সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী পাচ্ছেন মহার্ঘ ভাতা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মহার্ঘ ভাতার হার নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়াকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে অর্থ বিভাগ। কমিটিতে অর্থ সচিব, লেজিসলেটিভ সচিব, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং জনপ্রশাসন সচিবকে সদস্য হিসাবে রাখা হয়েছে। মহার্ঘ ভাতা প্রদান সংক্রান্ত কমিটি গঠন ও বঞ্চনা নিরসন কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে রোববার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এ সব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, একটি পে-কমিশন গঠন সময়সাপেক্ষ বিষয়। তাই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সর্বস্তরের কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হবে। কর্মরতদের পাশাপাশি অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এবার মহার্ঘ ভাতার সুবিধা পাবেন। কত শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করতেই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর আওতাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘মহার্ঘ ভাতা’র সংস্থান পর্যালোচনা করে সুপারিশ পেশ করবে। মোখলেস উর রহমান বলেন, আগামী সপ্তাহে কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। সেখানে মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়নে একটি কৌশল এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপরে-নিচে ভাতার হার ঠিক করে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আলাদা স্ল্যাব ঠিক করা হবে। তিনি আরও বলেন, তবে আমরা সুপারিশ করব কিন্তু সিদ্ধান্তু নেবে সরকার।
সিনিয়র সচিব আরও বলেন, এবার যাতে মহার্ঘ ভাতা সুবিধা অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও পায় সে ব্যাপারে সরকার একমত। অবসরে যাওয়া কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন তিনি। সিনিয়র সচিব আরও বলেন, মহার্ঘ ভাতা যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেওয়া যায় তা নিয়েই কাজ চলছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে অল্প সময়ের মধ্যে সরকারকে সাজেশন দেওয়া, যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারে। এটা যত তাড়াতাড়ি করা যায় তত ভালো। একেবারে পিয়ন থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতা সুবিধা পাবেন। তবে মহার্ঘ ভাতার স্ল্যাব (স্তর) দুটো হতে পারে। একটা অফিসারদের জন্য একটু কম এবং আরেকটি স্টাফদের জন্য একটু বেশি, যাতে ব্যালেন্সিং হয়। একটা হবে পেনশনারদের জন্য।
অর্থ বিভাগের জারি করা আদেশে আরও বলা হয়, সরকারি কাজে নিয়োজিত জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-এর আওতাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা সংস্থানের বিষয়টি পর্যালোচনা করে সুপারিশ করার জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, মহার্ঘ ভাতার প্রযোজ্যতা ও প্রাপ্যতার বিষয় পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ দাখিল করবে কমিটি। প্রয়োজনে এক বা একাধিক কর্মকর্তাকে আত্তীকরণ করতে পারবে। সাধারণত ৫ বছর অন্তর একটি নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করার কথা। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুলাইয়ে অষ্টম বেতন স্কেল কার্যকর হয়। সে সময় নতুন স্কেলের সুপারিশ না করলেও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে বার্ষিক বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) প্রস্তাব ছিল বেতন কমিশনের। তা আগের সরকার বাস্তবায়ন করেনি। ২০২৩ সালের জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত প্রতি বছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পান। এদিকে বাড়তি মূল্যস্ফীতিতে বেতন বাড়াতে নতুন পে-স্কেল ঘোষণাসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়ে আসছিলেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তর, করপোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ কর্মচারী কর্মরত। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তাদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। বাজেটে মহার্ঘ ভাতায় কোনো বরাদ্দ নেই। তবে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ হার চূড়ান্ত করে পরিচালন বাজেটের অন্য খাতের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবির ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই।