Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বেনজীরের স্ত্রী-কন্যা ও হারুনের আয়কর নথি জব্দের আদেশ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বেনজীরের স্ত্রী-কন্যা ও হারুনের আয়কর নথি জব্দের আদেশ

ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জিসান মির্জা ও মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই দিন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ও তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব বুধবার এ আদেশগুলো দেন।

দুদকের কোর্ট পরিদর্শক আমির হোসেন জানান, কমিশনের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদিন আবেদন দুটি করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানি করেন। পরে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।

জিসান মির্জার বিষয়ে আবেদনে বলা হয়, তিনি ১৬ কোটি ১ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৬ টাকার সম্পদের ‘তথ্য গোপন করে’ এবং ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৯ টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ’ ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের’ মাধ্যমে জিসান মির্জার অপরাধে ‘প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা’ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলা করা হয়েছে।

তাহসিন রাইসার বিষয়ে আবেদনে বলা হয়, তিনি ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫ টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদ ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে অপরাধ করেছেন এবং তার বাবা বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশ ও র‌্যাবের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে’ তাহসিন রাইসাকে ‘অপরাধে প্রত্যক্ষ সহায়তা করে’ শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়।

অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের’ অভিযোগে বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জিসান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে ১৫ ডিসেম্বর চারটি মামলা করে দুদক। বেনজীরকে চার মামলায়ই আসামি করা হয়। বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশের প্রথম পুলিশপ্রধান, যিনি একাধারে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও পুলিশের বিশেষ ইউনিট র‌্যাবেরও প্রধান ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান।

দুদকের আবেদনে বেনজীর, তার স্ত্রী ও তিন মেয়ের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। সেই সঙ্গে তাদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব এবং বিভিন্ন কোম্পানিতে তাদের নামে থাকা শেয়ারও অবরুদ্ধ করার আদেশ আসে। সেই অনুযায়ী পরে ব্যবস্থাও নেয় দুদক।

বেনজীর ও তার স্ত্রী-মেয়েদের দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। তবে বোট ক্লাবের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের জন্য দেওয়া চিঠিতে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিদেশে থাকার কথা বলেন। তারা সবাই দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে।

ডিবির হারুনের আয়কর নথি জব্দের আদেশ : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আলোচিত অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আলোচিত এ পুলিশ কর্মকর্তা সাড়ে ১৭ কোটি টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদের মালিক বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব বুধবার এ আদেশ দেন।

দুদকের কোর্ট পরিদর্শক আমির হোসেন জানান, হারুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদিন ওই আবেদন করেন। আবেদনটির পক্ষে শুনানি করেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। পরে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।

আবেদনে বলা হয়, ‘মামলা তদন্তকালে দেখা যায়, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) আসামি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৭ কোটি ৫১ লাখ ১৭ হাজার ৮০৬ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

‘মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সব আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।’ এর আগে ২২ অক্টোবর হারুন অর রশীদ ও তার পরিবারের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানতে চেয়ে দেশের সব ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও ডাক বিভাগে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।

সেখানে হারুন ছাড়াও তার মা-বাবা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে বা বোনের যৌথ নামে অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়। এর আগে হারুন ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছিল বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। হারুন অর রশীদের সম্পদের তথ্য খুঁজতে সরকারের ৬৩ সংস্থায় চিঠি পাঠিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিতি পাওয়া হারুনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে নামে-বেনামে রাজধানীতে দুই ডজন বাড়ি, অর্ধশতাধিক ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, জেদ্দাসহ বিভিন্ন জায়গায় সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক।

২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিএমপির ডিবিপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন হারুন অর রশীদ। গণ-আন্দোলনে সরকার পতনের চারদিন আগে ৩১ জুলাই তাকে সেখান থেকে সরিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) দায়িত্ব দেওয়া হয়। সরকার পতনের পর থেকেই তার খোঁজ মিলছে না।

ডিবিতে দায়িত্ব পালনকালে হারুন তার কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে আসা বিভিন্নজনকে ভাত খাইয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। সেসব ছবি নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করতেন, যা নিয়ে বেশ আলোচনায় ছিলেন এ কর্মকর্তা। সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে ‘নিরাপত্তা’ দেওয়ার নামে ডিবি কার্যালয়ে কয়েকদিন আটকে রাখেন হারুন। তাদের আপ্যায়ন করার একটি ছবি আবার আলোচনা তৈরি করে।

এর আগেও পুলিশের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালে আলোচনায় আসেন হারুন অর রশীদ। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার থাকাকালে ২০১১ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে ধাওয়া দিয়ে বেধড়ক পিটুনির ঘটনায় আলোচিত হন। পরে ডিএমপির লালবাগ বিভাগে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের পর গাজীপুরের পুলিশ সুপার হন তিনি। সেখানে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের মধ্যে ২০১৮ সালের মে মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় বিএনপি তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তোলে। এরপর ওই বছরের অগাস্টের শুরুতে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশে বদলি করা হয়।

নারায়ণগঞ্জে ১১ মাসের দায়িত্বে হকার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়ে তিনি যেমন প্রশংসিত হন, তেমনই এ জেলার অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে ‘টক্করে’ গিয়ে আলোচনার জন্ম দেন। ২০১৯ সালে পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার এমএ হাশেমের ছেলে আমবার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজের স্ত্রী ও সন্তানকে আটক করেও আলোচনায় আসেন তিনি। পরে তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে আনা হয়।

ডিআইজি হিসাবে ২০২২ সালের ১১ মে পদোন্নতি পাওয়ার পর একই বছর ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হিসাবে ডিবির দায়িত্ব পান। এর আগে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসাবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম