শুরু হলো ৪ দিনের গ্যাপেক্সপো
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে ক্ষোভ ব্যবসায়ীদের
হতাশাকে যৌক্তিক বললেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। দেশকে অস্থিতিশীল করতে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ব্যবসায়ীদের এই হতাশাকে যৌক্তিক বলে মনে করেন।
বুধবার বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ) আয়োজিত গ্যাপেক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা নেতারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত ৪ দিনব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে শিল্প উদ্যোক্তারা কারখানা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই অন্তর্বর্তী সরকার গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। তাহলে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে পার্থক্য কী থাকল?
বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার উল আলম পারভেজ বলেন, বাংলাদেশের শ্রম নির্ভর যে ভবিষ্যৎ দেখেছিলাম তা এখন ধূসর হয়ে যাচ্ছে। দেশে ৩৭ শতাংশ শিক্ষিত বেকার। একমাত্র উৎপাদন শিল্প ছাড়া এর সমাধান সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আমরা আসলে শিল্প চাই কিনা তা নিয়ে মাঝেমধ্যে সন্দেহ জাগে। কারণ ব্যাংক লোনের সুদহার, জ্বালানির দাম কোনোটাই এর অনুকূলে নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপি ব্যাখ্যা পরিবর্তন করার কারণে ৩ মাসে অধিকাংশ কারখানা খেলাপি হবে। তার ওপর গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একদিকে গ্যাসের দাম বাড়াবেন অন্যদিকে সরবরাহ থাকবে না তাহলে শিল্প টিকবে কি করে।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গ্যাসের দাম এত বেশি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এই প্রস্তাবের ফলে নতুন উদ্যোক্তা ও পুরোনো উদ্যোক্তাদের মাঝে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে। যা সামগ্রিকভাবে পোশাক খাতে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে। আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যবসা পরিস্থিতি খুব খারাপ। এ অবস্থায় ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়েও চিন্তা করতে হবে। এখন গ্র্যাজুয়েশনে গেলে সেটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।
বিজিএপিএমইএর সাবেক সভাপতি চৌধুরী রাফেজ আলম বলেন, ৮০-র দশকের শেষ পর্যন্ত সব ধরনের এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো, যার কারণে পোশাক শিল্পের লিড টাইম বেড়ে যেত। ২০৩০ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানির লক্ষ্য অর্জন করতে প্যাকেজিং শিল্পে সরকারের সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, এক্সেসরিজ শিল্প পলিসিগত বৈষম্যের শিকার। এ খাতে ব্যবসা করতে এসে পদে পদে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এখন আবার গ্যাসের দাম বাড়লে এই শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে করে পরবর্তী প্রজন্ম ব্যবসা থেকে সরে যাবে।
ব্যবসায়ীদের বক্তব্যের জবাবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, গ্যাসের দাম এত বেশি বাড়ানো হলে ব্যবসায়ীদের হতাশ হওয়াটা যৌক্তিক। তবে আগের সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের পার্থক্য আছে। আগের সরকার বলেছে, এটা হবে, সেটাই হয়েছে। এই সরকার তেমন কিছুই করবে না। পেট্রোবাংলার প্রস্তাব আলাপ-আলোচনা না করে কার্যকর করা হবে না। যেই দাম যৌক্তিক সেই দামই নির্ধারণ করা হবে।
তিনি বলেন, দাম বাড়ানো বা বিভিন্ন কর বাড়ানো সরকারের পক্ষে কিন্তু স্বস্তিদায়ক নয়। তারপরেও অনেক ক্ষেত্রে করতে হচ্ছে, কারণ বিগত সরকার এ দেশে বড় নৈরাজ্য করে গেছে। প্রচুর টাকা পাচার করে নিয়েছে। যার ভার এখন বহন করতে হচ্ছে সবাইকে। এতে সাময়িক কষ্ট হলেও ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে।
৪ দিনব্যাপী প্রদর্শনী শুরু : আইসিসিবিতে আয়োজিত ৪ দিনব্যাপী এক্সপোতে দেশি-বিদেশি ২৫০ জন এক্সিবিটর ৯০০টি স্টলে তাদের পণ্য প্রদর্শন করছেন। এবারের এক্সপোতে ভারত, জাপান, ভিয়েতনাম, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানির খ্যাতনামা এক্সেসরিজ প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। প্রদর্শনী প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে।