Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে নতুন বই

রাজনৈতিক অনেক গল্প ও কবিতা বাদ

হুমায়ুন কবির

হুমায়ুন কবির

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনৈতিক অনেক গল্প ও কবিতা বাদ

নতুন শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের নতুন বইয়ে রাজনৈতিক ও ইতিহাসের অতিরঞ্জিত অনেক গল্প ও কবিতা বাদ পড়েছে। নানাভাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কথা উঠে এসেছে। বইয়ের কাভার ও অধ্যায়ে গল্প-কবিতা, সংকলন এবং ছবি ও গ্রাফিতির মাধ্যমে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়েছে। নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন করা হয়েছে। ফিরেছে পরীক্ষা পদ্ধতিও।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার ২৮৩ শিক্ষার্থীর জন্য ৯৬৪টি লটে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে ইবতেদায়ি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বইও রয়েছে। এছাড়া ব্রেইল বই রয়েছে সাড়ে ৮ হাজার। এসব বইয়ের এনসিটিবির ৫৭ বিশেষজ্ঞ ৬৯১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করেছেন।

২০১২ সালের সৃজনশীল কারিকুলামের আলোকে পরিমার্জিত বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। শিক্ষাবর্ষের শুরুতে কয়েকটি বই শিক্ষার্থী হাতে পেলেও বেশির ভাগ বই পায়নি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে এবার তিন মাস দেরিতে বইয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সংশোধন ও পরিমার্জন করে বই ছাপাতে দেরি হয়ে যায়।

নতুন পাঠ্যবই বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পাঠ্যবইয়ে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে ইতিহাস বর্ণনায়। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জীবনী ও কর্মকাণ্ড নিয়ে অতিরঞ্জিত গল্প ও কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। দেশের জন্য অবদান রাখা অন্য ব্যক্তিদেরও সম্মান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পাঠ্যপুস্তকের পেছনে থাকা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তার উদ্ধৃতি বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি ও নানা স্লোগান সংযুক্ত হয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে বেশকিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বাদ পড়েছে। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ছবি যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে ‘আমাদের চার নেতা’ নামে নতুন অধ্যায় সংযোজন করা হয়েছে। একাত্তরের ইতিহাসের নায়ক হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর অবদান স্থান পেয়েছে। ছবিসহ তাদের প্রত্যেকের সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক হিসাবে যুক্ত হয়েছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আর ‘রাজনীতিতে নারী’ শীর্ষক প্রবন্ধে যুক্ত হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সেলিনা হোসেনের পাঁচটি, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের দুটি, সৈয়দ শামসুল হকের একটি, রোকনুজ্জামান খানের একটি, নির্মলেন্দু গুণের একটি ও সাবেক আমলা কামাল চৌধুরীর একটি লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক স্তরে অল্প কয়েকটি বইয়ের সংশোধন ও পরিমার্জন হয়েছে। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি গদ্য-পদ্য ও বইয়ের কাভার পরিবর্তন করা হয়েছে। আর চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে চারটি গদ্য-পদ্য ও বইয়ের কিছু কাভার বাদ দেওয়া হয়েছে। বিপরীতে নতুন আটটি গদ্য-পদ্য যুক্ত হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী তুলে দিয়ে জাতীয় চার নেতার জীবনী যুক্ত করা হয়েছে। বাদ গেছে শেখ রাসেলকে নিয়ে লেখা ইংরেজি গদ্যও।

প্রথম শ্রেণির বাংলা ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়’ অধ্যায়ের নাম বদলে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ করা হয়েছে। সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের একটি দৃশ্য দেওয়া হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা উল্লেখ থাকলেও এখন তা বাদ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর লেখা ‘সোনার ছেলে’ বাদ দিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ওপর লেখা ‘দুখু মিয়ার জীবন’ যোগ করা হয়েছে। বইয়ের ২৪ নম্বর পৃষ্ঠায় পদ্মা সেতুর ছবি পরিবর্তন করা হয়েছে।

তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গদ্য ‘সেই সাহসী ছেলে’ বাদ গেছে। বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে ‘আমাদের জাতির পিতা’ বাদ দেওয়া হয়েছে। ইংরেজি বইয়ের শেষ অধ্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে শেখ রাসেলের জীবনী বাদ দেওয়া হয়েছে।

চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বই থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে মমতাজউদ্দীনের লেখা ‘বাংলার খোকা’ এবং নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘মুজিব মানে মুক্তি’ বাদ পড়েছে।

মাধ্যমিকে যেসব পরিবর্তন : এ বছরের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে সাতটি গদ্য ও চারটি কবিতা এবং একটি উপন্যাস বাদ দেওয়া হয়েছে। যুক্ত হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর লেখা একটি সংকলিতসহ দুটি গদ্য। একই শ্রেণির ইংরেজি বই থেকে একটি অধ্যায় বাদ গেছে এবং জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি নিয়ে লেখাসহ নতুন তিনটি অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। পরিবর্তন করা হয়েছে বইয়ের কাভারও। এছাড়া নবম-দশম শ্রেণি বিভাগ বিভাজনে ফিরেছে। এতে বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বিষয়ে আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন।

এছাড়া অষ্টম শ্রেণির ‘সাহিত্য কণিকা’ বইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের ওপর সংকলিত লেখা ‘গণ-অভ্যুত্থানের কথা’ স্থান পেয়েছে। এতে উল্লেখ রয়েছে এ দেশের বড় তিনটি গণ-অভ্যুত্থানের কথা। এগুলো হলো উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং ২০২৪ সালে হওয়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থান।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, আমরা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বইয়ের পরিবর্তন ও পরিমার্জন করেছি। যাতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই পড়ে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। ইতিহাসে জাতীয় নেতাদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। এছাড়া বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পাঠ্যবইয়ে যা হয়েছে, তা হতাশাজনক। সেখানে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হয়নি।

পরিমার্জন কমিটির সদস্য রাখাল রাহা যুগান্তরকে বলেন, পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পাঠ্যবইয়ে তাদের মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, সেখানে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। ইতিহাসে অতিরঞ্জিত বিষয়গুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান, গণিত ও আইসিটি বিষয়ে কিছু সংশোধন করা হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীরা সহজে বুঝতে পারে।

নতুন পাঠ্যবইয়ে শহিদ আবু সাঈদের নিহত হওয়ার তারিখ ভুল : নবম-দশম শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টুডে’ বইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা ‘গ্রাফিতি’ অধ্যায়ে রংপুরে শহিদ আবু সাঈদের নিহত হওয়ার তারিখ ভুল ছাপা হয়েছে। পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের নিহত হওয়ার তারিখ ১৭ জুলাই উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটি হবে ১৬ জুলাই। এনসিটিবির কর্মকর্তারা এ ভুলের কথা স্বীকার করে বলেছেন, দ্রুতই এ বিষয়ে সংশোধনী দেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম