Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ট্রাম্পের আদেশের বিরুদ্ধে মামলা ২৪ অঙ্গরাজ্যে

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ট্রাম্পের আদেশের বিরুদ্ধে মামলা ২৪ অঙ্গরাজ্যে

ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী বা ক্ষণস্থায়ী ভিসায় থাকা ব্যক্তির সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার নীতি বাতিলে নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দিন পেরোতেই এ আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত ২২টি অঙ্গরাজ্য ও দুটি শহর। আদালতে ঠুকে দিয়েছে মামলা। পাশাপাশি এ আইনি লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ও কয়েকটি অভিবাসী সংগঠন এবং অন্তঃসত্ত্বা এক নারীও। এতে আইনি চ্যালেঞ্জে পড়ল ট্রাম্পের ওই উদ্যোগ। আইনজ্ঞরা বলছেন, ওই আদেশ বাস্তবায়ন সহজ হবে না। আদালতের চৌকাঠ পেরোনোর পাশাপাশি সংবিধান সংশোধনেরও উদ্যোগ নিতে হবে তাকে। এক্ষেত্রে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চকক্ষ সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন পেতে হবে। দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি ও রয়টার্স।

ট্রাম্প সোমবার দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন। অভিষেক ভাষণেই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন। অবৈধ অভিবাসীদের ‘অপরাধী’ উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, এমন লাখো অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান প্রসব করলেই সেই শিশু মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। পরে তিনি এ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন।

ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার বোস্টনের ফেডারেল আদালতে জোটবদ্ধভাবে মামলা করে ২২টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া ও সানফ্রান্সিসকো শহর কর্তৃপক্ষ। এজাহারে যুক্তি দেওয়া হয়, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার প্রেসিডেন্টের এ চেষ্টা মার্কিন সংবিধানের চরম লঙ্ঘন। প্রেসিডেন্টের অভিবাসন আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আছে। তা সত্ত্বেও নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়ার নির্দেশ আইনি এখতিয়ারবহির্ভূত।

নিউ জার্সির অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাথিউ প্ল্যাটকিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা আমাদের অধিবাসী ও তাদের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকারের পক্ষে দাঁড়াব। এদিকে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ওই আদেশ শুধু অসাংবিধানিক নয়, একই সঙ্গে তা মার্কিন মূল্যবোধের বেপরোয়া ও নির্মম প্রত্যাখ্যান।’ জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করা সংক্রান্ত মামলাগুলোর সব ম্যাসাচুসেটসের বোস্টন বা নিউ হ্যাম্পশায়ারের কনকর্ডে করা হয়েছে। এসব আদালতের বিচারকরা আদেশ দিলে তা বোস্টনভিত্তিক ফার্স্ট ইউএস সার্কিট কোট অব আপিল পর্যালোচনা করে দেখবেন। জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব সুবিধা নিয়ে নতুন নিয়ম ট্রাম্প কীভাবে কার্যকর করতে চান, সেটি অবশ্য স্পষ্ট করেননি।

হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর প্রথম বাক্যে ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার’ নীতিটি বলবৎ হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং এর আওতাধীন এলাকায় জন্ম নেওয়া বা আত্তীকৃত সব মানুষ যুক্তরাষ্ট্র এবং তারা যেই রাজ্যে বাস করে সেখানকার নাগরিক।’ যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ শেষে ১৮৬৮ সালে সংবিধানে এই চতুর্দশ সংশোধনীটি গৃহীত হয়। এর আগে ১৮৬৫ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীতে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়; এরপর এই মুক্ত যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া প্রাক্তন দাসদের নাগরিকত্বের ফয়সালা করতে দিয়ে আসে চতুর্দশ সংশোধনী।

এর আগের কিছু মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্ত ছিল আফ্রিকান-আমেরিকানরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারবে না। চতুর্দশ সংশোধনী সেসব রায় রহিত করে। পরে ওং কিম আর্ক নামে চীনা বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া এক তরুণের মামলায় ১৮৯৮ সালে মার্কিন সুপ্রিমকোর্ট অভিবাসীদের সন্তানরাও যে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাবে তা নিশ্চিত করে।

ট্রাম্প এই নীতি রদ করতে পারবেন না বলেই মত দিয়েছেন বেশির ভাগ আইন বিশেষজ্ঞ। মার্কিন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির ল’ স্কুলের অধ্যাপক সাইকৃষ্ণ প্রকাশ বলেন, ‘তিনি এমন কিছু করতে যাচ্ছেন, যা অসংখ্য মানুষের মন ভেঙে দেবে। যদিও শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। তিনি নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে করে ফেলতে পারবেন না, এটা এমন একটা বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের মতো সংস্থার কর্মকর্তাদের নাগরিকত্বকে আরও সংকীর্ণভাবে দেখার কথা বলতে পারেন, কিন্তু কারও নাগরিকত্ব বাতিল হলে তিনি তো সঙ্গে সঙ্গেই আদালতের দ্বারস্থ হবেন। আর এ লড়াই এত লম্বা হবে যে, শেষ পর্যন্ত তা মার্কিন সুপ্রিমকোর্টেই যাবে।

কতজনের ওপর প্রভাব পড়বে : ওয়াশিংটনভিত্তিক পিউ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে থাকার অনুমোদন নেই এমন অভিবাসীদের প্রায় আড়াই লাখ সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিয়েছে। ২০২২ সালে জন্ম নিয়েছে ১২ লাখ। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট বলছে, এই শিশুদেরও সন্তান হবে, সেক্ষেত্রে জন্মসূত্রের নাগরিকত্বের বিধান বাতিল হলে ২০৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অননুমোদিত অভিবাসীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৭ লাখ।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্সাস ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে এখন অন্তত ৫০ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছেন। অন্যরা অভিবাসী। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ৩৪ শতাংশকে অবৈধ ঘোষণা করে ফেরত পাঠাতে পারে। এদিকে ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী প্রায় ১৮ হাজার অভিবাসীকে ফেরত নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট গত নভেম্বরে জানিয়েছিল, ১৭ হাজার ৯৪০ জন ভারতীয়কে প্রত্যর্পণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।

আতঙ্কে নথিপত্রহীন বাংলাদেশিরা, গ্রেফতার ৪ : আতঙ্কে আছেন নথিপত্রহীন অবৈধ অভিবাসীরা। নথিপত্রহীন বাংলাদেশিরাও একইভাবে দুশ্চিন্তায়। এর মধ্যে ট্রাম্প শপথগ্রহণের পর থেকে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ধারপাকড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। নিউইয়র্কের ব্রুকলিন বরোর ফুলটন এলাকা থেকে মঙ্গলবার চার বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্ট। এর পর থেকে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার সড়ক ও রেস্তোরাঁয় যেখানে অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখা যেত, এখন সেখানে লোকজনের ভিড় নেই বললেই চলে।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সুবিধা আর কাদের আছে : কানাডা, মেক্সিকোসহ ৩০টিরও বেশি দেশে কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই তাদের ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়াদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ার মতো কিছু দেশে খানিকটা পরিবর্তিত সংস্করণের চর্চা হয়। এসব দেশে বাবা-মার একজনও যদি নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হয়, তাহলে সন্তানও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পেয়ে যায়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম