প্রকাশনা উৎসবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
পুঁজিবাজারে অস্থিরতার দায় নিয়ন্ত্রক-খেলোয়াড়দের
‘আপনারা জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কিনছেন, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। এগুলো কয়েক দিন পরই ওয়েস্ট পেপার হিসাবে ব্যবহার হবে’ * মূল্যস্ফীতি যা হচ্ছে তাই দেখাচ্ছি, কোনো কারচুপি নেই
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, পুঁজিবাজার অস্থিরতার পেছনে খেলোয়াড় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনেক দোষ আছে। তিনি বলেন, আপনারা জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কিনছেন, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। আবার শেয়ার প্রাইস কমে গেলেই আন্দোলন করেন, আমি এর পক্ষে নই।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ব্যাংকিং অ্যালমানাক’ ষষ্ঠ সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ব্যাংকিং অ্যালমানাকের চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ও ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, গ্রন্থটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সৈয়দ জিয়া উদ্দিন আহমেদ, আব্দার রহমান প্রমুখ।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের মতো পুঁজিবাজারের অবস্থাও একই। পুঁজিবাজারের শেয়ার প্রাইস কমে যাচ্ছে বলেই চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে মিছিল হচ্ছে। আমি এ ব্যাপারে অনড় থাকতে বলছি। আপনারা জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কিনছেন, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ এ শেয়ার মহা আনন্দে কিনছেন, যার কোনো ন্যূনতম মূল্য নেই; এগুলো কয়েক দিন পরই ওয়েস্ট পেপার হিসাবে ব্যবহার হবে। এজন্য একটু কষ্ট করতে হবে। আমি বিনিয়োগকারীদের দায়ী করছি না। এখানে পুঁজিবাজারের প্লেয়ার ও রেগুলেটরের অনেক দোষ আছে। আমি মনে করি, এটা প্রচার করা দরকার।
তিনি বলেন, এবারের ব্যাংকিং অ্যালমানাক শুধু ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নয়, বিনিয়োগকারীদেরও কাজে লাগবে। তবে প্রায়ই রপ্তানি, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাব ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তথ্য বিভ্রাটের পেছনে কিছু আছে ভুল হিসাবায়ন, কিছু আছে রাজনীতিবিদদের নেতিবাচক ভূমিকা। আবার নীতিনির্ধারকরাও তথ্য লুকানোর চেষ্টা করেন।
তিনি আরও বলেন, বিবিএসকে বলা হয়েছে তথ্য যা আছে তাই প্রকাশ করতে হবে। এখন কোনো কারচুপির সুযোগ নেই। সঠিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়া কোনো কিছু মূল্যায়ন করা যায় না।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কোনো পাওয়ার দেখাতে আসিনি, একটি দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। অতীতে তথ্য লুকানো হয়েছে। সেগুলো পরিবর্তন ও সংস্কারের চেষ্টা করছি। কারণ দাতা সংস্থাগুলো নানা প্রশ্ন করেন, তারা বোঝাতে চান আগেই কম ছিল ইত্যাদি। এ নিয়ে তাদের বোঝাচ্ছি আগে তথ্য লুকানো ছিল, এখন সঠিকটা উপস্থাপন করছি।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যেন এক স্থান থেকে সব তথ্য পান, সে ব্যবস্থা করছি। তথ্যের জন্য ব্যবসায়ীদের ১০ জায়গায় দৌড়াতে হবে না। যদি সুসংহতভাবে তথ্য ব্যবস্থাপনা করতে না পারি তাহলে সামনে সমস্যা আরও বাড়বে। মিথ্যা তথ্যের প্রয়োজন নেই, কারণ মিথ্যা যন্ত্রণাদায়ক।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, অর্থনীতিতে পাঁচটি বড় চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজ চলছে এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতাও সন্তোষজনক পর্যায়ে। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে অন্য তিনটি অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও বিশেষ সুবিধাভোগী ব্যবসায়িক শ্রেণির (অলিগার্ক) প্রভাব কমানোর ক্ষেত্রেও ২০২৫ সালের মধ্যে ইতিবাচক কিছু দেখা যাবে।
এখন অর্থনীতির চাকা ঘোরানো বা বেগবান করা দরকার, এমন মন্তব্য করে হোসেন জিল্লুর বলেন, অবশ্য এ কাজ শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের নয়, অন্যদেরও সমান দায়িত্ব আছে। বিনিয়োগ থমকে আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ অনেক কিছু করার আছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায় (এসএমই) থেকে তৃণমূল পর্যায়ে কীভাবে আস্থার জায়গা তৈরি করা যায় এবং মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে পরিবারগুলোকে কীভাবে রক্ষা করা যায়, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে অলিগার্কদের বাজার নিয়ন্ত্রণের শক্তি কমানোর ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন হোসেন জিল্লুর।
অর্থ সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, ব্যাংকিং অ্যালমানাক তিনি আগে কখনো দেখেননি, গতকালই (শুক্রবার) প্রথম দেখেছেন। দেখে তার মনে হয়েছে, এটি আমানতকারীদেরও কাজে লাগবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে চেষ্টা করছি।
বইয়ের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংকের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ঠিকঠাক হালনাগাদ তথ্য বইয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন ২০২৪ সালের ডিসেম্বর চললেও বইয়ের তথ্য ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পদ্মা ব্যাংক থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি। অন্যরা দিয়েছে।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ তথ্য রয়েছে ব্যাংকিং অ্যালমানাকে। এতে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য রয়েছে। ব্যাংকের সহযোগিতায় শিক্ষাবিষয়ক সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘শিক্ষাবিচিত্রা’র উদ্যোগে ২০১৬ সাল থেকে এটি প্রকাশিত হচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল, শাখা, পণ্যের তালিকাসহ সবই আছে এ বইয়ে।