গণমাধ্যম সংস্কারে সিজিএস সংলাপে বক্তারা
৩২টি আইন স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায় হিসাবে ৩২টি কালো আইন দেশে বিদ্যমান রয়েছে। এসব আইন বাতিল করে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের জন্য ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ এবং ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করতে হবে। তাছাড়া গোষ্ঠীগত স্বার্থে গণমাধ্যমকে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সাংবাদিকতার নামে রাজনীতি করা চলবে না। সাংবাদিক ইউনিয়নের নামে রাজনীতিকরণ বন্ধ করতে হবে। রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ : গণমাধ্যম প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে ধারাবাহিকভাবে এমন সংলাপের আয়োজন করছে।
সংলাপে আলোচক ছিলেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) চেয়ার মুনিরা খান, সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান, দৈনিক মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এমএ আজিজ, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, ডিজিটালি রাইট বিডির প্রতিষ্ঠাতা মিরাজ আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাধিকতা বিভাগের প্রফেসর ড. এসএম শামীম রেজা, এএফপির ফ্যাক্ট চেক এডিটর কদরুদ্দীন শিশির, দ্য ডেইলি স্টারের সিনিয়র সাংবাদিক জায়মা ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, এনএইচকে টেলিভিশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি পারভিন এফ চৌধুরী ও নাগরিক কমিটির সদস্য তুহিন খান।
সংলাপের শুরুতে জিল্লুর রহমান বলেন, সংস্কার বহুল আলোচিত বিষয়। ১৯৭১-এর পর থেকেই আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক হওয়ার। কিন্তু আমরা বারবার হোঁচট খেয়েছি। দোষটা আমরা সাধারণত সরকারকে দিয়ে থাকি। কিন্তু সরকার একাই এমন করতে পারে না। তাকে সাহায্য করার অনেক মানুষ থাকে। ১৯৬৯-এর পরে একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়। ২০০৭-০৮ এ আবার সংস্কারের কথা উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু তা ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়। ২০২৪-এর পর আবারও সংস্কার বিষয়টি উঠে এসেছে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একসময় বাংলাদেশের গণমাধ্যম খুবই ভালো ছিল, সাংবাদিকরা সাহসিকতার পরিচয় দিত। কিন্তু গত কয়েক বছর সাংবাদিকরা অনেক হয়রানির স্বীকার হয়েছে। গণমাধ্যমকে পাপেট মিডিয়া হিসাবে পরিণত করা হয়েছে। এখন নতুন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু রাতারাতি গণমাধ্যমের পরিবর্তন সম্ভব হয় না।
কামাল আহমেদ বলেন, আমরা ৩২টি আইন পেয়েছি যা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বাঁধা সৃষ্টি করে। প্রেস কাউন্সিল একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে উঠেছে। এটাকে ঠিক করার জন্য আমরা কী কী করতে পারি তা নিয়ে কাজ করছি। আমরা একটি সার্ভে করছি যে, জনগণ কি আমাদের ওপর আস্থা রাখে, না রাখলে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কী করা যেতে পারে। গত ৫৩ বছরের মধ্যে এটি প্রথম সরকারি গণমাধ্যম জরিপ সম্পূর্ণ বাংলাদেশজুড়ে। মিডিয়া মালিকানা নিয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। গণমাধ্যমের মানুষরা যেন তারা তাদের সমস্যা বলতে পারে ও সমাধান দিতে পারে, এটি নিয়ে কাজ করছি। কমিশন সাংবাদিকদের বেতন নিয়ে কাজ করতে পারবে না, তবে কমিশন সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে দিতে পারে। মিডিয়া নিজদের সম্পাদকের মূল্যায়ন করে না। এটি করা দরকার নিজের ভুল ধরার জন্য। সেলফ সেন্সরশিপ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। এটা নিজেকেই তাড়াতে হবে। গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ও ইউনিয়ন বিভাজন অনেক। এটা নিরসন করতে পারলে অনেক সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে। সংস্কারের মাধ্যমে পরিবর্তন হয় না এমন নয়। এটি নির্ভর করে সরকারের ওপর কতটা চাপ দেওয়া যায় সংস্কারের জন্য। গত ১৫ বছরের কন্টেন্ট আলোচনা করে দেখতে হবে। বাইরের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। এজন্য গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে যেন তারা বাহ্যিক হস্তক্ষেপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। সাংবাদিকদের জন্য মিনিমাম বেতন থাকতে হবে, যা দেশব্যাপী হতে হবে। সাংবাদিকরা সাংবাদিকতা করবেন, বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করবেন না। গত সরকার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে, যে চাইবে সেই সাংবাদিকতা করতে পারবে। এমন কিছু সংবাদ মাধ্যম আছে যাদের মিশন হলো আওয়ামী লীগের আদর্শ প্রচার করা। এই সংবাদমাধ্যম এখনো চালু আছে। টেলিভিশন ও পত্রিকার মালিকানা একই ব্যক্তি বাংলাদেশে বহুল দেখা যায়। এতে একচেটিয়া ব্যবসা তৈরি হয়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বচ্ছতা থাকতে হবে যে, তাদের স্বার্থ কী। এর নিশ্চয়তা সম্পাদকরা করবেন। বাংলাদেশের সব পত্রিকা ও টেলিভিশন সম্পাদকরা মিলে আলোচনা করে একটি ভালো সম্পাদকীয় নীতি তৈরি করবেন।
শফিকুল আলম বলেন, সাংবাদিকরা যেন নিজেদের মতো কাজ করতে পারে। মিডিয়া গত ১৫ বছর জনগণের কথা শোনেনি। যার জন্য বলা হয়, কিছু মিডিয়ার হাতে রক্ত আছে। গণমাধ্যম কমিশন করা হয়েছে যেন সাংবাদিকরা তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে জানতে পারে। গণমাধ্যম ব্যর্থ হয়েছে মানবাধিকার রক্ষায়। সাংবাদিকদের সঠিক তথ্য দিতে হবে যেন কারও জীবন নষ্ট না হয়। সাংবাদিকদের যেমন অধিকার আছে, তেমনি জনগণেরও অধিকার আছে। সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ন্যূনতম বেতন সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। সাংবাদিকদের এখানে জোর দিতে হবে। কন্টেন্ট চুরি করা বন্ধ করতে হবে। কঠোর কপিরাইট আইন লাগবে। কন্টেন্ট নিরাপত্তার জন্য কঠোর আইন লাগবে। কন্টেন্ট নিরাপত্তা না থাকার জন্য সাংবাদিকরা বেতন কম পায়। ইউনিয়নগুলোকে শক্তিশালী হতে হবে। নতুন বাংলাদেশে নতুন ইউনিয়ন লাগবে, যারা পূর্বাচলের প্লটের পেছনে ছুটবে না। সাংবাদিকদের জন্য যেন কারও মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয়, সেদিক খেয়াল রাখতে হবে।
আবু সাইয়িদ বলেন, সংবিধানে যা আছে তা বাস্তবে নেই। আমাদের দেশে গণতন্ত্র থাকলে আমাদের এ অবস্থায় আসতে হতো না। এখন সময় এসেছে আমাদের পরিবর্তন আনার। মিডিয়াগুলোকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জবাব আদায় করে নিতে হবে। আমাদের আগামীর দিকে তাকাতে হবে। যদি প্রেস কমিশন করা হয় সেখানে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। সাংবাদিকদের সাহসিকতার সাথে কাজ করতে হবে।
মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সংস্কার শুনলেই ভয় লাগে। সংবাদপত্র বন্ধের কাহিনী আগেও হয়েছে। আমি ভীত এমন আবার হয় কিনা। বর্তমান সরকার আমাদের লিখতে বললেও আমরা পারছি না। সেলফ সেন্সরশিপ আমাদের কাবু করে ফেলেছে। সংস্কার হওয়া উচিত ইতিহাসে। আমাদের দেশে সরকার বদলালে ইতিহাস বদলে যায়। এমন হওয়া যাবে না। লাইসেন্সিংয়ের প্রক্রিয়া আমরা অনেক বড় করে ফেলেছি। পত্রিকাগুলোর উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। অ্যাক্রেডিশন যেই কমিটি নিয়ে করা হয় তারা সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা না করে নিজেরা করে থাকে। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে হবে।
এমএ আজিজ বলেন, সাংবাদিকতার আগে গণতন্ত্র দরকার। আমরা স্বাধীন হওয়ার পর থেকে গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। সংবাদপত্র রিলেটেড প্রতিষ্ঠানগুলোকে একত্রিত করা দরকার। ক্রস চেকের মাধ্যমে সাংবাদিকতা করতে হবে। আগে ইউনিয়ন প্রেসার গ্রুপ হিসাবে কাজ করত সরকারের উপর, এখন এমন নেই। অস্বচ্ছ সাংবাদিকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। গণতান্ত্রিক চর্চার ওপর আস্থা আনতে হবে। গণমাধ্যমকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে।
আবু সাঈদ খান বলেন, পরিবর্তন দরকার। কিন্তু তা কে করবে? অতীতে সাংবাদিকরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু ’৯০-এর পর তা পরিবর্তন হয়ে গেছে। যে সরকার ক্ষমতায় আসে সংবাদপত্রগুলো তার জন্য কাজ করে থাকে। এখানে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। সাংবাদিকরা এখানেই স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে। সাংবাদিকরা দলীয় আদর্শ পালন করা শুরু করে দিয়েছে। সাংবাদিকদের যে প্রতিবাদের কণ্ঠ থাকার দরকার তা তারা হারিয়ে ফেলছে। সরকারের সংবাদপত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ দূর হবে। গণমাধ্যমের কালো আইন বাতিল করতে হবে। রাজনৈতিক সরকার এলে এই আইনগুলো বাতিল হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এটি বর্তমান সরকারকে তাড়াতাড়ি করতে হবে। প্রেস কাউন্সিলকে ঢেলে সাজাতে হবে। সরকার বড় জোর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে নীতিমালা তৈরি করতে পারে।
মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ছোট সাংবাদিকতার উদ্যোগগুলোর ওপর নজর দিতে হবে। ব্যক্তি সাংবাদিকদের উৎসাহিত করতে হবে। প্রেস কাউন্সিলকে দক্ষ হতে হবে এবং সিটিং কোনো বিচারপতি এখানে থাকবে, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নয়। প্রেস কাউন্সিলকে সিভিল আদালত হিসাবে তৈরি করতে হবে। নতুন যারা এই গণমাধ্যম শিল্পে আসতে চায়, তাদের সুযোগ করে দিতে হবে।
মুনিরা খান বলেন, মিডিয়াতে যারা কাজ করে তারা অনেক মূল্যবান দায়িত্ব পালন করে। সবাই যে টাকার জন্য কাজ করে, এমন নয়। এখানে স্বচ্ছতা আনতে হবে।
মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব কাঠামো ঠিক করতে হবে। গণমাধ্যমে কিছুটা প্রতিযোগিতা থাকা উচিত। সরকারকে শ্রমিক আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে, যেন সব সাংবাদিক তাদের ন্যায্য বেতন পায়। সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক আইন ঠিক করতে হবে। এডিটরিয়াল স্বচ্ছতা থাকতে হবে। প্রেস কাউন্সিলের উচিত যেসব সংবাদপত্র ভুয়া তথ্য প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। করপোরেট বিনিয়োগ থাকবে কিন্তু নতুন বিনিয়োগ আনার জন্যও চিন্তা করতে হবে। এতে প্রতিযোগিতা থাকবে। ভালো বিনিয়োগ এলে ভালো সাংবাদিক আসবে। তারা এই সাংবাদিকতা শিল্প ছেড়ে চলে যাবে না।
ড. এসএম শামীম রেজা বলেন, সংবাদপত্র একটি বাণিজ্য ও একই সঙ্গে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে থাকে। এখানে ভারসাম্য আনতে হবে। জনগণ গণমাধ্যমের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। জনগণ কতটুকু গণমাধ্যমকে ভরসা করে তা নিয়ে প্রতিবেদন করতে হবে। সাংবাদিকদের সাংবাদিকতার সার্টিফিকেট থাকতে হবে। মুদ্রিত আকারে নীতিমালা থাকতে হবে। ফ্যাক্ট চেক থাকতে হবে। ফ্যাক্ট চেক সহজীকরণ করতে হবে। সাংবাদিকতার মান উন্নত করতে হবে। সাংবাদিকতার ক্রিমিনালাইজেশন কমাতে হবে। স্থানীয় সাংবাদিকদের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রেস কাউন্সিলের কোয়াজি জুডিশিয়াল ব্যাপ্তি বাড়াতে হবে। সাংবাদিকদের চাকরির নিরাপত্তা দিতে হবে ও বেতন সঠিক সময়ে দিতে হবে।
কদরুদ্দীন শিশির বলেন, ভুয়া তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়। এটি মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি আছে। যখন প্রমাণ পাওয়া যায় যে কোনো সংবাদপত্র ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি মামলা দেওয়া হলে তা সাংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ হবে কিনা? বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহযোগিতা করছে বা ফ্যাসিবাদীকে ক্ষমতায় রাখার চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলে তা গণমাধ্যম করার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ হবে কিনা?
জায়মা ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে করপোরেট দ্বারা গণমাধ্যম পরিচালিত। এটা সহজে পরিবর্তন হবে না। এটা ঠিক কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু এখানে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স থাকা উচিত। জাতীয় প্রেস ক্লাবকে সংস্কার করা উচিত। প্রেস ক্লাবের সদস্য হবে যোগ্য সাংবাদিকরা। যারা আসলে সাংবাদিকতার জন্য কাজ করতে চায়। প্রেস ক্লাবের কোড অব কন্ডাক্ট তৈরি করতে হবে। প্রেস কাউন্সিলকে বলিষ্ঠ করতে হবে। প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে বোর্ড নির্ধারণ করবে, সরকার নয়। বোর্ডে কারা থাকবে তা অ্যাসোসিয়েশনগুলো ঠিক করবে। অ্যাসোসিয়েশন যদি কোনো টাকা নিয়ে থাকে বড় ব্যবসায়ী থেকে তাদের দুদকের মামলায় আনা উচিত। সাংবাদিকরা বেতন ঠিকমতো পায় না ইউনিয়নগুলো এগুলো কেন দেখছে না? ইউনিয়নগুলোর রাজনীতিকরণ করা যাবে না। সাংবাদিকতার জন্য লাইসেন্সিং রাখা স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধা দেয়। এটি বাদ দিতে হবে। এটি থাকলে সঠিক সাংবাদিকতা করা যায় না।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান মাসুদ কামাল বলেন, সাংবাদিকরা নিয়মিত বেতন পায় না বা সামান্য দেরি হলে খারাপ কথা শুনতে হয়। বাংলাদেশের ৮০% সাংবাদিক ১০,০০০ টাকার কম বেতন পায়। স্থানীয় সাংবাদিকরা বেতনই পায় না। সাংবাদিকরা এখন ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। অভুক্ত একজন সাংবাদিককে যদি বলা হয় তার নীতি নেই, এটা বলা শোভা পায় না। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সঠিক সময়ে বেতন দেয়া হয় না মাসের পর মাস। কেউ এই বিষয়ের ওপর নজর দেয়নি।
জোনায়েদ সাকি বলেন, অধিকার ও কর্তব্যের মাধ্যমেই একজন নাগরিক হয়ে ওঠে। আমরা অধিকারের দিকেই থাকতে চাই। সাংবাদিকতার কিছু নিয়ম থাকা উচিত যে, সে কী করতে পারবে বা করতে পারবে না। নিয়মগুলো মানা হচ্ছে কিনা তা প্রেস কাউন্সিল খেয়াল রাখবে। প্রেস কাউন্সিলের বিচারিক ক্ষমতা থাকতে হবে। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা থাকতে হবে। বিনিয়োগ থাকবেই এবং একসময় সংবাদ ও বিনিয়োগকারীর মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগবেই। এখানে নজর দিতে হবে। সাংবাদিকদের চাকরির নিরাপত্তা দিতে হবে। সংবাদপত্রের মালিকানার পারসেন্টেজ ৫০ পারসেন্টের বেশি থাকবে না। কালো আইন থাকা উচিত নয়। আদালত অবমাননার নামে এখনো অনেক কিছু করা হয় সংবাদমাধ্যমের ওপর। সাংবাদিকরা আদালতের রায় নিয়ে বিতর্ক করতে পারবে কিনা তা নিয়ে পরিষ্কার করে বলতে হবে। পারভিন এফ চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের দায়িত্ব নিতে হবে নিজেদের কাজের জন্য। সাংবাদিকরা নিজেদের মধ্যে খারাপ প্রতিযোগিতা করে থাকে। এটা বন্ধ করতে হবে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। সংবাদমাধ্যমগুলো সংবাদ করে থাকে নিজেদের স্বার্থের জন্য। সাংবাদিকতার জন্য নয়। সেলফ সেন্সরশিপ থাকতে আমরা সাংবাদিকতা থেকে অনেকদূরে সরে গেছি।
তুহিন খান বলেন, আমাদের গণমাধ্যমের যে চরিত্র তৈরি হয়েছে তা হলো, সরকারে যাওয়ার পরও তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। জনগণের জন্য সাংবাদিকতা তারা এখনো করছে না। এই মৌলিক পরিবর্তনটা দরকার। গণমাধ্যমগুলোর শিরোনাম এখনো ক্লিক বেইটের মতো কাজ করছে। কালো আইনগুলো বাতিল হওয়া দরকার। সংবাদ জনবান্ধব হওয়া উচিত। চ্যানেলগুলোর জন্য স্বাধীন সাবস্ক্রিপশন চালু করা দরকার। চ্যানেলের জাতীয়করণ করা উচিত হবে না। গণমাধ্যমে সাংবাদিকতার স্বাধীন অবজেক্টিভ থাকা উচিত।