সাংবাদিকদের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
বেশি সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন
সরকার মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে ভাবছে না * গণ-অভ্যুত্থানে হত্যা ও গুমে জড়িত ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সরকার মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে ভাবছে না। রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার না চাইলে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার নির্বাচন দেবে। সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ভালো একটা নির্বাচন হবে। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। অন্যদিকে একইদিন রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ড এবং গুমে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে সরকার। কেআইবি মিলনায়তনে শফিকুল আলম বলেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারে গঠিত ৬ কমিশন ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ৫ কমিশনের প্রতিবেদন দেবে। এই প্রতিবেদনের আলোকে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রেস সচিব বলেন, জনআকাঙ্ক্ষার যে জায়গাটা অন্তর্বর্তী সরকার তৈরি করতে পেরেছে, সেটা হলো একটা রোডম্যাপ দিয়েছে। দুইটা সময় উল্লেখ করা হয়েছে। একটা হচ্ছে যদি রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে বেশি সংস্কারে যাবে না। তাহলে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। আর যদি রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়ে অনেক সংস্কারের কাজ করিয়ে নেবে, তাহলে আরও ৬ মাস বেশি সময় দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, লুটপাট-দুর্নীতি ও জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় জড়িতদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। শফিকুল আলম বলেন, আমরা দেশকে অনেক স্থিতিশীলতার মধ্যে নিয়ে আসতে পেরেছি। অর্থনীতি যে গতিতে এগোচ্ছে, সে হিসাবে বর্তমান রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ২০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বর্তমানে তা আছে ২২ বিলিয়ন ডলারে। সে হিসাবে বলতে পারি আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি।
প্রেস সচিব বলেন, আওয়ামী সরকার পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের মানুষের মধ্যে আকাশচুম্বী আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। আমরা তাদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রেস উইং একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছে। সে গ্রুপে যারাই যুক্ত হতে আগ্রহী, তাদের যুক্ত করা হচ্ছে। সরকার প্রতিটি কাজের তথ্য জনগণকে জানাচ্ছে।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন- গুমের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ২২ জনের এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। যাদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রয়েছেন। তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বা লাল পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেটি ভারতকেও জানানো হয়েছে। ভারত থেকে জানানো হয়েছে, তারা শেখ হাসিনার জন্য ট্রাভেল পাশ ইস্যু করেছে। শেখ হাসিনার কাছে কূটনৈতিক পাসপোর্ট ছাড়া অন্য কোনো পাসপোর্ট রয়েছে কি না- জানতে চাইলে ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি বলেন, আইনগতভাবে তিনি একটি পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার আরও বলেন, ই-পাসপোর্ট প্রস্তুত হলে এখন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও মোবাইলে এসএমএস পাবেন। প্রবাসীদের ভোগান্তি কমাতে এই উদ্যোগ সহায়তা করবে বলে আশা করছে সরকার। তিনি বলেন, পাসপোর্ট অফিসগুলো দালালমুক্ত করার বিষয়ে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। অফিসের পাশে কিছু দোকানকে ঘিরে দালালচক্র গড়ে ওঠে। এখন থেকে এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদনের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার্থীদের বই ছাপার বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বই ছাপার কাজ শেষ হবে। এবার সময়মতো অনেকেই বই পায়নি, এজন্য সরকার আন্তরিকভাবে দুঃখিত। দেশেই সব বই ছাপা হচ্ছে বলে কিছুটা দেরি হচ্ছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সহিংসতায় শহিদ হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা করছে সরকার। প্রথম ধাপের তালিকায় শহিদ ৮২৬ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে। ওই মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে একটি কমিশন গঠন করে। ওই কমিশন অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। তাতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর নৃশংস নির্যাতনের চিত্র উঠে আসে। এই কমিশন ১ হাজার ৬৭৬টি জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগ পর্যালোচনা করেছে তারা। তার মধ্যে ৭৩ শতাংশ ভুক্তভোগী ফিরে এসেছেন। বাকি ২৭ শতাংশ (অন্তত ২০৪ জন) এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।