Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

রক্তে লেখা সংবিধান কবরস্থের কথা শুনলে কষ্ট হয়: মির্জা আব্বাস

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রক্তে লেখা সংবিধান কবরস্থের কথা শুনলে কষ্ট হয়: মির্জা আব্বাস

শহিদের রক্তের ওপর লেখা সংবিধানকে কবর দেওয়ার কথা শুনলে কষ্ট হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, সংবিধানে খারাপ কিছু থাকলে তা বাতিলযোগ্য। এই সংবিধানকে সংশোধন বা পুনর্লিখন করা যাবে। তবে কবর দেওয়া হবে এভাবে বলা ঠিক নয়। এগুলো ফ্যাসিবাদের ভাষা। রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে একটি কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি এবং ফ্রন্ট লাইনে অংশগ্রহণ করেছি। আমার সামনে বহু সহযোদ্ধা মারা গেছেন। আমার বন্ধুবান্ধবসহ মোট মারা গেছে প্রায় তিন লাখ। শহিদের রক্তের ওপর দিয়ে লেখা যে সংবিধান, সেই সংবিধানকে যখন কবর দেওয়ার কথা বলা হয় তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে। আমরা তোমাদের সিনিয়র হিসাবে, তোমাদের অগ্রজ হিসাবে কষ্ট পাই যে, এটা কী করছে? এভাবে কথা বলাটা ঠিক হলো? এই সংবিধানে যদি খারাপ কিছু থাকে নিশ্চয়ই সেটা বাতিলযোগ্য। এই সংবিধানকে সংশোধন করা যাবে।

তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের কাছে বলব, যারা এই ঘোষণা দিয়েছে (সংবিধানের কবর দেওয়া হবে), বৈষ্যমবিরোধী ছাত্রদের কাছে অনুরোধ জানাব, কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করবেন, ভুল বুঝবেন না। এ ধরনের কথা ফ্যাসিবাদের মুখ দিয়ে আসে। কবর দিয়ে দেব, মেরে ফেলব, কেটে ফেলব, ছিঁড়ে ফেলব-এসব ভালো কথা নয়। জাতি তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে, আমরাও তাকিয়ে আছি। তোমাদের মুখ থেকে এ ধরনের কথা আমরা আশা করি না।

একাত্তর সালের যুদ্ধ কি অন্যায় উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, কিছু লোক বাইরে থেকে সরকার গঠন করে ফেলেছে। তাদের কথাবার্তার যে ধাঁচ, আজকে আমাদের ছাত্রদের কথাবার্তার ধাঁচ একরকম। আমার প্রশ্ন একাত্তর সালে জাতি কী করল? আমরা কি অন্যায় করেছিলাম? আমি জানি একটি পক্ষ বলবে, হ্যাঁ ওইদিন পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন করে অন্যায় করেছেন বলতে পারেন। কিন্তু আমরা কি যুদ্ধ করে অন্যায় করেছিলাম, দেশকে স্বাধীন করে কি অন্যায় করেছিলাম?

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ওরা বাকশাল কায়েম করল। হাসিনা দেশটাকে ১৫ বছরে শেষ করে দিলো। প্রায় ভারতের আন্ডারে উপনীত করেছিল। এখান থেকে উদ্ধারে আমরা ১৫ বছর আন্দোলন করেছি। আমাদের আন্দোলনের কি কোনো মূল্য নেই। সিনিয়রদের সঙ্গে কথা না বলে, কোনো মতামত না নিয়ে, এককভাবে ওদের (ছাত্রবৈষম্য আন্দোলনকারী) বলা কি ঠিক হলো। আমি ’৭২ সালের সংবিধানের সমর্থক নই, আমি একাত্তর সালের সংবিধানের মুক্তিযুদ্ধের রক্তের সমর্থক। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বলেই এই সংবিধান। যদি মুক্তিযুদ্ধটা একাত্তরের আগেই অর্থাৎ একাত্তরের প্রথম দিকে শেষ হয়ে যেত তাহলে ৭১ সালের সংবিধান বলা হতো।

২৪ আন্দোলনকে কেউ ব্র্যান্ডিং করবেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের আন্দোলনকে কেউ ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা করবেন না। যিনি আজকে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে অনুরোধ জানাব, টেলিভিশনে ক্যামেরায় দেখেন কী বলেছেন। অহঙ্কার আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। হাসিনা অহঙ্কার করেছিল, পতন হয়ে গেছে। হাসিনার পতন আমাদের কষ্টের অর্জন, এটাকে এরকম বালখিল্য কথা বলে জাতিকে বিভক্ত করবেন না। এটা আমার সর্বশেষ অনুরোধ।

‘পতিত স্বৈরাচারের প্রেতাত্মাদের’ প্রশাসনে রেখে অন্তবর্তীকালীন সরকার কি সংস্কার করতে চায় তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান থেকে বারবার বলেছি, আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মাকে রেখে হাসিনা চলে গেছে। আমার সামনে এখন ৮ জনের নাম আছে, আমি নাম বলব না, এরা সবাই সচিব হিসাবে মন্ত্রণালয়ে অবস্থান করছে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো এত বিরোধিতার পরও মাত্র দু-তিন দিন আগে সচিবালয়ে আরেকজন প্রাক্তন বাকশালী সচিবকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন বাকশালীদের প্রেতাত্মাকে বগলদাবা করে নিয়ে আপনারা কী সংস্কার করবেন জাতির মাঝে প্রশ্ন জাগে? আমার কাছেও প্রশ্ন জাগে? আমরা কি আওয়ামী লীগকে আবার ফিরিয়ে আনার রাস্তা করে দিচ্ছি?

যথাসময়ে নির্বাচনের দাবির কথা আবারও উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, সংস্কারের কথা বলছেন, করেন। যতটুকু লাগে করেন, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যথাসময়ে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন দেবেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, আমাদের দেশের পাশে ভালো প্রতিবেশী নেই। আমাদের পাশে যারা আছে তারা কখনো বাংলাদেশকে স্থির থাকতে দিতে চায় না। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা সুযোগ দিতে চাই না, সুযোগ দেব না।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, নির্বাহী কমিটি সদস্য কাজী আবুল বাশার, মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার নুরুদ্দিন আহমেদ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি বাছির জামাল প্রমুখ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মহানগর দক্ষিণের হারুনুর রশিদ হারুন, লিটন মাহমুদ, আনম সাইফুল ইসলাম, মনির হোসেন চেয়ারম্যান, সাইদুর রহমান মিন্টু, আব্দুস সাত্তার, মীর হোসেন মীরু, ফরিদ উদ্দিন, ফারুকুল ইসলাম, শরীফ হোসেন, আরিফা সুলতানা রুমা প্রমুখ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম