ব্যাটারিচালিত রিকশা
বন্ধের নির্দেশ পুনর্বিবেচনাসহ ১২ দাবি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা (আদেশ) পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ। অন্যথায় আগামী ৩০ নভেম্বর ঢাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে দেশের ৬৪ জেলায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। এদিকে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহারসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন। এসব দাবি পূরণে সংগঠনটি আজ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণ-অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার প্যাডেলচালিত রিকশা সমিতির করা একটি রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রাজধানীতে তিন দিনের মধ্যে অটোরিকশা বন্ধের নির্দেন দেন। এর পরদিনই সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল অব্যাহত রাখার দাবিতে রাজধানীর দয়াগঞ্জ মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চালকরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ মিরপুর, মালিবাগ, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, আগারগাঁও, নাখালপাড়া, রামপুরা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। সর্বশেষ শুক্রবার রাজধানীর জুরাইনে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শনিবার মানববন্ধনে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন সমস্যা সমাধানের দাবিতে সাত দিনের আলটিমেটাম দেন। তিনি বলেন, আমরা মহাসড়কে উঠতে চাই না। বাইলেন সার্ভিস করে দিন। আমরা ধৈর্য ধরে আন্দোলন করছি, এখনো সারা দেশে করিনি। সারা দেশে প্রায় ৬০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশার সঙ্গে ৩ কোটি মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল। তাই আপনারা সাবধান হয়ে যান। অবিলম্বে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের আলোকে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের অবদান মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ৩৬ দিনের আন্দোলনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা আহত-নিহতদের আনা-নেওয়া করেছেন। এর দায়ে উত্তরায় আমাদের এক ভাইকে গুলি করে পা ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছিল। অভ্যুত্থানে যে ১৪৮১ জন মানুষ মারা গেছে, তার মধ্যে দুই-আড়াইশ ছাত্র। বাকিরা শ্রমজীবী, তার মধ্যে রিকশা শ্রমিকও আছেন।
এদিকে একইদিন রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন। সংগঠনটি আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণ-অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নাদিম বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে হাইকোর্টের সাম্প্রতিক আদেশের ফলে ঢাকা শহরের ৮ থেকে ১২ লাখ মানুষ কর্ম হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। হাইকোর্টের আদেশের প্রতিবাদে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজধানীতে বিক্ষোভ করছে।
তিনি বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানবাহন পরিচালনাকারী শ্রমিকরা সরকারকে রাজস্ব দিতে ইচ্ছুক। রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে লাইসেন্স ইস্যু করা হলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব আয় হবে।
তাদের ১২ দাবি হলো-১. ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। ২. দেশের সড়ক উপযোগী নকশায় আধুনিকায়নসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের বিআরটিএ’র লাইসেন্স ও যৌক্তিক রুট পারমিট দিতে হবে। ৩. চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। ৪. ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচলে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ৫. শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সড়ক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা কমিটি গঠন করতে হবে। ৬. সড়কের লেন পদ্ধতি সচল ও সার্ভিস লেন নির্মাণ করতে হবে। ৭. আন্দোলনে আটক ও গ্রেফতারদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। ৮. ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে গণপরিবহণ ও শিল্প হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। ৯. জব্দ সব ব্যাটারিচালিত যানবাহন ও ব্যাটারি মালিকের কাছে হস্তান্তর এবং নিলাম করা ব্যাটারির মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। ১০. চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করতে হবে। ১১. শ্রমিকদের ওপর সব জুলুম-নির্যাতন-চাঁদাবাজি-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ১২. মানবিক বিবেচনায় ব্যাটারিচালিত যানবাহনের পুঁজিকে নিরাপদ করে পর্যায়ক্রমে প্যাডেলচালিত বাহনের শ্রম থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে।