Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানি

আমানত ও কোটিপতির সংখ্যা কমেছে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আমানত ও কোটিপতির সংখ্যা কমেছে

ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর সার্বিক কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দুই খাতেই আমানত প্রবাহ কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে কোটিপতিদের আমানত। পাশাপাশি গ্রামে মোট আমানতের অংশ কমে গেছে। গ্রাম ও শহরেও আমানত প্রবাহ কমেছে। ঋণ প্রবাহও প্রত্যাশিত হারে বাড়েনি। কোটিপতি আমানতকারীদের সংখ্যাও কমেছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপিসহ অনেক নেতাকর্মী ও সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও আমলারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। পালানোর সময় তারা ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের নগদ অর্থ তুলে নিয়েছেন। এছাড়াও নানাভাবে তারা দেশ থেকে টাকা পাচার করেছেন। সরকার পতনের পর সৃষ্ট অস্থিরতার কারণে অনেক গ্রাহক ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে নিয়েছেন। যে টাকা হাতে আছে সেগুলোও তারা এখন ব্যাংকে রাখছেন না। ইতোমধ্যে দুর্নীতির দায়ে অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরাও এখন নগদ টাকা ব্যাংকে জমা দিচ্ছেন না। ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ও কমে গেছে। রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় সরকারের আমানতও কমেছে। এসব কারণে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোতে আমানত কমেছে। সৃষ্ট অস্থিরতার কারণে উদ্যোক্তারা নতুন ঋণ নিচ্ছেন না। ব্যাংকগুলোরও ঋণ বিতরণের অনীহা রয়েছে। যে কারণে ঋণের প্রবাহও আশানুরূপভাবে বাড়ছে না। প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, জুনে ব্যাংকে আমানত ছিল ১৮ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। উল্লিখিত সময়ে আমানত কমেছে দশমিক ৭৩ শতাংশ। জুনে আমানত বেড়েছিল ৪ দশমিক ৩৪ দশমিক শতাংশ।

একই সময়ে গ্রামে ও শহরেও আমানত প্রবাহ কমেছে। শহরে কমেছে দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং গ্রামে কমেছে দশমিক ৭০ শতাংশ। আগে মোট আমানতে গ্রামের অবদান ছিল ১৮ শতাংশ, বাকি ৮২ শতাংশ ছিল শহরের অবদান। এখন গ্রামের আমানতের অংশ কমে সাড়ে ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শহরের অবদান বেড়ে সাড়ে ৮৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে আমানত কমেছে। তবে বিদেশি ও সরকারি খাতের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে। সরকারি ব্যাংকে কমেছে ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ, বেসরকারি ব্যাংকে দশমিক ৩৩ শতাংশ ও ইসলামি ব্যাংকগুলোতে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ কমছে। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকে বেড়েছে ২ দশমিক ৪১ শতাংশ। জুনের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ৬৫৭ জন। জুনে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারী ছিলেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪ জন। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ১২৭ জনে। আলোচ্য সময়ে কোটিপতিদের আমানতও কমেছে। কারণ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিশেষ করে কোটিপতিরাই বেশি অর্থ তুলে নিয়েছেন। বর্তমানে ১ কোটির বেশি থেকে ৫ কোটি টাকা আমানত রয়েছে ৯২ হাজার ৫৬৩ জন গ্রাহকের। ৫ কোটির বেশি থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানত রয়েছে ১২ হাজার ৬৫৮ জন গ্রাহকের। ১০ কোটি টাকার বেশি থেকে ১৫ কোটি টাকার আমানতকারী ৪ হাজার ২৫০ জন। ১৫ কোটি টাকার বেশি থেকে ২০ কোটি টাকার আমানত রয়েছে ২ হাজার ৬ জন গ্রাহকের। ২০ কোটির বেশি থেকে ২৫ কোটি টাকার আমানত রয়েছে ১ হাজার ৩১২ জন গ্রাহকের। ২৫ কোটি টাকার বেশি থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানত রয়েছে ৯৬৮ জনের। ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার আমানতকারী ৪৫০ জন। ৩৫ কোটি বেশি থেকে ৪০ কোটি টাকার আমানতকারী ৩৫৮ জন। ৪০ কোটির বেশি থেকে ৫০ কোটি টাকার আমানতকারী ৭৬২ জন এবং ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানতকারী রয়েছেন ১ হাজার ৮০০ জন।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফাইন্যান্স কোম্পানিতেও আমানত প্রবাহ কমে গেছে। জুনে আমানত ছিল ৪৭ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। ওই সময়ে আমানত কমেছে দশমিক ১৪ শতাংশ। জুনে আমানত বেড়েছিল ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আমানত কমার পাশাপাশি ঋণও প্রত্যাশিত হারে বাড়েনি। তবে সুদ যোগ করে মোট ঋণের স্থিতি বেড়েছে। কিন্তু নতুন ঋণ বাড়েনি।

জুনের তুলনায় সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোতেও কোটিপতি আমানতকারী কমেছে। জুনে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ হাজার ৩২৩ জন। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩১৪ জনে। আলোচ্য তিন মাসে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা কমেছে ৯ জন। বর্তমানে ১ কোটির বেশি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানত রয়েছে ৪ হাজার ১১৫ জন, ৫ কোটির বেশি থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানত রয়েছে ৬৭১ জনের। ১০ কোটির বেশি থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানত রয়েছে ১৯৮ জনের। ১৫ কোটির বেশি থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানত রয়েছে ১৩৭ জনের। ২০ কোটির বেশি থেকে ২৫ কোটি টাকার আমানত রয়েছে ৭৮ জনের। ২৫ কোটির বেশি থেকে ৩০ কোটি টাকার আমানত রয়েছে ২০ জনের। ৩০ কোটির বেশি থেকে ৩৫ কোটি টাকার আমানতকারী ৩০ জন। ৩৫ কোটির বেশি থেকে ৪০ কোটি টাকার আমানতকারী ৫ জন। ৪০ কোটির বেশি থেকে ৫০ কোটি টাকার আমানতকারী ২৫ জন। ৫০ কোটি টাকার বেশি থেকে ১০০ কোটি টাকার আমানতকারী ২৫ জন। ১০০ কোটি টাকার বেশি থেকে ১৫০ কোটি টাকার আমানত রয়েছে ৫ জনের। ২০০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে ৪ জনের এবং ৩০০ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে একজনের।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম