Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ষ ডেথ রেফারেন্স নাকচ, আসামিদের আপিল মঞ্জুর

তারেকসহ সব আসামি খালাস

মুফতি আব্দুল হান্নানের জবানবন্দির ভিত্তিতে সম্পূরক অভিযোগপত্র ছিল অবৈধ -হাইকোর্ট * রায় দেখে সিদ্ধান্ত, তবে আপিল করা উচিত -অ্যাটর্নি জেনারেল * সাক্ষ্য ও আইন কোনোদিকেই মামলা প্রমাণিত হয়নি -আইনজীবী এসএম শাহজাহান

Icon

আলমগীর মিয়া

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তারেকসহ সব আসামি খালাস

আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ডেথ রেফারেন্স নাকচ এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করে এই রায় দেওয়া হয়। ফলে এই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ দণ্ডিত ৪৯ আসামির সবাই খালাস পেলেন। বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এই রায় দেন। 

খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৯ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, ১৯ জন যাবজ্জীবন এবং ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ছিল। এর আগে চার দিন হাইকোর্টের একই বেঞ্চে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি হয়। ২১ নভেম্বর শুনানি গ্রহণ শেষ করেন। সেদিন আদালত মামলা দুটি রায়ের জন্য রোববার অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, মুফতি আব্দুল হান্নানের জবানবন্দির ভিত্তিতে যে সম্পূরক অভিযোগপত্রে এ মামলার বিচার শুরু হয়েছিল, সেই অভিযোগপত্রই ছিল অবৈধ। এছাড়া কোনো সাক্ষী কোনো আসামিকে গ্রেনেড ছুড়তে দেখেননি, তাই শুধু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে সাজা দেওয়া যায় না বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতে লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টুসহ বেশ কয়েকজন আসামির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান। রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তারা হাইকোর্টের এই বেঞ্চের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই রায়কে তারা সাধুবাদ জানান। তারা ন্যায়বিচার পেয়েছেন। সাক্ষ্য ও আইন কোনোদিক দিয়েই এই মামলা প্রমাণিত হয়নি। এসএম শাহজাহান বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর এখনই কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না। কারণ দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তিনি আসামি রয়েছেন। মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। রায়ের পর তিন আসামির আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ে ৪৯ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছিল। সবার আপিল মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। রুল যথাযথ ঘোষণা করেছেন। সবাইকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন তা পুরোটা দেখে তারপর আপিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমি মনে করি, আপিল করা উচিত।

পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট আরও বলেন, অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এ মামলার আসামি মুফতি আবদুল হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও ২৫ জন পরোক্ষ সাক্ষীর জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে বিচারিক আদালত এ রায় দিয়েছেন। এই ২৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দির একটি আরেকটিকে সমর্থন করেনি। কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী ছিল না। মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কোনো প্রমাণযোগ্য বা আইনগত মূল্য নেই, কারণ জীবদ্দশায় তিনি তার স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে গেছেন। এ স্বীকারোক্তি জোর করে নেওয়া হয়েছিল দাবি করা হয়েছে। তা ছাড়া মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিটি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা যথাযথ পরীক্ষা এবং গ্রহণ করা হয়নি। 

আইনজীবী এসএম শাহজাহান রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, হাইকোর্ট রায়ে উল্লেখ করেছেন কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে অন্য আসামিকে সাজা দেওয়া যায় না। আর দ্বিতীয় অভিযোগপত্র ছিল অতি মাত্রায় বেআইনি। দ্বিতীয় অভিযোগপত্রটি আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে আইন অনুসরণ করা হয়নি। তাছাড়া প্রথম অভিযোগপত্রটিও গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ ওই অভিযোগপত্রটিও মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছে। যা তিনি পরে প্রত্যাহার হরে নিয়েছিলেন। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া ২৫ জন সাক্ষীর কেউই বলেননি আমি গ্রেনেড ছুড়েছি বা ছুড়তে দেখেছি। ফলে প্রকৃত খুনি কে সেটির প্রমাণ নেই। ফলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুসারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না। আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, হাইকোর্ট তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এ মামলায় সাক্ষীদের পরস্পর কেউ দেখেছেন বা কেউ স্বচক্ষে দেখেছেন-এ ধরনের কোনো এভিডেন্স নেই। যাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে তা টর্চার করে নেওয়া হয়েছে।

ঘটনা, তদন্ত ও বিচার : ২০ বছর আগে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ কয়েকশ নেতাকর্মী। ভয়ংকর সেই গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনার তদন্তকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির (হত্যা ও বিস্ফোরক) নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। খালাস হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বর্তমানে ৩১ জন কারাগারে রয়েছেন।

উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি : রায়ের পর ২০১৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলা দুটির নথিপত্র হাইকোর্টে আসে। এটি সংশ্লিষ্ট শাখায় ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। আইনজীবীরা বলেন, কোনো ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসাবে পরিচিত। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের জেল আপিল, নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। ডেথ রেফারেন্স এবং এসব আপিল ও আবেদনের ওপর সাধারণত একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল-জেল আপিলের শুনানি শুরু হয় ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর। গত দেড় বছর বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ মামলার শুনানি হয়। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার ক্ষমতাচ্যুতির পর বিচার বিভাগেও পরিবর্তন আসে। 

প্রধান বিচারপতির পদ থেকে ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগের পর আপিল বিভাগের আরও পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। নতুন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ১১, ১২ ও ১৫ আগস্ট হাইকোর্টের ৫৪টি হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন করেন। বেঞ্চ পুনর্গঠনের পর মামলাটি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে আসে। এই বেঞ্চে মামলার ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের ওপর গত ৩১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, রাসেল আহমেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল লাবনী আক্তার। আদালতে লুৎফুজ্জামান বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টুসহ দণ্ডিত বেশ কয়েকজনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান। তিনজন দণ্ডিতের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

শুনানিতে যেসব যুক্তি উপস্থাপন করা হয় : শুনানিতে তিন আসামির আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় জবানবন্দির ভিত্তিতে অধিকতর যে তদন্ত হয়েছে, সেটির আইনগত ভিত্তি নেই। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা প্রদান করা হয়েছে। এই মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় আসামিদের খালাসের আরজি জানান তিনি।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান বলেন, এই মামলার দ্বিতীয় অভিযোগপত্রে যাদের আসামি (তারেক রহমানসহ অন্যরা) করা হয়েছে, সেটি আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথমে দেওয়া হয়নি, সরাসরি জজ আদালতে দায়ের করে। সেজন্য এই অভিযোগপত্র ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী গৃহীত হতে পারে না। উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের নজির আছে যে, যদি দেখা যায় পুরো মামলায় অভিযোগ কোনো আসামির বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়নি ও যথাযথভাবে তদন্ত হয়নি, সেক্ষেত্রে সব আসামি খালাস পেলে যারা আপিল করেননি, ওই রায়ের সুবিধা তারাও পেতে পারেন। তারেক রহমান ও মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদসহ কয়েকজন আপিল করতে পারেননি। সেক্ষেত্রে তারেক রহমান ও কায়কোবাদসহ তাদের নির্দোষ সাব্যস্ত করা যেতে পারে।

অধিকতর তদন্তে তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয় : গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২১ আগস্টের সেই গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনার তদন্তকে ভিন্ন খাতে নিতে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার নানা তৎপরতা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির (হত্যা ও বিস্ফোরক) নতুনভাবে তদন্ত শুরু করে। ২০০৮ সালে ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ওই হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। পরে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মামলার অধিকতর তদন্ত হয়। এরপর তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা : বিচারিক আদালত ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। তারা হলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহণের মালিক মো. হানিফ, জঙ্গিনেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাঈদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ বাট ওরফে মাজেদ বাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন। তাদের মধ্যে ১৪ জন হুজির নেতাকর্মী। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হুজির সাবেক আমির শেখ আবদুস সালাম ২০২১ সালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

যাবজ্জীবন দণ্ডিত যারা : যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন, আরিফুল ইসলাম, জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুর রউফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মুরসালিন, মুত্তাকিন, জাহাঙ্গীর বদর, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, আবু বকর সিদ্দিক ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. ইকবাল, রাতুল আহমেদ, মাওলানা লিটন, মো. খলিল ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল। মামলার নথিপত্র অনুযায়ী তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীসহ ১৬ জন পলাতক। তবে হারিছ চৌধুরী ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন বলে গত বছরের জানুয়ারিতে তার মেয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সামিরা চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান। তবে সরকার এখন পর্যন্ত এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেনি।

বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত যারা : বিচারিক আদালত বিভিন্ন মেয়াদে ১১ জনকে দণ্ড দেন। তারা হলেন মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমীন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ওরফে ডিউক, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী, সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সিআইডির সাবেক পুলিশ সুপার রুহুল আমীন এবং সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও মুন্সী আতিকুর রহমান।

অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর তিনজনের : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মোট আসামি ছিলেন ৫২ জন। তাদের মধ্যে হুজির নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলমের ফাঁসি কার্যকর হয় ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায়। আরেক আসামি জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়। বাকি ৪৯ জনের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালত রায় দেন। তাদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজনের সাজা ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ভুক্তভোগীদের দৃষ্টি ছিল মূলত ডেথ রেফারেন্সের নিষ্পত্তির দিকে। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আসামি পক্ষের একজন আইনজীবী যুগান্তরকে বলেন, হাইকোর্টের রায় শেষ নয়। এখনো সুপ্রিমকোটের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টিকে শেষ হয়েছে বলে বলা যাবে না। সে কারণে রাষ্ট্রপক্ষের উচিত হবে, দ্রুত আপিল করে বিষয়টির আইনি প্রক্রিয়ার সব ধাপ সম্পন্ন করা। তা না হলে ভবিষ্যতে কখনো গভীর সংকট তৈরি হতে পারে।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম