থানা থেকে পলায়ন
সাবেক ওসিকে ধরতে রেড অ্যালার্ট জারি
গ্রেফতারে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের অভিযান * সাময়িক বরখাস্ত ওসি মহিবুল্লাহ ও এএসআই সাজ্জাদ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলার আসামি ছিলেন উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম। বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া থেকে সাবেক ওই ওসিকে গ্রেফতার করে উত্তরা পূর্ব থানায় আনা হয়। কিন্তু থানার ওসি তাকে হাজতে না পাঠিয়ে তার কক্ষের চেয়ারে বসতে দেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে সিদ্ধান্ত হয় সাবেক ওসিকে আদালতে তুলে রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়টি। তখন সব কথা শুনে ওসি মহিবুল্লাহ বলেন, ‘স্যারদের নির্দেশ আপনাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
একথা শুনেই সাবেক ওসি শাহ আলম অসুস্থতার ভান করেন। তিনি টয়লেটে যাবেন একথা বলে এএসআই মো. সাজ্জাদ হোসেন তাকে টয়লেটে নিয়ে যান। টয়লেট শেষে ডিউটি অফিসারের রুমের পাশে একটি চেয়ারে বসতে দেন। তখন এএসআই সাজ্জাদ গ্রেফতার সাবেক ওসিকে রেখে আরেকজনের সঙ্গে কথা বলার সময় দৌড়ে পালিয়ে যান ওই সাবেক ওসি। মাত্র ৩ সেকেন্ডের ব্যবধানে সাবেক ওসি শাহ আলম পালিয়ে গেলেও তাকে আর পাওয়া যায়নি। এরপর থেকেই তিনি পলাতক।
শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি বলে জানান বর্তমান ওই থানার ওসি মহিবুল্লাহ। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ওসি মহিবুল্লাহ ও এএসআই সাজ্জাদ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে ওসি শাহ আলমকে গ্রেফতারের জন্য ইতোমধ্যে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের একাধিক টিম তাকে ধরতে অভিযানে নেমেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান বলেন, ওসি শাহ আলম ছাত্র-জনতার ওপর সরাসরি গুলি করেছেন। সেই অপরাধে তাকে ধরা হয়। তাকে ধরতে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে ও রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাকে গ্রেফতারে জন্য সারা দেশে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ যৌথ অভিযানে নেমেছে।
উত্তরা পূর্ব থানার ওসি (সাময়িক বরখাস্ত) মো. মহিবুল্লাহ শুক্রবার দুপুরে বলেন, পলাতক সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের সবকটি ইউনিট কাজ করছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তাও নেওয়া হচ্ছে। আশা করি, খুব দ্রুত তাকে আইনের মুখোমুখি করা হবে।
সংশ্লিষ্ট থানা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় একটি হত্যা মামলায় উত্তরা পূর্ব থানার ওসি শাহ আলমকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি ছিলেন শাহ আলম। ১ আগস্ট উত্তরা পূর্ব থানায় যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে পরিদর্শক পদে কুষ্টিয়ায় কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া একাধিক হত্যা মামলায় আসামি ছিলেন তিনি। পরে মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আদালতে সোপর্দের প্রক্রিয়া চলাকালীন তিনি কৌশলে পালিয়ে যান। তবে এর সঙ্গে থানা পুলিশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরির্দক (এআইজি-মিডিয়া) এনামুল হক সাগর বলেন, রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা থেকে পালানো সাবেক ওসি শাহ আলমকে গ্রেফতারের জন্য সারা দেশে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয় তাকে ধরার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। তাছাড়া এই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে উত্তরা পূর্ব থানার ওসি ও এএসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।