Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশ সংশোধনীর খসড়া

দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করতে পারবেন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করতে পারবেন

সংগৃহীত

কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থাকলে এবং আদালত তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করতে পারবেন। এমন বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়াটি অনুমোদনের জন্য বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এসব তথ্য জানান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন : আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন তিনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে সর্বত্রই একটি প্রশ্ন শোনা যায়, সেটি হলো তারা কত দিন থাকবে, তাদের মেয়াদ কত দিন হবে, নির্বাচন কবে হবে? এ বিষয়ে জবাব দিতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন এটি আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তবে আপনাকে একটি বিষয় বলি, আমরা মোস্ট এসেনশিয়াল (অতি প্রয়োজনীয়) কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়া হবে। আমরা জাস্ট এই জিনিসটা চাই না যে আগের মতো কোনো ভুয়া নির্বাচন হোক। আর এটা চাই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কেউ আবার ভুয়া নির্বাচন করার সুযোগ পাক। এটা ছাড়া আর কোনো স্বার্থ নেই। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন, তাদের অধিকাংশই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজ পেশায় ফিরে যাওয়ার জন্য আগ্রহী। কিছু আইনগত সংস্কার কাজ করার কথা বলতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ কিছু মারাত্মক বিচ্যুতির কথা দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন বলেছিল। সুশীল সমাজও বিভিন্ন সময় বলেছিল। সরকার যখন এটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নিল তখন সরকার চেয়েছে বিচারটি যেন দেশীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হয়। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে যেন সুবিচার সুনিশ্চিত করা হয়। এজন্য ব্যাপক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একটি অসাধারণ সংশোধনী করার জন্য চেষ্টা হয়েছে যেটি এর বিচারের গুরুত্ব, যৌক্তিকতা এবং গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে দেবে।

আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, আগামীকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সেই সংশোধনীর খসড়া তোলা হবে। উপদেষ্টা পরিষদ এটি গ্রহণ করলে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এটি আইনে পরিণত হবে। তারপর প্রক্রিয়াগত কারণে যত দিন লাগে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়ায় রাজনৈতিক দলের বিচারের ধারা যুক্ত হচ্ছে কিনা-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এ বিষয়ে একটি দিন অপেক্ষা করেন, দেখবেন। তখন এ বিষয়ে সাংবাদিকরা আবার প্রশ্ন করলে আইন উপদেষ্টা বলেন, সংশোধনী তো উপদেষ্টা পরিষদকে গ্রহণ করতে হবে। তখন সাংবাদিকরা আবারও জানতে চান, খসড়ায় কী আছে সেটি যদি বলেন। তখন আসিফ নজরুল বলেন, প্রস্তাবে যেটি আছে, সেখানে আদালতকে সেভাবে সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। আদালত যদি মনে করেন তাহলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তারা সুপারিশ করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন। এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট যেসব কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক দলের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমোদন রয়েছে। যেমন ধরুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আইনে দেওয়া আছে। উপদেষ্টা আরও বলেন, এই উদাহরণ আপনাদের বোঝার জন্য বলেছি। এগুলোর কথা খসড়ায় উল্লেখ করা নেই। আমি বলতে চাচ্ছি আদালত যদি মনে করেন তাহলে করতে পারেন। বিষয়টি এমন নয় যে আদালত শাস্তি দেবেনই। আদালত যদি মনে করেন শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন তাহলে শুধু সুপারিশ করবেন। বাস্তবায়ন করবেন যাদের আইনে এখতিয়ার দেওয়া আছে তারা। এটা খসড়ায় রাখা হয়েছে। তবে এটি উপদেষ্টা পরিষদের ওপর নির্ভর করে, পরিষদ এটি রাখবে কিনা বা কি ফর্মে রাখবে। তা এখনও পরিষ্কার নয়।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করা উচিত-আপনি (শেখ হাসিনা) সবাইকে বিপদে ফেলে নিজের আত্মীয়স্বজনসহ পালিয়ে গেলেন কেন? সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কলরেকর্ড ফাঁস প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। উপদেষ্টা আরও বলেন, এসব যদি সত্যিই উনার (শেখ হাসিনা) কনভারসেশন হয়ে থাকে, এগুলো দেশকে অস্থিতিশীল করা, মানুষকে প্ররোচিত, উত্তেজিত করা, বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে করা হয়। আইন উপদেষ্টা বলেন, সততার সঙ্গে কোনোরকম চালাকি নয়, কোনো উপদেষ্টা নয়, একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে আমার মনে হয়, আওয়ামী লীগের নেতাদের জিজ্ঞেস করা উচিত, আপনি আপনার বৃহত্তর পরিবারকে নিয়ে, কাউকে না জানিয়ে এভাবে যে পালিয়ে গেলেন এবং আমাদের প্রতিনিয়ত এভাবে যে উসকানি দেন, বিক্ষোভ করার জন্য, সন্ত্রাস এবং উসকানিমূলক কাজ করার জন্য, এই বিষয়ে আপনার ব্যাখ্যা কি?

আইন উপদেষ্টা বলেন, উনি উনার ভাগনে, পরিবারের লোকজনদের সরকার পতনের ২-৩ দিন আগে নিরাপদে কেন বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উচিত, উনার পারসোনাল জবাবদিহিতা চাওয়া। তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগের মধ্যে যদি কোনো নিরীহ নেতাকর্মীও থেকে থাকেন, প্রত্যেকেই বিপদে পড়ছেন, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামল, বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করার কারণে। শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে একজন না একজনের প্রশ্নটা করা উচিত, আপনি আমাদের না জানিয়ে এভাবে বিপদের মধ্যে ফেলে পালিয়ে গেলেন কেন?

শেখ হাসিনার ফোন আলাপ বন্ধে কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কিনা-একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে আসিফ নজরুল ওই সাংবাদিকইকে পালটা প্রশ্ন করেন আপনারা কি বন্ধ চান? আপনি যেহেতু প্রশ্ন তুলেছেন এটা আমার মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয় তবুও আমরা এটা আলোচনা করব।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রেড অ্যালার্টবিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে ড. আসিফ নজরুল বলেন, রেড অ্যালার্ট তো অন্য মেকানিজম। রেড অ্যালার্ট হচ্ছে আন্তর্জাতিক যে পুলিশি সংস্থার সদস্য, আমার দেশে আমি যদি কাউকে না পাই, তাহলে রেড অ্যালার্ট জারি করতে পারি। রেড অ্যালার্ট জারি করতে পারি উনি হয়তো অন্য কোনো দেশে, অন্য কোথাও যেতে পারেন। এটা দিয়ে সবাইকে সজাগ করে রাখলাম। সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, এখন আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিলে সবাই সমালোচনা শুরু করবেন। প্রশ্ন উঠবে পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিল, আগের পুলিশ কিনা। এ ধরনের বিষয় ম্যানেজ করা খুবই টাফ। তবে আমার মনে হয় এ ধরনের হয়রানিমূলক ও জিম্মি করা আন্দোলনের বিপক্ষে সাধারণ জনমত অত্যন্ত শক্তিশালী হচ্ছে।

দেশে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন চলছে, এগুলো নিয়ন্ত্রণে আপনাদের কি উদ্যোগ আছে-এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, যে কেউ ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন। কিন্তু এভাবে রাস্তা ব্লক করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা, জিম্মি করা, অসহনীয় ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করা আন্দোলনকারীরা যদি এসব অব্যাহত রাখেন, তাহলে আমি মনে করি সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।

তিনি বলেন, আপনারা আন্দোলন করবেন করেন কিন্তু সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে নয়। গতকাল আমি শুনেছি ট্রেনে ঢিল মেরে নারী, শিশুদের আহত করা হয়েছে। এটা কি ধরনের আন্দোলন। কোথাও দাঁড়িয়ে বলে দেবেন একটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে দেবে, মন চাইলে এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন না, আমার রেজাল্ট বদলিয়ে দিতে হবে-এটা কি ধরনের আন্দোলন। 

অন্যায্য আন্দোলনের বিপক্ষে রাষ্ট্র কেন শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, রাষ্ট্র যদি শক্ত হয়, দু-একজন যদি আহত হন, গ্রেফতার হন তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের কষ্ট তৈরি হবে। যে আপনারা বিগত সরকারের মতো দমন নীতিতে যাচ্ছেন কিনা? সে বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হয়। আমরা যেহেতু গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা নিয়েছি, এখানে অনেক চিন্তা করতে হয়। সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে কিনা সেটা দেখতে হয়। এতে সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে কিনা, পেয়ে বসছে কিনা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও অসহায়ত্ব বোধ করছেন, এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, কিছুটা তো পেয়ে বসছে, আপনারা যে এ ধরনের প্রশ্ন করছেন, যখন সবার মধ্যে এই বোধ জাগ্রত হবে আমরা বেশি ভালোবাসা দিচ্ছি। তখন আমাদের শক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমরা শক্ত হলে ভালোভাবেই হব।

আসিফ নজরুল বলেন, কোনো অন্যায় করিনি, ভুল করতে পারি। আমাকে তিনটি মন্ত্রণালয় দেখতে হতো। ২ সপ্তাহ হলো দুটি মন্ত্রণালয় দেখছি। তাই শতভাগ এফোর্ড দিয়ে কাজ করতে পারিনি। প্রতিদিন গড়ে ১২ ঘণ্টা কাজ করেছি। যোগ্যতা কম থাকতে পারে, অভিজ্ঞতা কম থাকতে পারে। কিন্তু প্রচেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার অতৃপ্তির অনেক জায়গা রয়েছে। আমলাদের কাজের পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা করেন তিনি। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, এতদিনে (সরকারের ১০০ দিন) কোন কাজটি করতে পারেননি বলে মনে করেন? জবাবে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল হাসতে হাসতে বলেন, যা যা করেছি, তার বাইরে কিছুই করতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রমের অংশ হিসাবে বিচারক রেজিস্ট্রেশন বিভাগের কর্মকর্তা আইন মন্ত্রণালয় এবং অধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যসহ অর্জিত সম্পত্তির হিসাব আমরা সংগ্রহ করেছি। বর্তমানে সম্পত্তির হিসাব যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সম্পদের হিসাব নেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ কী জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। তবে এখন বলতে চাচ্ছি না। বিচার বিভাগে অনেকেই সৎ থেকে কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে যদি দুর্নীতিপ্রবণ লোক থাকে তাহলে বিচারকদের মধ্যেও থাকবে, সব জায়গায় আছে। তবে আমরা কাউকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করতে চাই না।

বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় করার বিষয় জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, এটা নিয়ে বিভিন্ন রকমের মতামত রয়েছে। উনাদের চিঠিতে বলা হয়েছে মাসদার হোসেনের রায় কার্যকর করার জন্য পৃথক সচিবালয় দরকার। কিন্তু মাসদার হোসেন নিজে আমাকে বলেছেন, মাজদার হোসেন রায়ে পৃথক সচিবালয়ের কথা বলা নেই। তিনি বলেন, উচ্চ আদালত, নিু আদালত এবং স্টেকহোল্ডারদের নানা ধরনের মতামত রয়েছে। আমরা খুব বড় পর্যায়ে স্টেকহোল্ডারদের (অংশীজনদের) সঙ্গে মিটিং করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অপর এক প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, সরকারি আইন কর্মকর্তাদের পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এই আইনটি যাতে এ বছরের মধ্যে করে যেতে পারি, সেই চেষ্টা করছি।

অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধতা দিতে একটি অধ্যাদেশ হচ্ছে-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইন উপদেষ্টা বলেন, এ ধরনের কোনো অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। তবে পত্রিকা এমনভাবে লিখে দিয়েছে যে, চূড়ান্ত হয়ে গেছে। কথাবার্তা চলছে, চিন্তা চলছে। এটি উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। সংসদ সচিবালয় নিয়ে এক অধ্যাদেশ হয়েছে-এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা হওয়ার পর তো আপনারা আমাকে স্পিকার বানিয়ে দিয়েছেন। অদ্ভুত ব্যাপার। কেউ কেউ তো আবার, যাই হোক আর বলতে চাই না। পরিষ্কার করে বলি-সংসদের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম রয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে সেটা কাউকে অর্পণ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে কাউকে স্পিকার বানানো হয়নি।

হয়রানিমূলক মামলা নিয়ে সরকার বিব্রত জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, হয়রানিমূলক মামলা নিয়ে নানা রকম প্রতিকার ব্যবস্থার কথা চিন্তা করেছি। একবার সিদ্ধান্ত নিলাম সিআরপিসি পরিবর্তন করে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া হোক, উনারা এফআইআর করার আগে তদন্ত করবেন। তখন বিভিন্ন পক্ষ থেকে বলা হলো-এটা করা হলে পুলিশকে দুবার স্বেচ্ছাচারিতা করার সুযোগ দেওয়া হবে। যদি পুলিশ হয়রানি করে। এখন যেটা চিন্তা করছি এসপি, ডিসি, জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তাদের নিয়ে কোনো কমিটি করা যায় কিনা। এফআইআর করার আগে এই কমিটি যাচাই-বাছাই করে দেবে। এটা আমাদের করতে হবে, কারণ আজ যারা হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলা করছেন, বাণিজ্যমূলক মামলা করছেন, কাউকে কাউকে নাকি থ্রেটও দেওয়া হচ্ছে টাকা না দিলে মামলা করবেন। আপনারা শুধু মনে রাখবেন, আমি যদি এই মন্ত্রণালয়ে থাকি আপনাদের (মিথ্যা মামলা করা ব্যক্তি) কীভাবে শাস্তি দেওয়া যায় সেটার আইন আমি খুঁজে বের করব। এক প্রশ্নের জবাবে সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ট্রাইব্যুনালের মতামতের ভিত্তিতে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে চাইব। মামলার যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো বন্দিকে ফেরানোর জন্য অনুরোধ করা যাবে।

এ সময় আমলাতান্ত্রিক জটিলতার একটি ছোট উদাহরণ টেনে আসিফ নজরুল বলেন, তার দপ্তরে একবার দুই উপদেষ্টা আসেন। তিনি তাদের বলেন, পূর্ণিমা দোকানের (গুলিস্তান এলাকায় অবস্থিত) জিলাপি ও শিঙাড়া খুব মজার। সেগুলো খাবেন কিনা। তারা বললেন, খাবেন। এরপর তা আনতে দিলেন। সেগুলো আনতে এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিট সময় লাগল। আসলে সময় লাগার কথা ১৫ মিনিট। তখন তিনি খতিয়ে দেখলেন, কেন এত সময় লাগল। উপদেষ্টা বলেন, দেখা গেল, আমি উনাকে বলেছি, উনি উনাকে বলেছেন। পঞ্চম ব্যক্তি যখন আনতে গেছেন, তখন উনি জানেনও না যে এটি জরুরি বা আইন উপদেষ্টা এটা চাচ্ছেন। উনি উনার ইচ্ছেমতো এনেছেন। এটা একটা উদাহরণ নয়। এটা হচ্ছে, কীভাবে আমাদের প্রশাসন চলছে। 


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম