Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দিন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দিন

ফাইল ছবি

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনে (১৪ ডিসেম্বর) দখলদার পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা মিলিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল, পরাজয় তাদের অনিবার্য। তাই পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের একদিন পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। দিনটিতে গোটা জাতি বিনয় এবং শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আরও বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ ও পথ অনুসরণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সুখী-সমৃদ্ধ এবং বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারলেই তাদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে। প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে।

বাণীতে তারেক রহমান বলেন, আজ পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। হারিয়ে যাওয়া আইনের শাসন, স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং বহুমত ও পথের রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে শহিদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের প্রেরণার উৎস হিসাবে কাজ করে যাবেন। তিনি আরও বলেন, অমর বুদ্ধিজীবীরা দেশের ক্ষণজন্মা শ্রেষ্ঠ সন্তান, যারা একটি সমৃদ্ধ এবং মাথা উঁচু করা জাতি দেখতে চেয়েছিলেন। তারা ন্যায়বিচারভিত্তিক শোষণমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রত্যাশা করেছিলেন। এদিনে আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা একসঙ্গে কাজ করি।

বাণীতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেসব শহিদ বুদ্ধিজীবী ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি আরও বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দেশি-বিদেশি দোসররা আবার দেশকে নানা কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। স্বৈরাচারের দেশবিরোধী সব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর ঘটনা যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাদের গলিত ও ক্ষতবিক্ষত লাশ খুঁজে পায়। বুদ্ধিজীবীদের লাশে ছিল আঘাতের চিহ্ন। চোখ, হাত-পা ছিল বাঁধা। কারও কারও শরীরে ছিল একাধিক গুলি। অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে। লাশের ক্ষতচিহ্নের কারণে অনেকেই প্রিয়জনের লাশ শনাক্ত করতে পারেননি।

আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’-এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা গেছে, শহিদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা এক হাজার ৭০ জন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একাত্তরের ২৯ ডিসেম্বর গঠিত বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাও ফরমান আলী ২০ হাজার বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা মতো হত্যাযজ্ঞ চালানো সম্ভব হয়নি। কারণ ফরমান আলীর টার্গেট ছিল শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের গভর্নর হাউজে নিমন্ত্রণ করে মেরে ফেলা।

কর্মসূচি : বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে দিবসটি পালনে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতি বছরের ন্যায় নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের নেতৃত্বে শহিদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

এছাড়াও সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিডি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। এছাড়া শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে সব মসজিদ এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে যথাক্রমে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।

একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও নিয়েছে পৃথক পৃথক কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল ৯টায় বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিরপুরস্থ শহিদ বুদ্ধিজীবী মাজারে শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। ভোরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের কার্যালয়গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন করবে দলটি। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) পক্ষ থেকে সকাল ৮টায় মিরপুরের শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম