ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাবেশে বক্তারা
আগে বিচার ও সংস্কার, পরে নির্বাচন
ফরিদপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, অবিলম্বে সরকারকে ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’ ঘোষণা দিতে হবে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে শহিদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, ঠিক সেভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহিদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার আনতে হবে। আগে বিচার ও সংস্কার হবে; এর পরে নির্বাচন। এর আগে কোনোভাবেই নির্বাচন দেওয়া যাবে না।
ফ্যাসিবাদীব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিলোপ, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণ এবং প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশনের জন-আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ডাকা সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। শহরের রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে সোমবার বিকাল ৪টায় সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, গত দেড় দশকে খুনি হাসিনা আমাদের দেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে ভেঙে দিয়েছে। আমাদের দেশটা নেতৃত্বশূন্যতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমাদের পূর্বতন যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব রয়েছে, তাদের বিভাজনের কারণে তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি, তারা ব্যর্থ হয়েছে। তারা যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, ঠিক সেই জায়গাতেই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে হাল ধরতে হয়েছে। তিনি বলেন, ৬ আগস্টের ৬ পর আজ পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান বিচার আমরা দেখতে পাইনি। ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। ২০১৪ সালের শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডেরও কোনো বিচার হয়নি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যেভাবে নির্বাচনে কারচুপি করা হয়েছে, সেগুলোর এখন পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেন, যদি এ সরকার আমাদের কাজকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়, তাহলে অবশ্যই এ বিচারগুলো সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি বলেন, এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা দেখি নানা ধরনের বিদ্রোহ করা হচ্ছে, সচিবালয়ে আগুন লাগানো হয়। আপনাদের বলি, আপনারা বাস্তবতাকে মেনে নিন। ছাত্রসমাজ যতদিন জেগে আছে, ততদিন খুনি শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারবে না। ঢাকার মসনদে কে বসবে, সেটি আগে দিল্লি থেকে নির্ধারণ করা হতো। এখন আর দিল্লি নয়, এদেশের জনগণই নির্ধারণ করবে ঢাকার মসনদে কে বসবে। হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বিগত সরকার নতজানুর কারণে ফেলানী হত্যারও কোনো বিচার চায়নি।
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, যারা ক্ষমতার লোভে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষের রক্ত ও জীবনকে বিন্দুমাত্র মূল্য দেয় না, তাদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না বাংলাদেশের মানুষ। এ দেশের মানুষের জীবনের দিকে আর যদি কোনো শকুন দৃষ্টি দেয়, তাহলে তার চোখ উপড়ে ফেলব। হোক সে দেশের ভেতরের শক্তি অথবা বাইরের। আমরা আমাদের শহিদ ভাইদের হত্যার বিচার চাই। ওই শেখ হাসিনা দেশে আসবে, তবে সে দেশে এসে সরাসরি ওই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে এবং কাঠগড়া থেকে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াবে। বাংলাদেশে অবশ্যই একটি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন হবে। তবে এর আগে এই খুনি হাসিনা আমাদের এ দেশের সিস্টেমগুলোকে যেভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে, সেই সিস্টেমগুলোকে সংস্কার করতে হবে। আমাদের এই বাংলাদেশ আর কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা চোখে চোখ রেখে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করব। কোনো বহিঃশক্তি যদি আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের চেষ্টা করে, তাহলে আমরা সেই পররাষ্ট্রনীতি ছুড়ে ফেলব। তিনি বলেন, সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকতে হবে। এই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে। সেই ঘোষণাপত্রে জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের কথা স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে।
কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় ছাত্র সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন সোহেল রানা। আরও বক্তব্য দেন হাসিব-আল ইসলাম, রিফাত রশীদ, আশরেফা, রাজেন্দ্র কলেজ শাখার প্রধান কাজী রিয়াজ, ফারহান আহসান অর্ণব, নাবিলা তালুকদার, তাহসিন হাসান দ্বীন, মাহমুদুল হাসান ওয়ালিদ, সানজিদা রহমান সমতা, জেবা তাহসিন, শাহ মো. আরাফাত প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় ফরিদপুরে বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এসব সশস্ত্র হামলার সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখনো অনেকে আমাদের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। আন্দোলনে আহত অনেকে পারিবারিক কারণে থানায় মামলা করতে পারেননি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আন্দোলনে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তারা বলেন, এ দেশে আর মুজিববাদ ফিরে আসবে না। সমাবেশ শুরুর পর মঞ্চ থেকে নেমে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছাত্র আন্দোলনে ফরিদপুরের ৮ জন শহিদ এবং আহতদের খোঁজখবর নেন হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। ছাত্র সমাবেশ উপলক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকরা ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে যোগ দেন।