Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই

ভ্যাট ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ আত্মঘাতী

সরকারি ব্যয় ২০ শতাংশ কমানো গেলে এক বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো সাশ্রয় করা সম্ভব। তাই সরকারি ব্যয় কমানোর দিকে নজর দেওয়া উচিত

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভ্যাট ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ আত্মঘাতী

বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকটময় পরিস্থিতি অতিক্রম করছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চাপে ভ্যাট হার বৃদ্ধি এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগ অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআিই)।

শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে দেশের অর্থনীতির সমসাময়িক বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিসিসিআই। সেখানে এসব কথা বলেন সংগঠনের সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বালানি ব্যয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতাসহ উচ্চ সুদহার বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে সংকটময় মুহূর্ত পার করছে। ভূরাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অস্থিরতা তো আছেই। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধিসহ শিল্পে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর উদ্যোগ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

মানুষকে কষ্ট দিয়ে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত না নিয়ে সরকারকে অন্য উপায় খোঁজার পরামর্শ দিয়ে তাসকীন আহমেদ বলেন, সরকারি ব্যয় ২০ শতাংশ কমানো গেলে এক বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো সাশ্রয় করা সম্ভব। তাই সরকারি ব্যয় কমানোর দিকে নজর দেওয়া উচিত। সরকারের এমন পদক্ষেপের সঙ্গে আমরা একমত নই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গৃহীত সংস্কারের উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার দ্রুত এ সংস্কার কার্যক্রম লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সম্পন্ন করবে, বেসরকারি খাতের পক্ষ থেকে এটি আমরা প্রত্যাশা করছি। পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে যদি সরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়, তাহলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আরও আশাবাদী হবেন এবং বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। তিনি আরও বলেন, রাজনীতি ও অর্থনীতির গতিপথ আলাদা থাকা প্রয়োজন। রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসায়ের পরিস্থিতি খারাপ করেছে। তাই রাজনীতি রাজনীতির মতো করে চলুক; সেটি যেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত না করে।

নীতির ধারাবাহিকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সহায়ক কর কাঠামো প্রাপ্তি সাপেক্ষে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হন, সেক্ষেত্রে হঠাৎ মাঝপথে কর কিংবা শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা মোটেই কাম্য নয়। ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিকস খাতের কিছু পণ্যে আয়কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এটি ব্যবসায়ীদের শুধু বিপদে ফেলবে না, একই সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিকেও খারাপ করছে। আয়কর বাড়ানোয় আগামী তিন মাসের মধ্যে মোটরসাইকেলের দাম ১০-১৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

এলডিসি উত্তরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে মোটামুটি সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছিলাম। তবে কোডিভ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা, স্থানীয় রাজনৈতিক অস্থিরতা-পরবর্তী পটপরিবর্তনসহ আর্থিক খাতে তারল্য সংকটের ফলে এলডিসি উত্তরণ মোকাবিলার প্রস্তুতি বেশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এলডিসি উত্তরণে আমরা কতটা প্রস্তুত তা নির্ধারণে সরকারি-বেসরকারি ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। বিষয়টি যদি পেছানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়, তবে দেশের সার্বিক অর্থনীতির কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার এলডিসি উত্তরণে আরও কিছুটা সময় নিতে পারে এবং এ লক্ষ্যে সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প নেই। তবে মনে রাখতে হবে ২০২৬ সালে আমাদের এলডিসি উত্তরণ হলে এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি খাতকে সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তাসকীন আহমেদ বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে অস্থিরতা চলছে, সেটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয়। এ কারণে দুই দেশের ব্যবসায় কিছু প্রভাব পড়েছে। ফলে ভিসা জটিলতাসহ ব্যবসায়িক অন্য সমস্যাগুলো যত দ্রুত সমাধান হবে, তত দ্রুত দুই দেশের ভালো হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিএসএমই খাতে ঋণ প্রাপ্তি হলেও তা কাক্সিক্ষত মাত্রায় নয়, এটি বাড়াতে হবে এবং এ খাতের উদ্যোক্তারা যেন সহজ শর্তে ও স্বল্পসুদে ঋণ পায় তা নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই, কারণ আমাদের এসএমই খাত সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী এবং সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম