দাভোসে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে সহায়তা কামনা
বাসস
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে বিশ্ব নেতাদের সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বুধবার বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে একাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে এই সহযোগিতা চান তিনি। দাভোসে প্রধান উপদেষ্টা বুধবার ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনামলে বাংলাদেশে কীভাবে প্রকাশ্যে ও দিবালোকে ডাকাতি সংঘটিত হয়েছিল তা খতিয়ে দেখার জন্য শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, থিঙ্কট্যাঙ্ক, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে বাংলাদেশে পাঠাতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা জার্মানির ফেডারেল চ্যান্সেলারির প্রধান ও বিশেষ কার্যাদির ফেডারেল মন্ত্রী উলফগ্যাং শ্মিট, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেটংটার্ন সিনাওয়াত্রা, সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পররাষ্ট্র বিভাগের ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই সংস্কৃতি ও শিল্প কর্তৃপক্ষের চেয়ারপারসন শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রাক্তন মার্কিন বিশেষ দূত জন কেরি এবং প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সচিব লামিয়া মোর্শেদ এবং জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক আরিফুল ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
লুৎফে সিদ্দিকী জার্মান মন্ত্রী উলফগ্যাং শ্মিটকে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সরকারের প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, সরকার এই বিষয়ে একটি সম্পদ পুনরুদ্ধার কমিটি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। তিনি বলেন, সরকার প্রাথমিকভাবে শীর্ষ ২০ জন অর্থ পাচারকারীকে তাদের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে চিহ্নিত করেছে। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা জার্মান মন্ত্রীকে বলেন, আমরা যখন নতুন বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলি, তখন আমরা পরিষ্কার বাংলাদেশের কথাও বলি। প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়ে জার্মান সমর্থন চেয়েছেন এবং জার্মান মন্ত্রীর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো নিয়েও আলোচনা করেছেন।
জার্মান মন্ত্রী বলেন, এপ্রিল মাসে একটি নতুন জার্মান ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ নেপালের জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা অন্বেষণের জন্য ভারত, নেপাল এবং ভুটানকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি অর্থনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চায়। প্রধান উপদেষ্টা সুইজারল্যান্ডকে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে কার্বন রোধ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি সুইজারল্যান্ডকে বাংলাদেশের যুবসমাজের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক হলো ২৭ বছরের কম বয়সি তরুণ। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা এবং পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশ্ব নেতাদের অবহিত করেন।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কাজ করবে ইউএনএইচসিআর : রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এ আশ্বাস দেন। এদিকে বুধবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে সম্মেলনের ফাঁকে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে ড. ইউনূস সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকে তারা পারস্পরিক শুভেচ্ছা ও কুশলাদি বিনিময় করেছেন। মঙ্গলবার দাভোসে ড. ইউনূসের সঙ্গে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি সাক্ষাৎ করেন। রোহিঙ্গা সংকটের ওপর সারা বিশ্বের মনোযোগ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, অতিরিক্ত প্রায় ১ লাখ শরণার্থীর আগমন বাংলাদেশের ওপর আরও বোঝা হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। আরও রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা আমন্ত্রিত : ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফ হিউসজেন সাক্ষাৎ করেছেন। ফেব্রুয়ারিতে জার্মানির মিউনিখ শহরে অনুষ্ঠেয় বার্ষিক নিরাপত্তা সম্মেলনে ড. ইউনূসকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান রাষ্ট্রদূত হিউসজেন।
দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে যোগদানের আমন্ত্রণ : সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট ২০২৫-এ যোগদানের আমন্ত্রণ পেয়েছেন ড. ইউনূস। দুবাই কালচার অ্যান্ড আর্টস অথরিটির চেয়ারপারসন শেখ লতিফা বিনতে মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম বুধবার এ আমন্ত্রণ জানান। ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট অনুষ্ঠিত হবে।