সড়কে ট্রেইনি চিকিৎসকরা
৩৫ হাজার টাকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান আন্দোলনকারীদের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের দাবির মুখে ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ভাতা কার্যকর হবে আগামী বছরের জুলাই থেকে। আপাতত ৩০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন চিকিৎসকরা। রোববার বিকালে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের হেয়ার রোডের বাসায় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ কাজে ফিরে গেলেও আরেকটি অংশ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে শাহবাগে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের কাছে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি ট্রেইনি চিকিৎসকদের সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। তবে চিকিৎসকরা তার আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেন। পরে নতুন কর্মসূচি দিয়ে ১১ ঘণ্টা পর রাত ১০টায় শাহবাগ ছাড়েন তারা। এর আগে সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা জানান, আজ সকাল ১০টায় বিএসএমএমইউ’র বটতলায় জমায়েত হবেন তারা। এরপর বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে রওয়ানা হবেন। প্রধান উপদেষ্টাকে জানুয়ারি থেকে ৩৫ হাজার টাকা এবং জুলাইয়ে ৫০ হাজার টাকা ভাতার জানাবেন। পাশাপাশি কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
রোববার আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, ড্যাবের কোষাধ্যক্ষ ডা. মো. জহিরুল হক শাকিল, এনডিএফ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, যুগ্মসম্পাদক ডা. রুহুল কুদ্দুস বিপ্লব, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির হিমু। অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডা. জাবির হোসেন, ডা. নুরন্নবী ও ডা. ইমরান শিকদার।
এর আগে ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বটতলা চত্বরে জড়ো হতে থাকেন প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এ সময় তারা ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের অবরোধের কারণে আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। দ্বিতীয় দফায় চিকিৎসকদের এ অবরোধকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শাহবাগ মোড়ে প্রস্তুত রাখা হয় সাঁজোয়া যান এপিসি ও জলকামান। প্রথম দফায় আন্দোলনের সময়ের তুলনায় রোববার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা) আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, মৎস্য ভবন, কাঁটাবন, কাওরান বাজার এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
রোববার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে ‘ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস’ (ডিএমজে)-এর প্রচার সম্পাদক ডা. মো. হাবিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। আমাদের দাবি ছিল ৫০ হাজার টাকা করা হোক। জুলাই থেকে ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটি স্যাটিসফেক্টরি লেভেলে (সন্তোষজনক) পর্যায়ে পড়ে না। এটা আরও বাড়ানো উচিত। তাছাড়া আমাদের দাবি-জানুয়ারি থেকেই ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাব। আরও বেশি চিকিৎসককে নিয়ে এটিকে বেগবান করা হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক আন্দোলনকারী মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল, ভাতা ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা। আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল সুযোগ-সুবিধাসহ নবম গ্রেড দেবে। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। ভাতা মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। কিন্তু আমরা সেই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করেছি। ৫০ হাজার অথবা নবম গ্রেডের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নতুন করে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। নইলে আমরা রাস্তা ছাড়ব না, আমাদের কর্মসূচি চলবে। পুলিশ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরে যাব না।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের সঙ্গে দুপুরের বৈঠকে থাকা একজন চিকিৎসক যুগান্তরকে বলেন, ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের জানুয়ারি থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং জুলাই থেকে ৩৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা এখান থেকে সেটা মেনে নিয়েছেন।’
এনডিএফ নেতা আতিয়ার রহমান বলেন, ‘তাদের ভাতা বাড়ানোর একটা দাবি ছিল। বৈঠকে অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু স্যার সরকারের পক্ষ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। তবে সেটা এখন থেকেই দেওয়া যাবে না, সামনের বাজেটে এটা দেওয়া হবে। আমি যতদূর বুঝেছি, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা সেটা মেনেই এখান থেকে গিয়েছেন।’
তিনি বলেন, তারা একটা দাবি করেছেন, সরকারের অবস্থাও বিবেচনা করতে আমরা তাদের অনুরোধ করছি। তারা রাস্তায় থাকলে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়; তারা যেন কাজে ফিরে যান। সারা দেশে প্রায় ১০ হাজার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক রয়েছেন। দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে উচ্চতর শিক্ষার পাশাপাশি তারা হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেন। ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ২০২২ সাল থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। তাদের আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে জুলাইয়ে মাসিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। ওই ভাতা ‘যৌক্তিক নয়’ দাবি করে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন আন্দোলনকারীরা।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও ভাতা বাড়ানোর দাবিতে চিকিৎসকরা আন্দোলন শুরু করেন। ২২ ডিসেম্বর তারা শাহবাগে সড়ক অবরোধ করলে সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমের কাছ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে তারা রাস্তা ছাড়েন।
এ অবস্থায় অর্থ বিভাগ ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) এফসিপিএস প্রথম পর্ব পাশ করা অবৈতনিক প্রশিক্ষণার্থীদের পারিতোষিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রজ্ঞাপন জারি করে।