Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বিচারের দাবিতে ফুঁসছে শিক্ষার্থীরা

প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট ছাত্র নিহত

তিন মাতাল গ্রেফতার

Icon

ঢাবি ও রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট ছাত্র নিহত

রাজধানীর পূর্বাচলে বুয়েট শিক্ষার্থী মাসুদ নিহতের ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে শুক্রবার পলাশী মোড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ (ইনসেটে নিহত মোহতাসিম মাসুদ) -যুগান্তর

রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী মোহতাসিম মাসুদ নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতেই এ ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেল আরোহী মুহতাসিম মাসুদকে একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের ছেলের গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নিহত মাসুদের বাবা কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মিয়া বাদী হয়ে সড়ক ও পরিবহণ আইনে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে মুবিন আল মামুন (২০), তার বন্ধু মিরপুর মিরেরবাগের বাসিন্দা রিজওয়ানুল করিমের ছেলে মিরাজুল করিম (২২) ও উত্তরা ১৩নং সেক্টরের বাহাউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আসিফ চৌধুরীকে (২২) আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় তাদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। গ্রেফতার তিনজনই শিক্ষার্থী। গ্রেফতারের পর নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে তিন আসামির ডোপ টেস্ট (মাদক পরীক্ষা) করা হয়। গাড়ি চালানোর সময় তারা মদ্যপান অবস্থায় ছিলেন। পরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় নিহতের পিতা মাসুদ মিয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেফতাররা মদ্যপানে মাতাল ছিল।

মোহতাসিম মাসুদ বুয়েটের সিএসই (২০২১) ব্যাচের ছাত্র। তার মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার দুপুরে পলাশী মোড়ে সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তদের বিচারসহ ৬ দফা দাবি পেশ করেন তারা। 

সহপাঠী নিহত হওয়ার ঘটনায় শুক্রবার সকাল থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট ক্যাম্পাস। বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারসহ ৬ দফা দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, এখন পর্যন্ত এ ঘটনার বিবরণ সম্পর্কে আমরা মাসুদের সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেল আরোহী অমিতের কাছ থেকে যা জানতে পেরেছি তা হলো, পুলিশের সংকেত পেয়ে তারা থেমে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছিল। আমরা সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছি এ ঘটনায় অভিযুক্ত চালক মদ্যপান অবস্থায় ছিলেন এবং বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আমরা এ ঘটনায় গভীরভাবে শোক জ্ঞাপন করছি। নিহতের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার সুষ্ঠু ও অতিসত্বর বিচার দাবি করছি। যেকোনো মূল্যে ক্ষমতার বিপরীতে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা চাই।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, এই আকস্মিক হত্যাকাণ্ডের শোকে আমরা যখন হতবিহ্বল ঠিক তখনই জানতে পারি যে, অভিযুক্ত গাড়িচালকের বাবা একজন প্রভাবশালী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। তার কারণে আমাদের এক ভাইকে প্রাণ দিতে হলো। আমাদের আরও দুই ভাই যখন মারাত্মকভাবে আহত, হাসপাতালের বিছানায় মারাত্মক যন্ত্রণায় কাতর, ঠিক তখন গাড়িচালকের ক্ষমতাশালী আত্মীয়রা মামলার মোড় ঘোরাতে এমনকি যাতে মামলা না নেওয়া হয়, তার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত। অতীতেও আমরা দেখেছি, অপরাধী যদি প্রভাবশালী হয় তাহলে বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে ভিকটিমের পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধামকি দিয়ে মামলা না করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। প্রাথমিকভাবে মামলা হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন ধাপে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব খাটায়। কিংবা আরও নানাভাবে ছাড় পেয়ে যায়। এটা আমরা হতে দিতে পারি না। 

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-যেকোনো মূল্যে এই হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার অবশ্যই বিবাদী-পক্ষকে বহন করা, নিহত মাসুদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানে বিবাদীপক্ষকে বাধ্য করা, তদন্ত কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আহতদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ব্যাপারে বুয়েট কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আর কারও প্রাণ যেন না যায় এবং সড়কে নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয় সে ব্যাপারে যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখতে সরকারের কাছে দাবি জানান বুয়েট শিক্ষার্থীরা। 

এদিকে, ময়নাতদন্তের পর বুয়েট ক্যাম্পাসে শুক্রবার বিকালে জানাজা শেষে মোহতাসিম মাসুদকে শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম