জাইকার অনুদানে প্রশিক্ষণ প্রকল্প
প্রশ্নবিদ্ধ ১২ খাতের ব্যয় প্রস্তাব
আপত্তিতে কমছে পরামর্শক ও বিদেশ সফরসহ অন্যান্য খরচ
প্রশ্নের মুখে পড়েছে ছোট্ট একটি প্রকল্পের ১২ খাতের ব্যয় প্রস্তাব। যে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৩১ কোটি টাকার অনুদান সহায়তা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। অথচ প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়ার আগেই এর বিভিন্ন খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় দেখানোর চিত্র ধরা পড়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম ধাপের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে এমন ব্যয় প্রস্তাব।
‘আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন ও নতুন উদ্ভাবনী সক্ষমতা বাড়াতে আইটি ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং জাইকার অনুদান থেকে ২৩ কোটি টাকা ব্যয় করার কথা। প্রস্তাবটি নিয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভা। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) রেহানা পারভীন। সেখানেই এসব ব্যয়ের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ বিষয়ে কথা হয় প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) আব্দুর রউফের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় বিভিন্ন ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলেছি অনুদানের টাকা বলে যেনতেনভাবে ব্যয় করা যাবে না। শুধু প্রশিক্ষণ খাতের প্রস্তাবিত ব্যয় ঠিক রেখে অন্যান্য খাতের অনেক ব্যয় কমাতে হবে। আমরা চাই, সত্যিকার অর্থেই যেন দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কত কমানো হয়েছে সেটি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। এখন দেখি মন্ত্রণালয় কতটা যৌক্তিকভাবে ব্যয় প্রাক্কলন করতে পারে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হলো-৩০টি স্থানীয় প্রশিক্ষণ আয়োজন, ৫টি প্রশিক্ষণ, স্টাডি ট্যুর, মিটিংয়ের আয়োজন, বৈদেশিক ভ্রমণ, ১০ জন কনসালটেন্ট বা এক্সপার্টস নিয়োগ এবং ১০টি কম্পিউটার অ্যান্ড এক্সেসরিজ কেনা।
এসপিইসি সভায় অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় অফিস রুম সাজানোর জন্য ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়। কিন্তু প্রকল্পের অফিস রুমের অবস্থান এবং এসব খাতের ব্যয় প্রাক্কলনের যৌক্তিকতা নিয়ে সভায় প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। পাশাপাশি এসব খাতে ব্যয় কমানোর জন্য সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে ১০ জন পরামর্শক বা এক্সপার্ট বাবদ ৩ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। পরামর্শকের সংখ্যা, জনমাস এবং কর্মপরিধি ইত্যাদি নিয়ে সভায় প্রশ্ন তোলা হয়। এ খাতের ব্যয়ও কমাতে বলা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২টি যানবাহন ভাড়ায় ব্যবহারের জন্য এক কোটি ৪৬ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এছাড়া ১৩টি আসবাবপত্র কেনার জন্য ৯ লাখ ৩৯ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়। স্থানীয় প্রশিক্ষণ খাতে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। প্রশিক্ষণের সংখ্যা, প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু এবং প্রাক্কলিত ব্যয়ের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় এসপিইসি সভায়। এক্ষেত্রে প্রকল্পে প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে অন্যান্য খাতে ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমাতে বলা হয়েছে। আরও আছে, প্রচার ও বিজ্ঞাপন খাতে থোক হিসাবে ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। যন্ত্রপাতি ও মেরামত খাতে ৭ লাখ টাকা, কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট খাতে ৯ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত টিএপিপিতে মিড টার্ম এবং ফাইনাল রিভিউ এবং মনিটরিং খাতে ৯০ লাখ টাকা, অডিও ভিডিও এবং ফিল্ম প্রডাকশন খাতে ৮০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রিন্টিং ও বাইন্ডিং খাতে ৪৪ লাখ টাকা, সার্ভে খাতে ৫০ লাখ টাকা, কম্পিউটার মেরামত খাতে ৭ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এসব খাতের ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে এসপিইসি সভায়।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মানবসম্পদ উন্নয়ন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) অন্যতম কাজ। আইটিভিত্তিক মানবসম্পদ উন্নয়ন, আইটি শিল্পের রপ্তানিমুখী উন্নয়ন এবং নাগরিকবান্ধব আইটি প্রযুক্তির ব্যবহার আইসিটি বিভাগের জন্য প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া প্রকল্পটি আইসিটি শিল্পের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে উদ্দেশ্যগুলো অর্জনে সহায়তা করবে। বিশ্ববাজারে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এবং এর সঙ্গে যুক্ত গ্র্যাজুয়েটদের ব্র্যান্ড ইমেজ বৃদ্ধি পাবে। আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির ইঞ্জিনিয়ারদের জাপানের সহায়তায় কাটিং এজ টেকনোলজির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম তৈরি এবং আইটি বা আইটিইএস খাতে উচ্চ রপ্তানি আয়ের জন্য এ প্রকল্পটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এটি বাস্তবায়িত হলে আইসিটি শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য শিল্প এবং গবেষকদের মধ্যে সেতুবন্ধ স্থাপিত হবে। আইসিটি শিল্পের উন্নয়নে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির একটি কাঠামো তৈরি হবে। এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, আইসিটি শিল্পের উন্নয়ন ও নতুন উদ্ভাবনী সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আইটি ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা উন্নয়ন কারিগরি সহায়তা প্রকল্পটি আইসিটি খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য আইসিটি পেশায় দক্ষতা তৈরি করবে। পাশাপাশি আইসিটি পণ্য ও পরিষেবার মান উন্নতকরণ, দেশে কম্পিউটারাইজেশন এবং অটোমেশনে সহায়তা দেওয়া হবে। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।