Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বিএনপির অঙ্গসংগঠনের সাংগঠনিক সফর শেষ

গণমুখী রাজনীতি ও শৃঙ্খলা রক্ষার বার্তা

চাঙা তৃণমূল, ৩১ দফাকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছে জনগণ

নূরে আলম জিকু

নূরে আলম জিকু

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গণমুখী রাজনীতি ও শৃঙ্খলা রক্ষার বার্তা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন স্বস্তিতে বিএনপি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে সাংগঠনিক তৎপরতায় নেমেছে দলটি। সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপিসহ তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। দুই মাসের বেশি সময় চলা জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক সফর শেষ হচ্ছে চলতি সপ্তাহে।

সফরে জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও রাষ্ট্রসংস্কারে ৩১ দফার ভিত্তিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগামী দিনের গণমুখী রাজনীতির বার্তা দলের নেতাকর্মী ও জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। পাশাপাশি সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষারও বার্তা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল সফরের সার্বিক বিষয়সহ সাংগঠনিক অবস্থান সম্পর্কে শিগ্গিরই দলীয় হাইকমান্ডকে অবহিত করবে তিন সংগঠন। এজন্য সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও বিএনপির রাজনীতি নিয়ে তৃণমূলে জনগণের ভাবনা ও প্রত্যাশা নিয়ে রিপোর্ট প্রস্তুত করছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সফরে থাকা তিন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সাংগঠনিক সফরের মধ্য দিয়ে এখন চাঙা তৃণমূল। ‘রাজনৈতিক প্রাণশক্তি’ ফিরে পেয়েছেন নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি এ সময়ে দলীয় হাইকমান্ডের বক্তব্য জনগণ কীভাবে নিচ্ছেন, সেটিও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। আগামী নির্বাচন ও বিএনপির কাছে জনগণের প্রত্যাশা কী-সে বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করেছেন তারা। এছাড়া যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ৮১টি সাংগঠনিক জেলা, ছাত্রদলের ১১৮টি সাংগঠনিক ইউনিটের সংগঠনের সর্বশেষ অবস্থান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে তুলে ধরা হবে। সাংগঠনিক সফরের ফিডব্যাক নিয়ে রিপোর্ট প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষদিকে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চলছে। আমি মনে করি, এর ফলে আমাদের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া ভালোভাবেই অগ্রসর হচ্ছে। তিন সংগঠনের সাংগঠনিক সফরের ফিডব্যাক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা গত নির্বাচনের আগে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় আসতে না পারে, তাহলে এক লাখের ওপর তাদের নেতাকর্মীকে মেরে ফেলা হবে। ওবায়দুল কাদেরও (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তাদের (আওয়ামী লীগ) কোনো নেতাকর্মী মারা যায়নি। আমরা ছিলাম আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল, তারপরও আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলাম যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে। বিশৃঙ্খলা ঘটেওনি, বিএনপির নেতাকর্মীরা অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল সারা দেশে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়েছে। এর ফলে তৃণমূলে দল, সংগঠন ও নেতাদের সম্পর্কে জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা উঠে আসবে।

তিন সংগঠনের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেন, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পরপরই দেশব্যাপী শৃঙ্খলা রক্ষায় মনোযোগ দেয় বিএনপি। লুটপাট, দখলবাজি রোধসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও দলীয় শৃঙ্খলায় কঠোর অবস্থান নেন তারেক রহমান। এ প্রক্রিয়ার বিস্তার বাড়াতে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে যৌথ কর্মী সভা শুরু করে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। পাশাপাশি পৃথকভাবে তিন সংগঠনের নেতারা বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে সভা করেন। ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ৬৮টির বেশি সাংগঠনিক জেলায় কর্মকাণ্ড শেষ হয়েছে। ঢাকা বিভাগের ৭টি জেলাসহ অন্যান্য জেলায় চলতি সপ্তাহের মধ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা শেষ হবে। এছাড়া ছাত্রদলের ১১৮টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে ১০০টির বেশি ইউনিটের কাজ শেষ করেছেন ছাত্রনেতারা। তাদের ৩৮টি টিম এ সময়ে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাষ্ট্রসংস্কার ও ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বার্তা পৌঁছে দেন। প্রতিটি জেলায় সফরকালে নেতারা জনগণের দাবিদাওয়া ও বিএনপি নিয়ে ভাবনা তৎক্ষণিকভাবে তারেক রহমানকে অবহিত করেন। এবার সামগ্রিক বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করে দলীয় হাইকমান্ডকে দেওয়া হবে। রিপোর্টে প্রতিটি জেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ত্রুটি-বিচ্যুতির বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে। একই সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের বিষয়েও জনগণের চিন্তাভাবনার কথা উঠে আসবে। আগামী দিনে জনগণ কেমন জনপ্রতিনিধি চায়, তাও থাকছে এ রিপোর্টে।

নেতারা আরও বলেন, অতীতে নেতাকর্মীরা দীর্ঘসময় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, যৌথ সভা থেকে এজন্য বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে তাদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে দল কীভাবে চলবে, কীভাবে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ থাকা যায়, নেতাকর্মীরা যাতে কোনো বিভ্রান্ত পথে না যায়, সেজন্য তিন সংগঠন কাজ করেছে। বিশেষ করে ছোট কোনো ভুল করলেও রিঅ্যাকশন হচ্ছে, জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়। এতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ইমেজ সংকটে পরে। এগুলো যেন নেতাকর্মীরা সংশোধন করে নেন, সেজন্য সবাইকে বার্তা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বিএনপির তিন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক তৎপরতাকে জনগণ ইতিবাচক হিসাবে নিয়েছে। জনগণের একটাই প্রত্যাশা, সেটি হচ্ছে ভোট কবে হবে? অধিকাংশ মানুষ ভোট চায়। দীর্ঘদিন ভোট দিতে না পারায় একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে জনগণের মধ্যে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের সৎ ও মিশুক হিসাবে দেখতে চায়। তৃণমূল থেকে কেন্দ্রের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে জনগণের সমাজিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। নেতাদের ব্যবহারের আমূল পরিবর্তন করতে হবে। মানুষ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের পছন্দ করে। হাইব্রিড কিংবা ধরে এনে নেতা কিংবা এমপিদের জনগণ পছন্দ করে না।

জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন যুগান্তরকে বলেন, কোন এলাকার সাংগঠনিক অবস্থা কেমন? কোথায় সংগঠন ভালো, আবার কোথায় মন্দ, মেয়াদোত্তীর্ণ, কোথায় শক্তিশালী, কোথায় দুর্বল-এ বিষয়ে আমাদের একটা ধারণা হয়েছে। এ বিষয়গুলো আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানাব। আমাদের যদিও সাংগঠনিক সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল নেতাকর্মীদের সতর্ক করা। যাতে তারা সংগঠনবিরোধী কোনো কাজে না জড়ান। বিশেষ করে দখল নিয়ে কিছু নিউজ হয়েছে, আমরা তাদের বহিষ্কার করেছি। কোথাও কোথাও কমিটি বিলুপ্ত করেছি। এ বিষয়ে আরও সতর্ক করা ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। যাতে এসব কাজে নেতাকর্মীরা না জড়ান। পাশাপাশি আমরা গণসংযোগ করেছি, যেখানে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করেছি। বিএনপি যে ৩১ দফা প্রণয়নের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে, এটি মানুষের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। আগামী দিনে কী করে রাষ্ট্রের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায়, কীভাবে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা যায়-এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছি।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, ইতিবাচক রাজনীতির প্রতিযোগিতায় সবাইকে অবতীর্ণ হতে হবে। শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, সংগঠন ও দলকে তৃণমূলে সাধারণ মানুষের কাছে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। দুই মাসের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের উপলব্ধিগুলো নিয়ে তিন সংগঠন মিলে আমরা একটা রিপোর্ট তৈরি করব। তারপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবহিত করব। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।

তিনি বলেন, বিশেষ করে এবার আমরা যে মাঠ পর্যায়ে গিয়েছি, সেখানে আমাদের সংগঠনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ধরা পড়েছে। অনেক জায়গায় নেতাদের সমস্যা রয়েছে, কোথাও আবার সংগঠনের মধ্যেই সমস্যা রয়েছে, অনেক জায়গায় কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নেই। কোথাও আবার কমিটি আছে কিন্তু তা কাজ করছেন না, কোথায় আবার আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়ে রাখছি। সবকিছু বিশ্লেষণ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জানানো হবে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন জেলায় যে কর্মসূচি হয়েছে, সেগুলো কেমন ছিল, নেতাকর্মীদের উপস্থিতির সংখ্যা, কোনো জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে কি না-এগুলো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবহিত করব। একই সঙ্গে কোনো কোনো জেলায় ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে, লিফলেট মানুষ কেমন স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিল অথবা লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে সাংগঠনিক দুর্বলতা কেমন পেয়েছি কিংবা কোথায় কোন কোন সংগঠন শক্তিশালী, মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল-এগুলো জানাব। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে সাধারণ মানুষ কী ভাবছে, এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রচারিত বক্তব্যগুলো জনগণ কীভাবে নিয়েছে-সেগুলো এ রিপোর্টে উল্লেখ থাকবে। সাংগঠনিক সফরকালে তৃণমূলের সংগঠনগুলোর অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, এ বিষয়গুলোও আমরা রিপোর্টে জানাব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম