এখনই নয়, ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচন চেয়েছি: মির্জা ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এখনই নির্বাচন নয়, ন্যূনতম সংস্কার করেই নির্বাচন চান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমাকে অনেকে ভুল বোঝে বলে থাকেন, আপনি এত নির্বাচন নির্বাচন করেন কেন? হ্যাঁ, আমাকে, বিশেষ করে ছাত্ররা তো বলেই। নির্বাচনের কথা বলার কারণ হচ্ছে একটাই-আমরা বিশ্বাস করি, যে কোনো নির্বাচিত সরকার কিন্তু অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো। এখনই নির্বাচন করে ফেলতে হবে, আমরা তা তো বলছি না। ন্যূনতম যে সংস্কারটা, সেটা করে নির্বাচন করলে সমস্যাগুলো অনেকটা সমাধান হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে ‘গ্রন্থ আড্ডা’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সভায় মির্জা ফখরুল প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কারের প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে। আমার বিশ্বাস, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা খুব শিগ্গির এসব বিষয় নিয়ে আমাদের ডাকবেন, একটা সমাধানের দিকে আসবেন, আলোচনা হবে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছাব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাড়াতাড়ি নির্বাচনের কথা বলি এ জন্য যে, নির্বাচন হলে দেশের সমস্যাগুলো চলে যাবে। এখানে একটা নির্বাচিত সরকার, তারা একটা পিপলস ম্যান্ডেট নিয়ে বসবে। এরা (অন্তর্বর্তী সরকার) তো সেই ম্যান্ডেট নিয়ে বসেনি। ওদের মধ্যে (নির্বাচিত সরকার) যে কনফিডেন্স, সেই কনফিডেন্স তো এই সরকারের নেই। জনগণের ভাষাটা তো বুঝতে হবে। সেটা একটা নির্বাচিত সরকার সবচেয়ে ভালো বোঝে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ধৈর্য ধরে যাই, সামনের দিকে যাই। অনেক ত্রুটি আছে, আমি বিশ্বাস করি অনেক ত্রুটিকে তারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) তুলে নিয়ে এসেছেন। তারা একটা জঞ্জালের মধ্যে এসেছে, ধ্বংসপ্রাপ্ত জঞ্জাল। আমার ধারণা ছিল না, এত খারাপ হয়ে গেছে। এই পরিবর্তনের পর আমরা যখন দু-একটা জায়গায় খোঁজখবর নিই, অফিস-আদালতে খোঁজ-খবর নিই, একটা ভয়াবহ কাণ্ড। দুর্নীতি-চুরি ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া আর কোনো চিন্তা নেই। বলতে আমি বাধ্য হলাম দুঃখিত।
তিনি বলেন, এ অবস্থার পরিবর্তন তো একদিনে হবে না, দ্রুত হবে না। ধৈর্য ধরুন, গণতান্ত্রিক একটা স্ট্রাকচার (কাঠামো) খাড়া হোক। সেই স্ট্রাকচার খাড়া হলেই নিশ্চয়ই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব। কখনো ধৈর্য হারাবেন না, কখনো আশা হারাবেন না। কেন যেন জানি না, আমাদের প্রত্যাশা অনেক; কিন্তু ধৈর্য একেবারেই কম।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই তো কয়েক মাস হয়েছে। এর মধ্যে সব পাগল হয়ে গেছে। দেখেন, আমাদের এ সরকার অনেক ভুলত্রুটি করছে, ভুল তো করবেই। কারণ, তারা তো রাজনীতি জানে না, বোঝে না। তাই তাদের তো সেই সময় দিতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, অতিবিপ্লবী হয়ে সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যাবে না। এ মুহূর্তে সব বদলে দেব বা এটা করে ফেলব, তা হয় না। ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হয়। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন দাবিদাওয়া নিয়ে মিছিল বের হচ্ছে, এতদিন কোথায় ছিলে বাবা? তখন তো একটা কথা বলার কেউ সাহস, সুযোগও পাওনি। আর এখন যেহেতু একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে, সবাই নেমে গেছ।
দেশের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার ‘কার্যকারিতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজগুলোয় ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে। এত ছেলে-মেয়ে পরীক্ষা দিয়েছে, এর মধ্যে মনে হয় সাড়ে পাঁচ হাজার ভর্তির সুযোগ পেয়েছে মেডিকেল কলেজগুলোয়। বাকিরা কী করবে? শিক্ষাক্ষেত্রে হযবরল অবস্থা বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার হওয়া দরকার। অনেক সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন; কিন্তু শিক্ষাবিষয়ক কোনো সংস্কার কমিশন হয়নি। যেটা আগে প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি। গোটা সমস্যার মূলে ওই জায়গাটা।
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্রনেতা আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, শিক্ষানুরাগী আফরোজা খানম, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, শিক্ষকনেতা জাকির হোসেন, সমাজকর্মী সাইয়িদ আবদুল্লাহ, জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের জহির দিপ্তী, মঞ্জুর এলাহী, কাজী জহিরুল ইসলাম, হাসান আল আরিফ প্রমুখ।