শান্তিরক্ষীর ভূমিকা মমতা বোঝেন কিনা, নিশ্চিত নই: শশী থারুর
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তার এ আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের কংগ্রেস নেতা ও সংসদ সদস্য শশী থারুর বলেছেন, তিনি (মমতা) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ভূমিকা পুরোপুরি বোঝেন কি না, তা আমি ‘নিশ্চিত’ নই। মঙ্গলবার ভারতের বার্তাসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব, ভারত সরকার জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী পাঠানোর আর্জি জানাক। তারা যাতে আমাদের লোকজনকে বাংলাদেশ থেকে উদ্ধার করতে পারে।’
এ বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শশী থারুর বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের খুব কম ক্ষেত্রেই কোনো দেশে পাঠানো যায়, এটা হয় যখন কোনো দেশের সরকার নিজেই অনুরোধ করে।’
তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই যে তিনি (মমতা) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা পুরোপুরি বোঝেন কিনা। আমি অনেক বছর ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় কাজ করেছি। আমি বলতে পারি, কোনো দেশের অনুরোধ ছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের খুব কম ক্ষেত্রে ওই দেশে পাঠানো যায়।’
শশী থারুর আরও বলেন, ‘যখন একটি দেশ সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে, তখনই শান্তিরক্ষী পাঠানো হয় এবং ওই দেশের সরকারকে অনুরোধ করতে হবে। তবে আমি পুরোপুরি একমত যে সেখানে (বাংলাদেশ) কী ঘটছে, তার ওপর আমাদের নজর রাখতে হবে।’
বাংলাদেশে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের ঘটনায় শুক্রবার শশী থারুর বলেছিলেন, এ বিষয়ে ভারতের বেশি কথা বলা ঠিক হবে না। কারণ বিষয়টি ভারতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আগামী ১১ ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় কমিটি একটি বৈঠক ডেকেছে। এই কমিটির বর্তমান প্রধান শশী থারুর।
লোকসভায়ও বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাব : বাংলাদেশ ইস্যুতে মঙ্গলবারও উত্তপ্ত ছিল ভারতের সংসদের অধিবেশন। বিধানসভার পরে এবার লোকসভায় শান্তিবাহিনী পাঠানোর জন্য জাতিসংঘকে অনুরোধ জানাতে বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের এমপিরা। প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে তারা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। মঙ্গলবার লোকসভায় বাংলাদেশ ইস্যুতে বক্তব্যের শুরুতেই তৃণমূল নেত্রীর রাস্তা ধরেন তৃণমূল এমপি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর অত্যাচার চলছে, খুন করা হচ্ছে। আমাদের আবেদন, বাংলাদেশে অবিলম্বে শান্তি বাহিনী পাঠানোর জন্য ভারত সরকার রাষ্ট্রপুঞ্জে (জাতিসংঘ) আবেদন জানাক। ভারত সরকার একেবারে নিশ্চুপ। তার কারণ সরকারই ভালো জানে। অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীরা সীমান্ত পেরিয়ে আমাদের রাজ্যে ঢোকেন। সরকারকে এ নিয়ে অবস্থান জানাতে হবে। বিদেশমন্ত্রী সংসদে এসে এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিন।
তৃণমূলের আরেক এমপি কীর্তি আজাদ বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একেবারে ঠিক বলেছেন। ভারত সরকার কী করছে? ওরা (বাংলাদেশ) আমাদের প্রতিবেশী। সেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। আমাদের নেত্রী ঠিকই বলেছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ করা উচিত।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বর্তমান উদ্বেগের জন্য মমতা সরকারকেই দায়ী করেন রানাঘাটের বিজেপি এমপি জগন্নাথ সরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বেছে বেছে হিন্দুদের নির্যাতন করা হচ্ছে। মন্দির ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, আর্থিক তছরুপ হচ্ছে। কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে অত্যাচারিত হতে হচ্ছে। এপারে এসেও শান্তি নেই। দিনের পর দিন অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে আমাদের জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছে। সরকারি মদতেই হচ্ছে। তছনছ হচ্ছে সরকারি সম্পদ। রাজ্যসভায় মমতা সরকারের দিকে আঙুল তোলেন বিজেপির শমীক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স, ভারত সরকারের পরমাণু বিভাগের অধীনে রয়েছে। ওই কেন্দ্র হাই সিকিউরিটি জোন বলে বিবেচিত হয়। অথচ উত্তরের দেওয়ালের বাইরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীরা এসে ভিড় জমিয়েছেন। সব বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এমন এক রাজ্যে রয়েছি, যেখানে অনুপ্রবেশকারীদের স্বাগত জানানো হয়। পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের বাইরে রোহিঙ্গারা বসে থাকলে, আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছি, তা নিয়ে ভাবনার অবকাশ রয়েছে। বাংলাদেশের কথা পরে হবে। প্রতিদিন যে অনুপ্রবেশকারীরা পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়ছে, দেশের জাতীয় নিরাপত্তা যে প্রশ্নের মুখে, তার জন্য দায়ী রাজ্য সরকার।