‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’র ব্যানারে তাণ্ডব ভাঙচুর পতাকা অবমাননা
আগরতলায় দূতাবাসে হামলা: বাংলাদেশ ক্ষুব্ধ, ভারতের দুঃখ প্রকাশ
বাংলাদেশ ক্ষুব্ধ, তদন্ত দাবি * ভারতের দুঃখ প্রকাশ, ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস * পেট্রাপোল বন্দর, বিলোনিয়া ও সিলেট সীমান্তে ভারতীয়দের বিক্ষোভ * ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে ভারতীয় দুর্বৃত্তরা। ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’র ব্যানারে সোমবার দুপুরে ওই হামলা চালানো হয়। এ সময় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়। আগুন দেওয়া হয় হাইকমিশনের সাইনবোর্ডে। এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারত সরকার। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এ হামলা ছিল পরিকল্পিত। শুরু থেকেই সক্রিয় ছিল না স্থানীয় পুলিশ। এ ঘটনায় গভীরভাবে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ।
এদিন ভারতের মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইয়েও বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের কাছে বিক্ষোভ করেছে উগ্রপন্থিরা। ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদের’ ব্যানারে ওই বিক্ষোভে বাংলাদেশ মিশনের দেড়শ গজের মধ্যে অবস্থান নেন তারা। এদিকে ‘বাংলাদেশে ভারতীয় পতাকা অবমাননা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনে’র কথিত অভিযোগ তুলে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে এদিন বিক্ষোভ করেছে রাজ্য বিজেপি। দলটির নেতারা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়েছেন। এর আগে বিক্ষোভ হয়েছে ফেনীর ওপারে বিলোনিয়া সীমান্তেও। এছাড়া ভারতের করিমগঞ্জে বিক্ষোভকারীদের বাধায় সিলেটের জকিগঞ্জ দিয়ে পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে ওই হামলার প্রতিবাদে রাতে ঢাকা, কুমিল্লা ও গাজীপুরের টঙ্গীতে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনা ঘটেছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের প্রতিবাদে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠনের সভা ছিল আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সামনে। সভা শেষে সংগঠনের ছয়জনের একটি প্রতিনিধিদল হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে যায় স্মারকলিপি জমা দিতে। এ সময় বাইরে থাকা কিছু হিন্দু যুবক হঠাৎ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। পরে হাইকমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয়।
বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি জানান, সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, গেরুয়া পতাকা এবং পট্টিধারী শতাধিক দুর্বৃত্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ঢুকে পড়ে। চত্বরে থাকা ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড থেকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। এ সময় পুলিশ তাদের থামানোর চেষ্টা করে। পরে হামলাকারীদের হাইকমিশন চত্বর থেকে বের করে দেয় পুলিশ। ঘটনাস্থলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএফএফ) সদস্যদেরও দেখা গেছে।
বিবিসিকে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, ওই সংগঠনটি ডেপুটেশন জমা দিতে আসবে এটি নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে আগেই কথা হয়েছে। পুলিশ আমাদের জানিয়েছিল কয়েকজনের একটি দল ভেতরে এসে প্রতিবাদলিপি জমা দেবে। হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির ব্যানারে পাঁচজন যখন ভেতর প্রবেশ করল তখন সংগঠনের আরও দেড়শজনের মতো লোক কার্যালয়ের গেটের বাইরে উপস্থিত হয়।
কূটনীতিক জোন হওয়ায় এই এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের পুলিশের-জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের অফিসের সামনে দেড়শ বিক্ষোভকারীর বিপরীতে পুলিশের প্রায় একশজন সদস্যও সেখানে ছিল। তারপরও তারা আমাদের অফিসে ঢোকার গেটি খুলে দিল। তখন একসঙ্গে দেড়শ মানুষ ঢুকলে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে ধারণা করতে পারেন!
তবে এ বিষয়ে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির কার্যকরী সদস্য বিকে রয় জানান, ডেপুটেশন দেওয়ার সময় বাইরে কী ঘটনা ঘটেছে তা তারা দেখেননি এবং তারা ডেপুটেশন দিয়ে আসার পরও কাউকে অফিসের ভেতরে দেখতে পাননি।
সূত্রমতে, কূটনৈতিক রীতি অনুযায়ী, সহকারী হাইকমিশন বাংলাদেশের সার্বভৌম সম্পদ। এর ভেতরে ভারতের আইনও প্রযোজ্য নয়। কূটনৈতিক দায়মুক্তি থাকায়, কোনো দেশের দূতাবাসে স্বাগতিক দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রবেশ করতে পারে না।
সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। হামলার শঙ্কায় রয়েছে দেশটিতে পড়াশোনারত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। তাদের ধারণা, ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত গুজবের জেরে ওই হামলা হয়েছে। এটিকে আরও উসকে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বক্তব্য এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ত্রিপুরা সরকারের পরিবহণমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর পোস্ট। ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ‘বাংলাদেশে আক্রান্ত কলকাতাগামী বাস, ভারতীয়দের দিল প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করে।
সূত্র জানায়, শনিবার আগরতলা থেকে ঢাকা হয়ে কলকাতার পথে চলা শ্যামলী পরিবহণের একটি যাত্রীবাহী বাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ত্রিপুরার পরিবহণমন্ত্রী ও ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম এটিকে হামলা বলে দাবি করে। সুশান্ত চৌধুরী তার ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে বাসের ছবি পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ত্রিপুরা থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোডে আক্রান্ত হয়েছে শ্যামলী পরিবহণ। বাসটিকে দুর্ঘটনায় ফেলতে ধাক্কা দেয় একটি পণ্যবাহী ট্রাক। এতে একটি অটোর সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন ভারতীয় যাত্রীদের ক্রমাগত হুমকি দেয়। ভারতবিরোধী স্লোগান দেয়।
আখাউরা প্রতিনিধি জানান, কিন্তু বাসে কোনো হামলা হয়নি। বাসটির চালক আসাদুল হক বলেন, ভারতীয় যাত্রীদের সঙ্গেও স্থানীয় সাধারণ মানুষের কারও বাগবিতণ্ডাও হয়নি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বাসে হামলার খবর দেখে আমিও অবাক হয়েছি।
পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি বাংলাদেশের : সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করতে এবং ঘটনার একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত পরিচালনা করতে আহ্বান জানিয়েছে। ‘প্রাপ্ত তথ্য থেকে স্পষ্ট, বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছেন। এ সময় স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার খুঁটি ভেঙে ফেলেন, পতাকাকে অসম্মান করেন এবং প্রাঙ্গণের অভ্যন্তরীণ সম্পত্তি ভাঙচুর করেন’, বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
‘দুঃখজনকভাবে, হাইকমিশনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য উপস্থিত স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।’ এ ঘটনার ফলে সহকারী হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গভীর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে গত ২৮ নভেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে ‘বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ নামক হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননার ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞপ্তিতে সে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট করতে চায়, বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক মিশনের ওপর এ জঘন্য হামলা এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অসম্মান একটি ধারাবাহিক প্যাটার্নের অংশ। এ ঘটনা ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশনসের সরাসরি লঙ্ঘন।
‘বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করতে, ঘটনার একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত পরিচালনা করতে এবং ভবিষ্যতে ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের বিরুদ্ধে এমন সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি, কূটনীতিক ও অ-কূটনৈতিক কর্মী এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
ভারতের দুঃখপ্রকাশ, নিরাপত্তার আশ্বাস : বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালানোর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার ঘটনাটি দুঃখজনক। কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি কোনো অবস্থাতেই হামলার লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং ভারতের বিভিন্ন স্থানে সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।
পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় বিজেপির বিক্ষোভ : ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নিঃশর্ত মুক্তি, বাংলাদেশে ভারতীয় পতাকার অবমাননা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতন বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বনগাঁ মহকুমা বিজেপি। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা না হলে সপ্তাহ শেষে ৫ দিনের জন্য আমদানি রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশে আলু পেঁয়াজ ডিমসহ সব আমদানি রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ সময় তিনি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সব ধরনের আমদানি রপ্তানি বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেন।
সোমবার ভারতের পেট্রাপোল বাসস্ট্যান্ডে অনুষ্ঠিত জনসভায় বনগাঁ মহকুমা বিজেপির সভাপতি দেবদাস মন্ডলের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক স্বপন মজুমদার, উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া, কল্যাণীর অম্বিকা দাস প্রমুখ। জনসভায় হাবড়া, বারাসাত, নদীয়া, কল্যাণীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭-৮ হাজার বিজেপি কর্মী যোগ দেয়।
মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ : মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের কাছে সোমবার বিকালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কয়েকশ বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বাংলাদেশ মিশনের প্রায় এক থেকে দেড়শ গজের মধ্যে এসে অবস্থান নেন। তারা বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ইসকন সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিবাদ জানিয়ে নানা স্লোগান দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ : ঢাবি প্রতিনিধি জানান, রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে সমাবেশ করে তারা। রাত ১০টায় জগন্নাথ হলের একদল শিক্ষার্থী ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মিছিল নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেয়। এসময় ‘দূতাবাসে হামলা কেন, দিল্লি তুই জবাব দে’, ‘আর এস এসের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘বিজেপির কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘উগ্রবাদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, সব শহিদের রক্তের শপথ, ভারত কিংবা তার চেয়ে শক্তিশালী কোনো দেশও যদি আমাদের সার্বভৌমত্বের দিকে হাত বাড়ায়, তবে আমরা রুখে দাঁড়াব। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকে বাংলাদেশি। এদেশে বিগত সময়ে যেমন সংখ্যালঘু কার্ড খেলে ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিস্তার করা হয়েছে তা আর কখনো হতে দেব না। আমাদের সার্বভৌমত্ব কিভাবে রক্ষা করতে হয় তা আবু সাঈদরা আমাদের শিখিয়ে গেছে। এছাড়াও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরেফা খাতুন, তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী, তারিকুল ইসলাম ও জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী জয় পাল প্রমুখ।
ঢাবিতে ছাত্র অধিকারের বিক্ষোভ : সোমবার রাত ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ শেষে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। মিছিলে ‘দূতাবাসে হামলা কেন? মোদি তুই জবাব দে, দিল্লি তুই জবাব দে’, ‘দিল্লির আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ; মোদির আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। সমাবেশে বক্তৃতা করেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাসহ কয়েকজন।
বিলোনিয়া সীমান্তে ভারতীয়দের বিক্ষোভ : ফেনী প্রতিনিধি জানান, সীমান্তবর্তী পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দরের ভারত অংশে বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। সনাতনী হিন্দু সমাজের ব্যানারে কিছু ভারতীয় নাগরিক রোববার বিকালে বিক্ষোভ করেন। রোববার রাত ১২টার দিকে বিলোনিয়া সীমান্তেও ওই বিক্ষোভের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার এ বিষয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবি-৪ ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।