Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সানেমের সংলাপ

বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের প্রধান সমস্যা দুর্নীতি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের প্রধান সমস্যা দুর্নীতি

দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অন্যতম প্রধান সমস্যা। যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। স্বচ্ছতার অভাবে প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ায় অপ্রতিযোগিতামূলক ও গোপনীয়তা ছিল, যা বিদ্যুৎ ক্রয় মূল্য এবং অকার্যকর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ন্যায্যতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে জ্বালানি মূল্য ওঠানামা দীর্ঘমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। এজন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। কেননা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। শনিবার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর সংলাপে এসব কথা বলা হয়েছে। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘ইন-এক্সেপ্লোরিং এ সাসটেইনেবল পাথওয়ে ফর বাংলাদেশ এনার্জি ট্রান্সফরমেশন টুয়ার্ডস গ্রিন এনড ক্লিন এনার্জি’ শীর্ষক এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। এতে তিনটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। সংলাপে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী মো. তুহিন আহমেদ ও গবেষণা সহযোগী একরামুল হাসান। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সচিব ব্যারিস্টার মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, বিদ্যুৎ বিভাগের রিনিউয়েবল এনার্জি উইং-এর যুগ্মসচিব ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন, ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের লিড এনার্জি অ্যানালাইসিস্ট শফিকুল আলম টিআইবির এনার্জি গভর্ন্যান্সের সমন্বয়ক নেওয়াজুল মাওলা, সে ডার পরিচালক মোহাম্মদ আমিনুর রহমান প্রমুখ।

পৃথক তিন গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, কয়লা এবং এলএনজির (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) মূল্যবৃদ্ধি সমকালীনভাবে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই)-এর ওপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। উভয়ই সিপিআই মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কয়লার দাম ১০ শতাংশ বাড়ে, তবে সিপিআই মুদ্রাস্ফীতি ০ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। আবার এলএনজিএর দাম ১০ শতাংশ বাড়লে সিপিআই মুদ্রাস্ফীতি ০ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অপরিশোধিত তেল ও কয়লার বাজারে অস্থিরতা একই সময়ে বিনিময় হারের ওপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, যদি অপরিশোধিত তেলের দাম ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, তবে বিনিময় হার শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ বাড়ে। আবার যদি এলএনজি দাম ১০ শতাংশ বাড়ে, তবে বিনিময় হারও একইভাবে শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া অপরিশোধিত তেল, এলএনজি এবং কয়লার বাজারে অস্থিরতা নেট রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অপর এক গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, জ্বালানি মূল্য পরিবর্তনের প্রতি এক স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন ধনাত্মক প্রভাব সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। এটি নীতি গ্রহণের প্রক্রিয়ায়ও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম। সব ধরনের জ্বালানি মূল্যের আকস্মিক পরিবর্তন প্রতিক্রিয়ায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। যেমন ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট, ২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারি, ২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি সংকটে জ্বালানির মূল্য ওঠানামা ছিল সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক পরিবর্তনের প্রধান উৎস। জ্বালানি মূল্য ওঠানামা দীর্ঘমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে, যা সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারি নীতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, যাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব শক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। এর ফলে পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে, অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকবে এবং টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে। গবেষণায় সুপারিশ দিয়ে বলা হয়েছে, জ্বালানির উৎস বৈচিত্র্যকরণ, কার্যকর মুদ্রানীতি সামঞ্জস্য, গতিশীল মূল্য সমন্বয় প্রক্রিয়া, জ্বালানি পরিকল্পনার পুনর্মূল্যায়ন, কৌশলগত জ্বালানির মজুদাগার গঠন, জ্বালানি অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দক্ষ প্রযুক্তি গ্রহণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ জরুরি।

অন্য আরেক গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে প্রাতিষ্ঠানিক মানের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অর্থনীতির বিভিন্ন সমস্যা স্পষ্ট। ২০১০ সালের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ দ্রুত বৃদ্ধির (বিশেষ বিধান) আইন (২০২১ সালে সংশোধিত) প্রতিযোগিতামূলক বিডিং উপেক্ষা করে উচ্চ বিদ্যুৎ মূল্য নির্ধারণ করে এবং ২০০৬ সালের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনকে অগ্রাহ্য করে। ফলে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দুর্বল করেছে। ২০২৩ সালের বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধনের মাধ্যমে সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে একতরফাভাবে জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করতে পারে, যা জনশুনানি বাদ দিয়ে অস্বচ্ছ বাজার সৃষ্টি করেছে। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে দুর্বল সমন্বয় নীতিগত সামঞ্জস্যের অভাবকে নির্দেশ করে এবং দীর্ঘমেয়াাদে নীতির কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সেডা) এর ক্ষমতা সীমিত এবং বিপিডিবির নবায়নযোগ্য জ্বালানি শাখা সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রাধান্য বিস্তার করায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২৫ সালে জ্বালানি খাতের ভর্তুকির ৮০ শতাংশ (৩২,০০০ কোটি টাকা) ক্যাপাসিটি চার্জে বরাদ্দ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলোর সুবিধা নিশ্চিত করেছে। কয়লা, গ্যাস, এলএনজি এবং পারমাণবিক প্রযুক্তি সোলার প্রযুক্তির তুলনায় বেশি রেন্ট সিকিং-এর সুযোগ দেয়। গত ১৪ বছরে ১ ট্রিলিয়ন টাকার বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদক (আইপিপি) এবং ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পেয়েছে।

অংশীজন জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন বাংলাদেশে বর্তমান নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ও প্রণোদনা কার্যকর নয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় সৌরচালিত সেচ ব্যবস্থার বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম