিদ হোসেন তার মূল বক্তব্যে টেকসই উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ভিত্তি হিসাবে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বিশ্বশান্তির জন্য দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে চীনের উন্নয়ন সহায়তা এবং বিনিয়োগের ভূমিকার ওপর জোর দেন। তিনি চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির মতো বাংলাদেশের সফল সামাজিক উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন। এ ধরনের উদ্যোগ গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তুলেছে বলেও উল্লেখ করেন।
রোহিঙ্গা সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইন রাজ্যে অনুকূল পরিবেশ তৈরি খুব জরুরি। তিনি উল্লেখ করেন, সংঘাতের সমাধানে বাংলাদেশ ও চীন উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনি চীনের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণ, বিনিয়োগ বাড়ানো, দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিনিময়ের প্রতি গুরুত্ব দেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংহাইয়ের উপকণ্ঠে একটি উচ্চ প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক যানবাহন উৎপাদন কারখানাও পরিদর্শন করেন। কীভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদিত হয়, তা প্রত্যক্ষ করেন। বাংলাদেশে এ ধরনের প্ল্যান্ট স্থাপনের কথা বিবেচনা করার জন্য তিনি চীনা কোম্পানির প্রতি আহ্বান জানান।
সাংহাইয়ের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের সঙ্গেও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাক্ষাৎ করেন। তারা উভয়ে ঢাকা ও সাংহাইয়ের মধ্যে বিজনেস টু বিজনেস (ব্যবসা থেকে ব্যবসা) এবং পিপল টু পিপল (জনগণের সঙ্গে জনগণের) সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এ বছর অনুষ্ঠেয় সাংহাই ট্যুরিজম ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণের জন্য ভারপ্রাপ্ত মেয়র বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানান।
মো. তৌহিদ হোসেন বুধবার সন্ধ্যায় সাংহাই ফেডারেশন অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড কমার্সের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আলোচনায় তারা বাংলাদেশে চীনা উৎপাদনকেন্দ্র স্থানান্তর, বিশেষ করে চট্টগ্রামের চীনা এসইজেড, চট্টগ্রাম ও সাংহাইয়ের মধ্যে বিমান যোগাযোগ স্থাপন এবং দুই চেম্বারের মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতার বিষয়ে আলোকপাত করেন।