Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

চাঁদপুরে জাহাজে মিলল রক্তাক্ত সাত লাশ

ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায় হত্যা বলে ধারণা * নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বিক্ষোভ আজ, খুনিদের শাস্তির দাবিতে আলটিমেটাম

Icon

চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চাঁদপুরে জাহাজে মিলল রক্তাক্ত সাত লাশ

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় মেঘনা নদীতে মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের আল বাখেরাহ নামক জাহাজ থেকে সোমবার লাশ উদ্ধার করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা -যুগান্তর

চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে থেমে থাকা একটি জাহাজ থেকে সাতটি রক্তাক্ত লাশ এবং গুরুতর আহত অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। সোমবার বিকালে হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের মাঝের চরে মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের আল বাখেরাহ নামের জাহাজ থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশ। পুলিশের ধারণা, জাহাজে ডাকাতিতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। 

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন আজ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এদিন সব জাহাজে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলোক শাস্তির ব্যবস্থা না করলে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে লাগাতর কর্মবিরতির আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা। হতাহত শ্রমিকদের রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও জানায় নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। 

নিহতরা হলেন-জাহাজের মাস্টার কিবরিয়া, ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন, সুকানি আমিনুল মুন্সি, গ্রিজার সজিবুল, আজিজুল ও মাজেদুল ইসলাম। আরেকজনের নাম জানা যায়নি। আহত ব্যক্তির নাম জুয়েল। তাদের সবার বাড়ি নড়াইল জেলায়।

মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের অপর জাহাজ মুগনি-৩-এর মাস্টার বাচ্চু মিয়া ও গ্রিজার মো. মাসুদ জানান, সার বহনকারী আল বাখেরাহ রোববার সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসে। সোমবার কোম্পানির মালিক শিপন বাখেরাহ জাহাজে ফোন করে কাউকে পাননি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় মুগনি জাহাজ থেকে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়। ওই সময় মুগনি জাহাজটি মাওয়া থেকে ঘটনাস্থল দিয়ে অতিক্রম করার সময় বাখেরাহ জাহাজটি দেখতে পায়। তারা জাহাজের লোকদের রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯-এ কল দেয়। পরে চাঁদপুর থেকে কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশ এসে পাঁচজনের লাশ পায়। তিনজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত জুয়েলের গলা ও শ্বাসনালি কাটা ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর সজিবুল ও মাজেদুলকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তাদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নৌপুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, জাহাজে ডাকাতি করতে বাধা দেওয়ায় তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি বলেন, আহত ব্যক্তি হাতের ইশারায় জানিয়েছেন তারা ৮ জন ছিলেন। ঘটনাটি কীভাবে হয়েছে, এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। ডাকাতি কিংবা অন্য কোনো কারণে হতে পারে। তদন্তের পর জানা যাবে। জেলা প্রশাসক বলেন, নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ে কথা বলেছি। কারণ, এই রুটে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে।

ডাকাতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ডেমরায় মানববন্ধন : ডেমরা (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বালুবাহী বাল্কহেডে ডাকাতি ও অবৈধ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ডেমরায় মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন সারুলিয়া ঘাট শাখা। সোমবার দুপুরে সারুলিয়া শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন নেতা মো. শামীমের সভাপতিত্বে ও ওই সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হান চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ পান্না, রুবেল আহম্মেদ, মো. জহির, সোহাগ, মিরাজ প্রমুখ।

ঢামেক হাসপাতালে আহত জুয়েল : আহত জুয়েল রানাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার রাত ৯টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তিনি জাহাজটির সুগানি হিসাবে কর্মরত ছিলেন। জুয়েলের বাড়ি ফরিদপুরের সদর উপজেলায়। বাবার নাম সেকেন খালাসি। বর্তমানে ঢামেকর নাক-কান-গলা বিভাগের ৩০৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন তিনি। বিভাগটির মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজ সালেক বলেন, আহত ওই যুবকের শ্বাসনালি কেটে গেছে। প্রাথমিকভাবে তার শরীরে আর্টিফিশিয়াল একটি টিউব বসানো হয়েছে। এ মুহূর্তে তাকে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। আহতের ভাই লিটন খালাসি বলেন, তার ভাই ওই জাহাজে চার বছর ধরে সুগানি হিসাবে কর্মরত রয়েছে।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম