হাজারীবাগে আগুনে ১০ কারখানা গুদাম পুড়ে ছাই

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত।
রাজধানীর হাজারীবাগে ফিনিক্স লেদার কমপ্লেক্স ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সাত তলা ভবনটির ৫, ৬ ও ৭ম তলার দক্ষিণ পাশের অন্তত দশটি কারখানা, গুদাম, খাবারের প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে হাজারীবাগ কাঁচাবাজারসংলগ্ন ফিনিক্স ট্যানারি লিমিটেড ভবনে এই আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় প্রায় ৫ ঘণ্টা পর আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভবনটিতে বেশিরভাগই দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি আগুন নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ভবনটি অনেক পুরোনো ও অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের সহযোগিতা করেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও স্কাউট সদস্যরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, আগুন লাগা ভবনের অবস্থান হাজারীবাগ কাঁচাবাজারসংলগ্ন শেরেবাংলা রোডে। এটি এক সময় ফিনিক্স লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ট্যানারি ছিল। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি কারখানা সরিয়ে নেওয়া হলে ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। পরে জুতা, পোশাকসহ বিভিন্ন কারখানা ও গুদামের পাশাপাশি খাবারসহ প্রায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়। ৩০০-এর মতো শ্রমিক এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, প্রথমে ভবনটির পাঁচতলায় আগুন লাগে। পরে আগুন ছয় ও সাত তলায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির ভেতরে ছোট ছোট ট্যানারি কারখানা রয়েছে প্রায় ৫০-৬০টি। এছাড়াও বিভিন্ন ফ্লোরে পোশাক কারখানা, প্লাস্টিক কারখানা ও ফার্নিচার কারখানা রয়েছে।
জুতার কারখানার কর্মী আলিমুদ্দিন জানান, দুপুর পৌনে ২টার দিকে পাঁচতলা থেকে আগুনের ধোঁয়া দেখা যায়। তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হলে তারা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভাতে শুরু করেন। ওই সময় অনেকে জুমার নামাজ পড়তে যান আবার কেউ কেউ ভবনটির ভেতরে ছিলেন। আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়লে তারা দ্রুত বাইরে বেরিয়ে আসেন। আগুনের খবরে আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিকালে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ভবনটিতে বেশিরভাগই দাহ্য পদার্থ ছিল। যার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে এতে নিহত এবং আহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভবনটি পুরাতন বিল্ডিং হওয়ায় অনেকটা বেগ পেতে হয়েছে। এখানে আগুন নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বাড়াতে একাধিকবার এ ভবনটিকে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ভবনটি খুবই পুরাতন, যার ফলে এখানে কোনো ধরনের কাজ করা যাবে কিনা, তা তদন্ত করে দেখতে হবে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে এত সময় লাগল কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ভবনটি অনেক পুরাতন ও জরাজীর্ণ। তাই খুব সাবধানে আমাদের কাজ করতে হয়েছে। আমাদের সক্ষমতার পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। কারণ পানি সংকট, ভেতরের দাহ্য বস্তু, উৎসুক জনতার ভিড়, চাপা রাস্তা, সব মিলে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে।
এই ভবনে এর আগে দুবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এমন অবস্থায় ফায়ার সার্ভিসের কোনো গাফিলতি আছে কিনা? এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বাড়াতে একাধিকবার এ ভবনটিকে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এতে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা একাধিকবার চেষ্টা করেছি। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরেও চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পুরোপুরি নির্বাপণ করার পর তদন্ত করে বোঝা যাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতটুকু। তবে, প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার সূত্রপাত জানা যায়নি। এটি বৈদ্যুতিক গোলযোগ, সিগারেটের আগুন বা অন্য কোনো কারণে হতে পারে। সেটি তদন্তের পর জানা যাবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া বলেন, এই ভবনে ৫০-৬০টি ছোট ছোট কারখানা আছে। এসব কারখানায় চামড়ার জুতা, ব্যাগ, বেল্ট তৈরি করা হয়। শুক্রবার হওয়ায় সব কারখানা বন্ধ ছিল। দুপুরে জুমার নামাজের পর হঠাৎ আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। প্রথমে ভবনটির পাঁচতলায় আগুন লাগে। পরে চারতলা ও ছয়তলাতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে ভবনটিতে থাকা প্রায় ১০-১৫টির মতো কারখানা পুড়ে গেছে।
ভবনের ছয়তলায় থাকা জাহাঙ্গীর ফ্রেম ঘরের মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার গোডাউনে প্রায় দেড় কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ ছিল। ২৩ বছরের প্রতিষ্ঠানের সব অর্জন ধ্বংস হয়ে গেছে। এর আগে করোনার পর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। আর এখন প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকার ঋণের বোঝা রয়েছে।
আগুন নেভানোর পর সরেজমিন দেখা যায়, ঘটনাস্থলে শত শত উৎসুক জনতার ভিড়। ভবনটির সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোতে পাহারা বসিয়েছেন মালিকরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুধু এই ভবনটি নয় আশপাশের বহু ভবন জুতার কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানা ও কেমিক্যাল গোডাউন দিয়ে ঠাসা। আগে বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হলেও টাকা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করা হতো।