এমন কোনো অন্যায় নেই যা আমরা করিনি: আইজিপি
সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পুলিশের আইজি বাহারুল আলম বলেছেন, গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক কুপ্রভাবে পুলিশ যেসব ঘটনা ঘটিয়েছে তা পৃথিবীর কোনো পুলিশ করেনি। এমন কোনো অন্যায় নেই, যা আমরা করিনি। এসব কর্মকাণ্ড পুলিশকে মারাত্মকভাবে হেয় করেছে। পুলিশ এতটা নির্মম হতে পারে তা চিন্তা করতেই লজ্জা হয়। শনিবার দুপুরে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আইজিপি জানান, সারা দেশের বিভিন্ন ইউনিট ঘুরে পুলিশ সদস্যদের মনের কথা জানার চেষ্টা করছেন, তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য কী করা যায় সেই চেষ্টাই তিনি করছেন।
নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রাথমিক তদন্তে যাদের নিরপরাধ মনে হবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আশ্বস্ত করতে হবে যে, তাকে গ্রেফতার করা হবে না। এছাড়া একটি কমিটি করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে, যে কমিটি তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই নিরপরাধ মানুষদের মামলা থেকে বাদ দিতে পারবেন। সকালে সিলেটে এসে আইজিপি বাহারুল আলম এসএমপি সদর দপ্তরে সিলেট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। প্রায় ২ ঘণ্টা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। শুরুতেই পুলিশ রিফর্ম বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, যে বিষয়টি পুলিশ রিফর্ম কমিশন চিন্তা করছে, আমরাও তা চাই-যা হলো রাজনৈতিক কুপ্রভাব যেন আর পুলিশের ওপর না পড়ে। সুপ্রভাব আসতে পারে। কারণ রাজনীতিবিদরাই আমাদের কান্ডারি, তারাই দেশ চালাবেন। গত ১৫ বছর দলীয়ভাবে এত কুপ্রভাব আমাদের ওপর আসে যে, আমরা হেন অন্যায় নেই, যা করিনি। এটা আপনারাও জানেন, আমরাও জানি। এটার জন্য আমরা অত্যন্ত দুঃখিত ও লজ্জিত।
তিনি বলেন, এটা রাজনীতিবিদরা কেন করতে গেলেন, দলীয় কিংবা গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এমন আদেশ দেওয়া হলো যে, মানুষের প্রাণ সংহার করে ফেলবেন? আগে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠাত কিন্তু এভাবে প্রাণে মেরে ফেলবে-এর জবাব আমার কাছে নেই। যে পর্যায়ে পুলিশ চলে গেছে সেখান থেকে উত্তরণ ঘটানোই আমার বড় চ্যালেঞ্জ।
পুলিশের কর্মস্পৃহা ফিরিয়ে আনতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে-এমন প্রশ্নে আইজিপি বলেন, পুলিশ সদস্যদের সহকর্মীরা মারা গেছে, মব জাস্টিস পুলিশের বিরুদ্ধেও হয়েছে এসব বিষয় নিয়ে অত্যন্ত কষ্টের মধ্য দিয়ে মানসিকভাবে তাদের মধ্যে ঝড় বয়ে গেছে। তিনি বলেন, পুলিশ যেহেতু একেবারে সামনের সারিতে ছিল তার ওপর প্রভাব বেশি পড়েছে। পুলিশ যখন দেখেছে তার সহকর্মীকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে আবার কেউ দৌড়ে এসে লাথি মারছে পুলিশকে। কারণ মানুষের ভেতরে এত ঘৃণা জন্মেছে যে তা আর মানুষ নিতে পারছে না। আর পুলিশ এইসব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তাদের কর্মস্পৃহা আর ফিরে পাচ্ছে না। পুলিশের কর্মস্পৃহা ফিরে আনাই বড় চ্যালেঞ্জ। সে কারণেই সারা দেশে পুলিশ সদস্যদের কাছে যাচ্ছি, কথা বলছি, তারা কী ভাবছে, তারা কী চায় সেগুলো শুনে ব্যবস্থা নেওয়াই আমার কাজ।
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, একটা মনভাঙা অবস্থায় পুলিশ রয়েছে, যার যা সক্ষমতা ছিল তাও এখন কাজ করছে না। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বিশ্বাসটা ভেঙে গেছে-যে আমি আবার মানুষের কাছে যাব, কাজ করব। সহকর্মীদের মৃত্যু, তার ওপর আবার দেখেছে-সিনিয়র অফিসাররা হুকুম দিয়ে পালিয়ে গেছে, কোথাও তো একজন এসপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেউ তো মারা যাননি? যারা মারা গেছে তারা ইন্সপেক্টর টু কনস্টেবল তার মানে আমরা অফিসাররা পালিয়ে গেছি পুরো ফোর্সকে অনিরাপদ করে। ৫ আগস্ট ও পরবর্তী সময়ে পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রায় ৬ হাজার অস্ত্র লুট হয়েছে এর মধ্যে দেড় হাজার অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা যায়নি। এসব অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে।