সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
তদন্ত কমিটির কাজ শুরু ঘটনাস্থল পরিদর্শন
ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর কাজ চালানোর জন্য বিকল্প স্থান খোঁজা হচ্ছে * সারা দেশের কেপিআই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরামর্শ * তদন্ত কমিটি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নাশকতার শঙ্কায় জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সচিবালয়ের মতো কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। আগুন লাগার পর ফায়ার অ্যালার্ম বাজেনি। ভবনে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো ছিল অকার্যকর। সচিবালয়ে পানির ব্যবস্থা ছিল না। সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট প্রশ্ন। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়টিও রহস্যজনক। যেসব মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বেশি, সেগুলোতেই কেন আগুন লাগবে-এমন প্রশ্নও তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি নিয়েও সমালোচনা করেন তারা। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রধান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণিসহ কমিটির সদস্যরা শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় সচিবালয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা সেটি তদন্তের পর বলা যাবে। তিনি আরও বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসেছি। বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গানপাউডার ব্যবহার হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে ডিজি বলেন, বিষয়টি বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা খতিয়ে দেখবেন। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর কাজ চালানোর জন্য অস্থায়ী দপ্তর খোঁজা হচ্ছে। এ জন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে খালি জায়গা খুঁজে বের করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেখানে গণমাধ্যম, ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা এবং ইলেকট্রিক এক্সপার্ট থাকতে পারেন। তারা বলেন, যারা জীবনে আগুন নেভাননি তাদের কমিটিতে রেখে লাভ কী? যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে তাদের কারও কারও সঙ্গে আওয়ামী লীগের যোগাযোগ থাকতে পারে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহিদউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, আগুনের ঘটনাটি স্বাভাবিক দুর্ঘটনার চেয়ে ব্যতিক্রম। এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার কোনো দিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নাশকতার অনেক লিংক আছে। অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত এটিকে কোনোভাবেই দুর্ঘটনা বলা যাবে না। অবশ্যই এখানে নাশকতার আশঙ্কা আছে। এতবড় ভবনের দুই প্রান্তে হঠাৎ করে আগুন লাগার বিষয়টি মোটেই স্বাভাবিক নয়। পরিকল্পনা ছাড়া এমন আগুন হতে পারে না। এখানে পোড়ানো হয়েছে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি। দেখতে হবে এসব পুড়িয়ে কারা লাভবান হবেন। কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির নথি প্রয়োজন। নথিগুলো ওই ভবনে আছে। সেগুলো পুড়িয়ে ফেললে যাদের লাভ হবে তারাই এটি করাতে পারে। এখানে নাশকতার মোটিভ পরিষ্কার। সেদিন ছিল ছুটির দিন। রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে এখানে আগুন ধরানো বা পরিকল্পিত শর্টসার্কিট করানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে নাশকতাকারীরা। সেখানে যারা গরিব কর্মী ছিলেন তাদের টাকার বিনিময়ে কেনা বা ব্ল্যাকমেইলিং করা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।
আবু নাঈম মো. শহিদউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, সচিবালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এটি সারা দেশকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই অগ্নিকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণ হলো সারা দেশের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা কত দুর্বল। তাই সারা দেশের সব কেপিআইয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিতে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ, ইলেকট্রিক বিশেষজ্ঞ, কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞ যুক্ত করতে হবে। যেসব জিনিস পুড়ে ছাই হয়েছে সেগুলোর ফরেনসিক টেস্ট করতে হবে। এর মাধ্যমেই বোঝা যাবে সেখানে কোনো বারুদ, অস্বাভাবিক গান পাউডার বা ডেটোনেটর ছিল কিনা। একটি ক্লু পেলেই প্রমাণিত হবে যে এটি নাশকতা। তিনি বলেন, দুর্বলতা যে কতটুকু ছিল তা একজন ফায়ার সার্ভিসকর্মীর মারা যাওয়ার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়েছে। সচিবালয়ে পানি ছিল না। এটা হতে পারে না। কেপিআইয়ের ভেতর কেন ওয়াটার রিজার্ভার থাকবে না? বাইরে থেকে কেন পানি আনতে হবে? তিনি বলেন, যখন ফায়ার সার্ভিস কাজ করে তখন ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব ওই এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া। কেন রাস্তার গাড়ি বন্ধ করা হলো না? কেন একটি দ্রুতগামী ট্রাক এসে ফায়ার ফাইটারকে চাপা দিয়ে পিষে ফেলল? এসবের জন্য কারা দায়ী? তিনি বলেন, কেপিআইয়ের অবশ্যই সেফটি প্ল্যান থাকতে হবে। সেফটি প্ল্যানের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান যুগান্তরকে বলেন, কেপিআইর মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলেও সচিবালয়ে সেটি দেখা যায়নি। এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ছিল একেবারে দুর্বল। যা কোনোভাবেই প্রত্যাশা করা যায় না। তিনি বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই অ্যালার্ম বেজে উঠার কথা। কিন্তু সেখানে কোনো অ্যালার্ম বাজেনি। আগুন লেগেছে দুদিক থেকে। যখন লাগুন লেগেছে তখন সেখানে লাইট, ফ্যান, এসি, দরজা-জানালা সব বন্ধ থাকার কথা। আগুন লেগেছে অনেক আগেই। ভেতর থেকে কেউ দেখেনি। যখন বাইরে থেকে আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছিল বাইরের লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনে অনেকের অবহেলার বিষয়টি দৃশ্যমান। এসব কারণে নাশকতার প্রসঙ্গ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
আলী আহমেদ খান বলেন, ঘটনাস্থলের খুব কাছেই ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর। আবার সচিবালয়ের ভেতরেও ফায়ার স্টেশন আছে। তাহলে কেন দ্রুত সময়ে আগুন নেভানো গেল না। সচিবালয়ের সব পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা আছে, সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও দেখভালের জন্য নিজস্ব জনবল আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করেন। আগুন লাগার সময় তারা সবাই কি একসঙ্গে ঘুমাচ্ছিলেন? যারা এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করা উচিত। তিনি বলেন, আমার সময়ে সচিবালয়ের গেট দিয়ে বড় গাড়ি ঢোকার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি বলেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পাত্তা দেওয়া হয়নি। এতে সবার গাফিলতি আছে। কারও জবাবদিহিতা না থাকায় এভাবে যাচ্ছেতাই ভাবে চলছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (অপারেশন্স) মেজর (অব.) একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, আগুন নির্বাপণে ১০ ঘণ্টা সময় নেওয়া কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারে না। ফায়ার সার্ভিসের কোনো দায় আছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি বলেন, অনেক পয়েন্ট বিশ্লেষণ করলে নাশকতার বিষয়টি স্পষ্ট হবে। যেসব মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ, সেসব জায়গাতেই আগুন লেগেছে। অন্য ভবনগুলোতে আগুন লাগেনি। এছাড়া মঙ্গলবার বড়দিনের ছুটি হওয়ায় সেখানে অফিশিয়াল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। রাত দেড়টায় আগুন লেগেছে। সচিবালয়ের ভেতরে বাইরের মানুষের প্রবেশের সুযোগ নেই। এর মধ্যে একটা পক্ষের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম চলছে। তদন্ত কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে তারা অভিজ্ঞতা ছাড়া কিভাবে আগুনের মোটিভ-নাশকতা শনাক্ত করবেন? ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ, তাদেরকেই আবার কমিটিতে রাখা হয়েছে। এর চেয়ে বরং ফায়ার সার্ভিসের সাবেক অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি একাডেমিক বিশেষজ্ঞদের রাখা হলে প্রকৃত তদন্ত হতো। শাকিল নেওয়াজ বলেন, যেসব কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে সেসব কারণ এখানে নেই। প্রথমত, বজপাত হলে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। যেহেতু বজ পাত হয়নি তাই এটির আশঙ্কা নেই। দ্বিতীয়ত, দুর্বল জিনিসপত্র লাগালে শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। যেহেতু সচিবালয় একটি কেপিআইভুক্ত এলাকা, তাই এখানে দুর্বল জিনিসপত্র লাগানোর সুযোগ থাকে না। আর দুর্ঘটনা ঘটলে এক জায়গা থেকে ঘটতে পারে। একই সঙ্গে দু-তিন জায়গা থেকে আগুনের সূত্রপাত অবশ্যই ভিন্ন আলামত দেয়। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এখানে নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক পরিচালক বলেন, এই ভবনে ছিল এলজিআরডি, যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়গুলোর বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তাই যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, আলামত গায়েবের জন্য তাদের যোগসাজশে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। তিনি বলেন, ভবনে যেসব ফায়ার হোজ (আগুন নেভানোর যন্ত্র) ছিল সেগুলোর মাথাগুলো কাটা ছিল। যে কারণে ওই যন্ত্রগুলো ব্যবহার করা যায়নি। ভবনে কোনো অ্যালার্ম সিস্টেম ছিল না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং ফায়ার সার্ভিস ডিজির বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তারা বললেন, আগুন লেগেছে রাত ১টা ৫২ মিনিটে। আর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১টা ৫৪ মিনিটে।’ ২ মিনিটে কীভাবে আগুন ছয়তলা থেকে নয়তলা পর্যন্ত উঠে গেল?
অগ্নিবিশেষজ্ঞ একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, যে ভবনে আগুন লেগেছে সেই ভবনের এক মাথা থেকে অপর মাথার দূরত্ব প্রায় ৪০০ ফুট। একই সঙ্গে ভবনের দুই প্রান্তে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়? আর সময়টা ছিল মিডনাইট, দিনটা ছিল ছুটির। ওই সময় সেখানে কোনো লোকজন থাকার কথা নয়। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারাই যদি তদন্ত করেন তাহলে ফলাফল কী হবে সেটা স্বভাবিকভাবেই অনুমান করা যায়। বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।
সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডে রিমোট কন্ট্রোল বা গান পাউডার ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা-এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাকিল নেওয়াজ বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং ফায়ার ডিজির বক্তব্য অনুযায়ী ২ মিনিটির মধ্যেই আগুন চারটি ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। যদি এটি সত্য হয় তাহলে গানপাউডার ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তাদের লোকজন কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এখনো আছে। পলকের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আছে। তার লোকজন কী ওই মন্ত্রণালয়ে নেই? আগুন লাগার একদিন আগে একটি পক্ষ ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। এ বিষয়টিকেও গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণির নেতৃত্বে গঠিত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন-আইজিপি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক তানভীর মনজুর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রাসেল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইয়াছির আরাফাত খান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইয়াসির আরাফাত খান। অপরদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে গঠিত ছয়টি কমিটিও তাদের কাজ শুরু করেছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধের মধ্যেই কমিটিগুলো আলাদাভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে। তবে তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথাই বলেননি।
বুধবার রাত আড়াইটার দিকে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের ১০ ঘণ্টায় চেষ্টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়। আগুনে ষষ্ঠ থেকে নবমতলা পর্যন্ত চারটি ফ্লোরের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন নেভাতে গিয়ে পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া) শাহজাহান শিকদার যুগান্তরকে বলেন, স্বভাবিক আগুন হলে আমরা সাধারণত অগ্নিনির্বাপণের পরপরই অগ্নিকাণ্ডের প্রাথমিক কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করি। এটা যেহেতু অত্যন্ত সেনসেটিভ আগুন, তাই তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ নিয়ে কিছু বলা যাবে না। তিনি বলেন, আগুন লেগেছে অনেক আগে। আমরা খবর পেয়েছি অনেক পর। তবে খবর পাওয়ার ২ মিনিট পরই আমরা ঘটাস্থলে যাই। কেন ভবনের দুই প্রান্তে একসঙ্গে আগুন জ্বলতে দেখা গেল সেটিও তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।
শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর শুক্রবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনো কোনো আপডেট নেই। এ পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। তবে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় ফায়ার ফাইটার নিহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্থানীয় সরকার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে খালি জায়গা খুঁজে বের করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অস্থায়ীভাবে আপাতত সেসব জায়গা থেকে কার্যক্রম পরিচালিত হবে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নথি অনলাইনে থাকায় সেগুলো পাওয়া যাবে জানিয়ে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পুড়ে যাওয়া নথিগুলো কতখানি পাওয়া যাবে সেগুলো তদন্ত করলে জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, সাবেক মুখ্য সচিব তোফাজ্জলের পিরোজপুরের একটি প্রকল্পে অর্থ লোপাটের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছিল। সেই নথিগুলো পুড়ে গেছে। তবে পিরোজপুর থেকে আবারও সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।