বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলনে মাঠে থাকলেও আগামীতে ভোটের রাজনীতির সমীকরণ কোনোভাবেই মেলাতে পারছে না গণতন্ত্র মঞ্চ। বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন, যদি তাই হয় সেক্ষেত্রে আসন ভাগাভাগির ফয়সালা কিভাবে হবে-সেদিকেই তাকিয়ে আছে তারা। পর্দার আড়ালে বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে অল্প-বিস্তর আলাপ-আলোচনা চললেও কোনো কূল-কিনারা মেলেনি এখনো। যদিও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের দাবি-আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের এখনো সময় হয়নি। তাদের মতে, শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন দেশ পরিচালনা করছে। তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেশকিছু বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে চান। এর পরপরই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই সময়টুকু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান গণতন্ত্র মঞ্চ নেতারা। পাশাপাশি এর মধ্যে গুছিয়ে রাখতে চান তারা নিজেদের ঘরও।

এ প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা, ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বুধবার যুগান্তরকে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা এখনো নিশ্চিত নই। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছে। আমরাও তাদের এজন্য যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বলেছি। নির্বাচনের আগে আমরা হাতে যে সময়টুকু পাচ্ছি, এর মধ্যে দল গোছানো এবং নির্বাচনি প্রস্তুতির কাজ সেরে রাখতে চাই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ এবং এক্ষেত্রে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো বিএনপির সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আলোচনা যখন শুরু হবে তখন দেখা যাবে। তবে যাই করি ন্যায্যতার ভিত্তিতে করব, না হয় আমরা আমাদের মতো করে নির্বাচনে অংশ নেব।

বাম ও প্রগতিশীল ঘরানার সাত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ২০২২ সালের ৮ আগস্ট যাত্রা শুরু করে গণতন্ত্র মঞ্চ। জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে ছিল-আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর ভাসানী অনুসারী পরিষদ, হাসনাত কাইয়ুমের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরুর গণঅধিকার পরিষদ। মতানৈক্যের কারণে অবশ্য ২০২৩ সালের মে মাসে গণঅধিকার পরিষদ গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যায়। ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ছাড়া বাকিরা এখন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণসংগ্রাম গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে প্রথম থেকেই রাজপথে সরব এবং সক্রিয় ছিল। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে অংশ নেয় এই জোটের তিন শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। এদের মধ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এককভাবে তাদের নির্বাচনি প্রতীক কোদাল নিয়ে ১১টি আসনে অংশ নেয়। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচনি প্রতীক কোদাল নিয়ে ওই নির্বাচনে ১৪টি আসনে অংশ নেয় আরও পাঁচটি রাজনৈতিক দল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মাঠের রাজনীতিতে বড় ধরনের রাজনৈতিক বিজয় অর্জনের পর গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকরা এখন পুরো মাত্রায় নির্বাচনমুখী। দল গোছানোর পাশাপাশি তারা নির্বাচনি ছকও কষতে শুরু করেছেন। বিএনপির সঙ্গে আগামীতে জোটবদ্ধ নির্বাচনের সম্ভাবনা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা করছেন তারা। পাশাপাশি এককভাবে কিংবা গণতন্ত্র মঞ্চ মঞ্চগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিকল্প চিন্তাও মাথায় রয়েছে তাদের। নির্বাচন যখনই হোক, বিএনপির সঙ্গে আগেভাগেই এ বিষয়ে একটি সম্মানজনক ফয়সালায় পৌঁছাতে চান তারা। তবে শেষ পর্যন্ত কি হবে তা নির্বাচনি ট্রেন যখন যাত্রা শুরু করবে, তখনই বলা যাবে-এমনটাই মনে করছেন এই জোটের শীর্ষ নেতারা।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বুধবার যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক, কোনো ধরনের আলোচনাই হয়নি। এমনকি এ নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের ভেতরেও আলোচনা হয়নি। সময় এলে এ নিয়ে আলোচনা অবশ্যই হবে। তবে আপাতত আমরা দল গোছানোর পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছি। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ১১টি আসনে অংশ নেয়। আগামী নির্বাচনে এই ১১টি আসনের পাশাপাশি আর কোথায় কোথায় ভোট করা যায়, সে নিয়ে আমরা কাজ করছি।