ঝটিকা সফরে আজ আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কৌতূহলী দৃষ্টি এখন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রির ঢাকা সফরের দিকে। ঢাকা ও দিল্লিতে উত্তেজনার পারদ যখন তুঙ্গে তখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই ঝটিকা সফর। দিল্লির তরফে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কী বার্তা মিস্ত্রির তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেও বিশেষ বিমানে ভারতীয় শীর্ষ কূটনীতিকের সফর প্রতীয়মান হয় যে, এর মাধ্যমে একটা ইতিবাচক আবহ সৃষ্টির চেষ্টা আছে। ভারত বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বহুমুখী। একক কোনো এজেন্ডা কিংবা ইস্যুতে তা বিনষ্ট হবে না। তাই এই সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কীভাবে এগোবে তার রোডম্যাপ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বাংলাদেশে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিক্রম মিস্ত্রির সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ভালো ‘ওয়ার্কিং রিলেশন’ বজায় রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তার সূচনা হিসাবে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় আসছেন। রাজনৈতিক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন মিস্ত্রি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে। ঢাকায় বিএনপির অঙ্গ-সংগঠন ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করেছে। দিল্লিতে বিজেপি একই ধরনের কর্মসূচি পালন করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারত কাজ করতে আগ্রহী। এই বার্তা দেশটি আগেই দিয়েছে। আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করেছিল। সেখানে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠকের পর ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই দেশের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী, শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারত বাংলাদেশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’ বিক্রম মিস্ত্রি সম্ভবত এই বার্তা পুনর্বার দেবেন। তিনি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।
বাংলাদেশের তরফে একটা বার্তা ভারতকে বরাবরই বলা হচ্ছে যে, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পরের বাস্তবতার সঙ্গে তারা যেন মানিয়ে নেন। ভারতের ভিসা বর্তমানে বন্ধ। এটা চালু করার অনুরোধ আবারও ঢাকার তরফে করা হতে পারে। ভারত চাইবে ভারতীয় ঋণের (লাইন অব ক্রেডিট-এলওসি) প্রকল্পগুলো যেন পুনরায় চালু হয়। ঢাকা আগেই বলেছে, চলমান প্রকল্প চালু থাকবে। ওয়ার্কিং রিলেশনের জন্য উভয় দেশের কূটনীতিকরা যাতে অবাধে পরস্পরের মধ্যে চলাচল করতে পারে সেই বিষয়ে একটা আলোচনা হতে পারে। বাংলাদেশ-ভারতের গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হচ্ছে। চুক্তিটি নবায়নের লক্ষ্যে যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) বৈঠক করার প্রয়োজনীয়তার বিষয় নিয়ে আলোচনায় তুলতে পারে ঢাকা। তিস্তা চুক্তি সম্পাদন, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য এসব বিষয়ে ঢাকার উদ্বেগ নিরসনের আহ্বান থাকতে পারে। ভারত অবশ্যই নিরাপত্তা বিশেষ করে ভারতের বিরোধী কোনো গোষ্ঠীকে বাংলাদেশে প্রশ্রয় দেয়া হয় না বলে ঢাকা বরাবরই বলে থাকে। এসব বিষয়াদির পাশাপাশি উভয় দেশে পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক তৎপরতায় উত্তাপ-উত্তেজনা কীভাবে নিরসন হবে সেই প্রশ্ন ও কৌতূহলী দৃষ্টি সবারই থাকবে। বাংলাদেশের নির্বাচন কিংবা সংস্কার প্রসঙ্গ অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আসাটা স্বাভাবিক।
বিক্রম মিস্ত্রি সকালে বিশেষ বিমানে ঢাকায় পৌঁছবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিনের সঙ্গে ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ (এফওসি)-এ যোগ দেবেন। আলোচনার পাশাপাশি থাকছে ‘ওয়ার্কিং লাঞ্চ’। এফওসি দুদেশের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এবারের আলোচনায় সাম্প্রতিক ইস্যু গুরুত্ব লাভ করতে পারে। বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অতিরঞ্জিত প্রচার এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতির ব্যাপারে ঢাকার আপত্তি পুনর্ব্যক্ত করা হতে পারে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ভারতের তরফে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে দিল্লির উদ্বেগ অবশ্যই জানানো হবে।