Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বাংলাদেশ ব্যাংকে সম্পদের খোঁজে দুদক

অভিযানের আগে এসকে সুরের ভল্ট খোলা যাবে না

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অভিযানের আগে এসকে সুরের ভল্ট খোলা যাবে না

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এসকে) সুর চৌধুরীর ব্যক্তিগত গোপন ভল্ট অবরুদ্ধ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে (দুদক)। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সেই ভল্টে অভিযান চালানো হবে বলে জানা গেছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এই অভিযান পরিচালিত হতে পারে। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সবার জন্য প্রধান কার্যালয়ে লকার সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। চাইলে যে কোনো কর্মকর্তা লকার ভাড়া নিতে পারেন। সেই লকারে দামি সম্পদগুলো সংরক্ষণ করেন কর্মকর্তারা। তবে বেশিরভাগ কর্মকর্তাই এই লকার ব্যবহার করেন না। এখানে রেজিস্টার ফলো করা হয়। রেজিস্টারে নাম এবং পরিমাণ লিখে সম্পদ সংরক্ষণ এবং উত্তোলন করা যায়।

ইতোমধ্যে দুদক বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে। সেখানে তারা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এসকে সুরের নিজস্ব ভল্টে দামি অলংকার থাকতে পারে। তাই তার লকার অবরুদ্ধ থাকবে। খুব শিগগিরই দুদক আদালতের অনুমতি নিয়েই সশরীরে এই ভল্ট পরিদর্শন করবে। এদিকে ১৯ জানুয়ারি দুদক অভিযান চালিয়ে এসকে সুরের ধানমন্ডির বাসা থেকে ১৬ লাখ ২৫ হাজার নগদ টাকা উদ্ধার করেছে। বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে পাওয়া গেছে নানা মূল্যবান সম্পদ। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ওই টাকা গণনা করা হয়। বাসার মূল্যবান ৩৬টি সম্পদের তালিকা করা হয়।

দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ অনুসন্ধান টিম রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় এসকে সুরের বাসায় অভিযান শুরু করে ও তা শেষ হয় বিকাল ৪টায়। তল্লাশির সময় একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারের সন্ধান পাওয়া যায়। লকারটি কোনোভাবে যাতে খোলা বা স্থানান্তর না হয়-এমন নির্দেশনা দিয়েই রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লকারের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালক আমজাদ হোসেনের কাছে আবেদন পাঠিয়েছে দুদক। দুদক এই কর্মকর্তাকে বলেছে, আদালতের অনুমতি নিয়েই কমিশন লকারটি খুলতে চায়।

দুর্নীতি মামলার কোনো আসামির অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ করা খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার ব্যক্তিগত লকার এই প্রথম খুলতে যাচ্ছে দুদক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানেই অপরাধলব্ধ অর্থ সংরক্ষণ করেছেন এসকে সুর। একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাটকারী পিকে হালদারের দুর্নীতির সহযোগী ছিলেন তিনি। হালদারকে অবাধে দুর্নীতি করার সুয়োগ করে দিয়েছিলেন। বিনিময়ে এসকে সুর মোটা অঙ্কের মাসোহারা পেতেন। উপঢৌকন হিসাবে পেতেন নানা মূল্যবান সম্পদ। দুদকের মামলায় গ্রেফতার হয়ে সুর বর্তমানে জেলে আছেন। আর পিকে হালদার বর্তমানে ভারতে জেলে আছেন।

নির্ধারিত সময়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর এসকে সুর, তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও মেয়ে নন্দিতা সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে নন-সাবমিশন মামলা করে দুদক। এই মামলার তদন্ত চলছে। আদালতে মামলার যে চার্জশিট দেওয়া হবে তাতে বাসা থেকে পাওয়া নগদ টাকা, সম্পদ, লকারের অর্থ-সম্পদ উল্লেখ করা হবে। এসব অর্থ-সম্পদ তার বৈধ আয়ের সঙ্গে কতটুকু অসংগতিপূর্ণ তা তুলে ধরা হবে চার্জশিটে।

১৯ ডিসেম্বরের অভিযানে এসকে সুরের বাসায় যেসব সম্পদ পাওয়া গেছে সেগুলো হলো-৪০টি ব্যাংক হিসাবের নথি, ৫০ লাখ টাকার পেনশন সঞ্চয়পত্রের নথি, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মচারী সমবায় ঋণদান সমিতিতে বিশেষ মেয়াদি ৭৫ লাখ টাকার আমানত, প্রাইম ব্যাংকে জমা ১০ লাখ টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট ১০ লাখ টাকা, ১৩ হাজার ৪০০ টাকার ১৩৪টি প্রাইজবন্ড, ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, একাধিক পাসপোর্ট, সনি টিভি, সনি স্পিকার, ঝাড়বাতি, জেনারেল দুই টনের এসি দুটি, দামি রেফ্রিজারেটর, খাটসহ নানা মূল্যবান সম্পদ।

অভিযান চলাকালে দুদক টিমের সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও ধানমন্ডি থানার পুলিশ সদস্য ও দুদকের সশস্ত্র পুলিশ ইউনিটের সদস্যরা ছিলেন।

১৪ জানুয়ারি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সহায়তায় দুদক উপ-পরিচালক নাজমুল হোসাইনের নেতৃত্বে একটি টিম এসকে সুরকে গ্রেফতার করে। সম্পদের বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগে ২৩ ডিসেম্বর করা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর পর তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। ফিলিপাইনের একটি পত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। সে সময়ে তৎকালীন গভর্নর পদত্যাগ করেন ও দুই ডেপুটি গভর্নরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তখন আরও দুজন ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। তারা হলেন আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান ও এসকে সুর চৌধুরী। রিজার্ভ কেলেঙ্কারি চাপা দিতে সুরের বড় ভূমিকা ছিল। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে দুদক। ২৩ ডিসেম্বর সুর ছাড়াও তার স্ত্রী ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম