পূর্বাচলে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ
শেখ হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে মামলা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-6786cf03a6767.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে নিজ ও ছেলের নামে ২০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে আলাদা দুটি মামলা হয়েছে। এতে জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তাসহ ২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলা দুটি দায়ের করা হয়। সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
এর আগে রবি ও সোমবার দুদিনে একই অভিযোগে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ও টিউলিপ সিদ্দিককে আসামি করে চারটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। জানা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে শেখ হাসিনা নিজ নামে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নেন। এই অভিযোগে তাকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দের অভিযোগে জয়কে প্রধান আসামি ও শেখ হাসিনাকে সহযোগী আসামি করে অপর মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত অভিযোগে ছয় মামলার শেখ হাসিনাকে আসামি করা হলো। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পূর্বাচল নতুন শহরে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের স্বাক্ষরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিব বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার ছেলের অনুকূলে সরকারের সংরক্ষিত কোটায় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় ২০ কাঠা আয়তনের দুটি প্লট বরাদ্দের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করেন বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের অনুকূলে রাজউক আইনের ১৯৬৯ এর ১৩/অ(১) (প) বিধি মোতাবেক ১০ (দশ) কাঠা আয়তনের ছয়টি প্লট বরাদ্দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। এক্ষেত্রে উল্লিখিত বিধিমালার বিধি-৪ ও বিধি-৫ এর বিধান স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়া গেছে। গত রোববার প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে মামলা করা হয়। ওই মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। সোমবার দায়ের করা হয় আরও তিনটি মামলা। ছয়টি মামলাতেই শেখ হাসিনা পরিবারের ছয় সদস্য ছাড়াও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের একই কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।
দুদক বলছে, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ও তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে বাড়ি, ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ আইন, বিধি ও নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭নং সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ২০ কাঠার দুটি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। জানা গেছে, এই প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে যুগান্তরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। এরপর গত ২৬ ডিসেম্বর এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। সেসময় দুদক শেখ পরিবারের ছয়জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের কথা জানায়। অনুসন্ধানে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ পাওয়ায় পরিবারের সবার বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলা করে দুদক।
প্রসঙ্গত, টানা দেড় দশক দেশ শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তিনি এখনো সেখানেই আছেন। প্লট কেলেঙ্কারি ছাড়াও শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান দুদকে চলমান। এছাড়া শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে পাঁচ সদস্যের একটি টিম।