নীরবে সব অপকর্মে একটি ইসলামি দলের নেতাকর্মীরা: রিজভী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘৫ আগস্টের আগে ব্যাংক লুট ও দখল করেছিল আওয়ামী লীগ। আর ৫ আগস্টের পর ব্যাংক দখল করেছে একটি ইসলামি দল। গণ-অভ্যুত্থানের পর একটি রাজনৈতিক দলের আত্মসাৎ দেখেছে জনগণ। আমরা তো প্রথমেই দেখলাম ৫ আগস্টের পরের দিনই কী করে ইসলামী ব্যাংকগুলো আপনারা দখল করেছেন। এটা জনগণ দেখেছে। শেখ হাসিনার আমলে যারা ব্যাংক লুট করেছে সেই এস আলমদের উত্তরসূরি হয়ে ইসলামি ব্যাংক দখল করেছেন। আর আজকে বড় বড় কথা বলেন। বিএনপির নামে কলঙ্ক লেপন করছেন। পাড়া-মহল্লায়, জেলায় অনেক টার্মিনাল দখল, অনেক টেম্পো স্ট্যান্ড দখলসহ অনেক টেন্ডারবাজির ভাগাভাগির মধ্যে আপনাদের লোকরা কি জড়িত নেই? আমি সেই রাজনৈতিক দলটিকে বলতে চাই খুব নীরবে-নিভৃতে সব অপকর্মের সঙ্গে আপনারা জড়িত। ৫ আগস্টের পর সব অপকর্মের সঙ্গে আপনারা জড়িত। কারা ক্ষুর পার্টি, পায়ের রগ কাটে তাদের চেনে জনগণ। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে একাত্তরের বিরোধিতাকারীরা।’ রোববার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতাকে আহত ও হত্যা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার, তার উপদেষ্টামণ্ডলী কয়জন তাদেরকে স্মরণ করছে। তারা তো সরকার গঠন করেছেন, উপদেষ্টা হয়েছেন। কিন্তু তারা প্রায় অনেকেই মাঝে মাঝে ছবক দেয়। আবার দু’একটি রাজনৈতিক দল দেখি তারাও ছবক দেয়। যে চাঁদাবাজ বিদায় নিয়েছে, আর কোনো চাঁদাবাজকে আমরা দেখতে চাই না। কাকে উদ্দেশ করে বলছে? শেখ হাসিনার আমলে যারা ব্যাংক লুট করেছে, ব্যাংক আত্মসাৎ করেছে, এস আলমদের উত্তরসূরি হিসাবে ৫ আগস্টের পর আমরা কি ব্যাংক আত্মসাৎ করতে দেখিনি। আমরা তো দেখেছি ইসলামি ব্যাংক কীভাবে গ্রাস করে নিল একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারীরা। তাহলে আজকে কোন মুখে বলছেন এক চাঁদাবাজ পালাইছে, আরেক চাঁদাবাজকে কেউ দেখতে চায় না। কাকে উদ্দেশ করে বলছেন আমরা কি বুঝতে পারি না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা ব্যাংক আত্মসাতের পর ৫ আগস্টের পর আপনাদের আত্মসাৎও মানুষ দেখেছে। আমরা হাসিনার আমলে দেখেছি চাপাতি, হেলমেট লীগ, বন্দুক লীগ। আবার জনগণ তো এটাও জানে ক্ষুর পার্টি এবং পায়ের রগ কাটা পার্টি এরা কারা-তা কি জনগণ জানে না। কারা পায়ের রগ কাটে? তাদের বিষয়ে কিন্তু জনগণ সবই জানে। সুতরাং খুব ঘোলা পানতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের একাত্তরের অর্জন কী? আপনারা একাত্তরের বিরোধিতা করেছেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এই গৌরব বিএনপির। একাত্তরের গৌরব, নব্বয়ের গৌরব বিএনপির। কারণ সেদিনও আপনারা শেখ হাসিনার সঙ্গে আঁতাত করে ’৮৬ সালের নির্বাচনে গিয়েছিলেন। এটাও তো জনগণ দেখেছে। কিন্তু বিএনপি সেই নির্বাচনে যায়নি। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, স্বৈরাচারের অধীনে নির্বাচন করব না। আপনারা মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনকে দিয়ে গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। তারা এসেছিলেন হাসিনার মতো একটি ভয়ংকর স্বৈরাচার কায়েম করার জন্য। তখনও সেদিন নির্বাচনে যেতে আপনারা বাধ্য করেছিলেন। এটা তো জণগণ জানে এবং জনগণ দেখে।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘আপনারা তো ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন। ইসলাম মানে কি বারবার মুনাফেকি করা। ইসলামের মর্মবাণী হচ্ছে তুমি যে অঙ্গীকার করো, সেই অঙ্গীকার তুমি রক্ষা করবে। এটাই তো ইসলামের মর্মবাণী। বিএনপির সেই ঐতিহ্যের পতাকা বহন করে, যেই ঐতিহ্যের মধ্য আছে জনগণের কাছে অঙ্গীকার থেকে বিন্দুমাত্র সরে না আসা। এই গৌরব বিএনপির, এই গৌরব জিয়াউর রহমানের, দেশনেত্রী বেগ খালেদা জিয়ার, এই গৌরব তারেক রহমানের। ’
রিজভী আরও বলেন, ‘একাত্তর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণতন্ত্রের প্রশ্নে বিএনপি কোনো দিন মাথা নিচু করেনি। আপনারা ৫ আগস্টের পরে কী বললেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করবেন, ভালো কথা আমাদের আপত্তি নেই। আপনারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেবেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার সুখরঞ্জন বালিকে গোয়েন্দা পুলিল ধরে নিয়ে গিয়ে তার শরীরে ইলেকট্রিক শক দিয়েছে। দেখবেন তার সব বয়ান ইতোমধ্যে এসছে। সুখরঞ্জন বালি হিন্দু ধর্মের একজন মানুষ, তাকে দিয়ে মিথ্যা কথা বলানো যায়নি। তাকে শেখ হাসিনার গোয়েন্দা বাহিনী বলেছেন, তুমি বলো তোমার ভাইকে হত্যা করেছে মাওলানা সাঈদী। তিনি বলেছেন আমি মিথ্যা কথা বলিনা, তিনি সেটা করেনি। সুখরঞ্জন বালি সে যে সাহসিকতা ও ন্যায়-নীতির দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন, এটা আমি ওই রাজনৈতিক দলের বন্ধুদেরকে বলতে চাই আপনারা শিখুন তার কাছ থেকে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চান। শেখ হাসিনার প্রতিটি গুম-খুনের দোসর হচ্ছে ওই পার্শ^বর্তী দেশ। এই সুখরঞ্জন বালিকে হাইকোর্টের গেট থেকে গোয়েন্দা পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে টর্চার করে টাকার অফার দেওয়ার পরও সে যখন মাথা নোয়ায়নি, তখন তাকে ভারতে পাচার করে দিয়েছে। ভারতের কারাগারে সে ৫ বছর ছিলেন। এখন বেরিয়ে এসে সত্য কথাগুলো বলছেন। এরপরও আপনারা বলেন শেখ হাসিনার সব মাফ করে দেবেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করবেন। এর মধ্যে দিয়েই তো প্রমাণিত হয় যে আপনারা হচ্ছেন ন্যায়-নীতির পরোয়া করেন না। আপনারা অন্য কিছু করেন। আপনার দলের প্রধান নেতাদের যারা জুডিশিয়াল কিলিং করছে, তাদেরকে বলছেন মাফ করে দেবেন। তাহলে ইসলামের যে মর্মবাণী অন্যায়য়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করো, তা আপনাদের মধ্যে নেই। করুণার কথাও বলা হয়েছে। ওরা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমাও চাইল না। আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন, সম্পর্ক উন্নয়ন করবেন। অর্থাৎ আপনারা আপনাদের রক্তের সঙ্গেও বেইমানি করলেন, না? যেমন ’৮৬ সালে আপনারাও বলেছিলেন নির্বাচনে যাবেন না, তারপরও নির্বাচনে গেলেন। ’
রিজভী আরও বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশই শুধু অপতথ্য, অপপ্রচার করার চেষ্টা করছেন না, দেশের ভেতর থেকেও অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাচ্ছেন। গণতন্ত্রের পক্ষে যে এত অবদান, এত যে আত্মত্যাগ, আজকে সব গণতান্ত্রিক শক্তির এক জায়গায় থাকার কথা ছিল। অথচ এই শক্তিকে ফাটল ধরিয়ে দু-একটি রাজনৈতিক দল যেভাবে নিজেদের ফায়দা তোলার চেষ্টা করছেন, এদেশের মানুষ তা সব জানেন। তারা জানেন কারা দেশপ্রেমিক, তারা জানেন কারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে। কারা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। কাদের ঐতিহ্যের মধ্যে জড়িয়ে আছে এসব বৈশিষ্ট্য। ’
জাতীয়তাবাদী রিকশা ভ্যান অটো শ্রমিক দলের পক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রিজভী বলেন, ১৬ বছরের নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলনের ফল জুলাই বিপ্লব। এই আন্দোলন করতে গিয়ে ৯৭ জন শ্রমজীবী মানুষ শহিদ হয়েছে। তাদের অবদান গোটা জাতিকে অগ্নিগর্ভ করেছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়াপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু, সহ-অর্থ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ডা. জাহিদুল কবির, ছাত্রদলের ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল, আয়োজক সংগঠনের নেতা আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ।