Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

চাঁদপুরে সাত খুনের মাস্টারমাইন্ড রিমান্ডে

ঘুমের ওষুধ খাইয়ে সবার গলা কেটেছিল ইরফান

বেতন-ভাতা না পাওয়া এবং জাহাজের মাস্টারের দুর্ব্যবহারের জের * ঘাতকের রক্তমাখা জিন্সের প্যান্ট, মোবাইল ফোন ও ঘুমের ওষুধের খালি পাতাসহ অন্য আলামত উদ্ধার

Icon

কুমিল্লা ব্যুরো ও চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘুমের ওষুধ খাইয়ে সবার গলা কেটেছিল ইরফান

ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরে জাহাজে সাত খুন রহস্যের জট খুলেছে। ডাকাত নয়, ওই জাহাজে থাকা আকাশ মণ্ডল ইরফানই এই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা। জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া ৮ মাস ধরে তাকে বেতন-ভাতা দেননি। তার ওপর ইরফানের সঙ্গে তিনি দুর্ব্যবহার করতেন। এ নিয়ে তার মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। এর জের ধরেই ঘটনার দিন ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রথমে তার গলা কাটে ইরফান। পরে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে অন্যদেরও একে একে গলা কেটে হত্যা করে। সাত খুনের এই মাস্টারমাইন্ডকে মঙ্গলবার রাতে বাগেরহাটের চিতলমারী থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। পরে তাকে চাঁদপুর নিয়ে আসা হয়। বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। কুমিল্লা কার্যালয়ে বুধবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ এর উপ-অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন জানান, ইরফানের রক্তমাখা জিন্সের প্যান্ট, মোবাইল ফোন ও ঘুমের ওষুধের খালি পাতাসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে তার কোনো সহযোগী ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, গোয়েন্দা তৎপরতা ও টেকনোলজি ব্যবহার করে ইরফানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাড়ি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলায়। বাবার নাম জগদীশ মণ্ডল। তিনি ৮ মাস ধরে এমভি আল বাখেরা জাহাজে চাকরি করছিলেন।

মেজর সাকিব বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর ইরফান তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কিনে রাখেন। ঘটনার দিন (২২ ডিসেম্বর) রাতে তরকারির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সবাইকে অচেতন করেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে মাস্টারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেন। পরে অন্যরা টের পেয়ে যেতে পারে-এমন আশঙ্কায় সে একে একে ছয়জনকে হত্যা করেন।

তিনি আরও বলেন, ইরফানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের পর সে নিজেই জাহাজ চালিয়ে মাঝিরচরে পৌঁছায়। পরদিন সকালে ট্রলারে পালিয়ে যান এবং বাগেরহাটের চিতলমারীতে আত্মগোপন করেন। বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নৌপুলিশের পুলিশ পরিদর্শক মো. কালাম খান আসামির ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মুহাম্মদ ফারহান সাদিক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর শরীফ মাহমুদ সায়েম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাহাজটিতে পাইলট ছিলের না। এমনকি অ্যাসকর্ট, সিসি ক্যামেরা, ভিএইচএফ যন্ত্রপাতিও ছিল না। সেক্ষেত্রে জাহাজটি কিভাবে এতদিন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নদীতে চলাচল করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এজন্য কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দুষছেন অনেকে।

হাইমচর থানায় মামলা : এদিকে মঙ্গলবার রাতে সার বহনকারী এমভি আল বাখেরা জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১০ জনকে আসামি করে হাইমচর থানায় মামলা হয়েছে। জাহাজ মালিকদের পক্ষে মো. মাহাবুব মোর্শেদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মাহবুব মোরশেদের বাড়ি ঢাকার দোহারে।

চাঁদপুরের নৌপুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, মামলায় খুন ও ডাকাতির অভিযোগ এনে তা চাঁদপুর সদরের হরিণাঘাট নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই জাহাজটি থেকে একটি রক্তাক্ত চাইনিজ কুড়াল, একটি চাকু, দুটি স্মার্টফোন, দুটি বাটন ফোন, একটি মানিব্যাগ ও নগদ ৮ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সোমবার চাঁদপুরের হাইমচরের মাঝেরচরে মেঘনা নদীতে সারবাহী জাহাজ থেকে সাত শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গুরুতর আহত একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা তদন্তে শিল্প মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

চাঁদপুরের নৌপুলিশ সুপার বলেন, খুন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন-মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সী, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিন ও বাবুর্চি রানা কাজী। এ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি সুকানি জুয়েল।

ঢাকায় নৌযান শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ : জাহাজে সাত শ্রমিক হত্যার বিচার দাবিতে বুধবার সকালে রাজধানীর সদরঘাটে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী দল। নৌযান শ্রমিক কর্মচারী দলের সভাপতি মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শিমুল বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক ও নৌযান শ্রমিক কর্মচারী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সুমন ভূঁইয়া প্রমুখ।

নড়াইলের দুজনের দাফন : নড়াইল প্রতিনিধি জানান, এমভি আল বাখেরা জাহাজে সুকানি পদে প্রায় ১২ বছর ধরে কাজ করছিলেন আমিনুর রহমান মুন্সী (৪৮)। সর্বশেষ শুক্রবার গ্রামের বাড়ি থেকে কাজে গিয়েছিলেন তিনি। স্বপ্ন ছিল এবার ছুটিতে বাড়ি ফিরে বোনের উপহার দেওয়া জমিতে নতুন ঘর তোলার। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আর সত্যি হলো না। মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে বাড়িতে ফিরল তার লাশ। মঙ্গলবার রাত ৯টায় নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের উত্তর পাঙ্খারচর গ্রামের বাড়িতে তার লাশ এলে এক শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অপরদিকে, রাত ১০টায় নিহত সালাউদ্দিন ফকিরের (৪০) লাশ একই উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের এগারোনলী গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। পরে রাতেই জানাজা শেষে তাদের লাশ দাফন করা হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম