Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

অর্থ উপদেষ্টার প্রেস ব্রিফিং

খেলাপিদের ঘটিবাটি বিক্রি করে অর্থ আদায় করতে হবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খেলাপিদের ঘটিবাটি বিক্রি করে অর্থ আদায় করতে হবে

সংগৃহীত

ঘটিবাটি বিক্রি করে খেলাপিদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে ব্যাংকগুলোকে বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার অর্থ বিভাগের সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ কথা জানান।

তার মতে, বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও ভেতরে আর্থিক খাতের অবস্থা ভয়াবহ। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ব্যাংক খাত, পুঁজিবাজার ও রাজস্ব আদায় নিয়ে। তবে কয়েকটি ব্যাংক আর্থিক সংকটে থাকলেও কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘মালটিপারপাস হল’ এ ওই সংবাদ সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

খেলাপি ঋণ আদায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে পৃথক আদালত প্রতিষ্ঠা করা সংক্রান্ত এক প্রশ্ন করলে বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে রিট মামলা নিষ্পত্তির জন্য দুটি বেঞ্চ আছে। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল ও গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে যাতে বেঞ্চগুলো আগামী তিন মাস শুধু রিট মামলাগুলো পরিচালনা করে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কিছু ব্যাংক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে, ব্যাংক খাতের যেসব খারাপ সিনড্রোম ছিল সেগুলো কারেকশন হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠছে। কোনো ব্যাংক বন্ধ করার ইচ্ছা সরকারের নেই। আমানতকারীদের সুরক্ষা দেওয়া হবে। ব্যাংক খাতে হারানো আস্থা ফিরে আনা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। ইতোমধ্যে দু- একটি ব্যাংককে অর্থায়ন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসাবে অর্থ উপদেষ্টা মনে করেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক তাদের নিয়ম পালন করেনি। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি মনিটরিং করার কথা থাকলেও তা করেনি। এটিই সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। তবে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংস্কার দরকার বলে মনে করেন। এ সময় তিনি বলেন, গভর্নর দক্ষ ব্যক্তি হলেও এর আগে ব্যবস্থাপনা দুর্বল ছিল।

উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংক খাতে পলিসিগত ভুল ছিল, চেষ্টা করছি ঠিক করার। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ২ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করে কিভাবে ঋণের পুনঃতফসিলি করা হয়েছে, যেখানে এটি ১০ শতাংশ ছিল। আইন ও নীতি সংশোধন করে এখন সংস্কার করতে হবে । তবে আমি গভর্নর থাকা অবস্থায় খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, এখন যা দুই লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতির আকার বেড়েছে। তাই বলে খেলাপি ঋণ এত বাড়ার কথা নয়।

গ্রাহকদের হয়রানির বিষয়টি সামনে এনে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, একজন গ্রাহক এক লাখ টাকা তুলতে গেলে ২০ হাজার টাকা দেবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যাংকের টাকা কে চুরি করেছে সেজন্য গ্রাহক দায়ী নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক বলেন, যেসব দুর্বল ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না, তারা যাতে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারে সেজন্য খুব দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ব্রিফিংয়ে ব্যবসায়ীদের অভয় দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ভালো ব্যবসায়ীদের ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ঋণ নিয়ে ঠিকমতো ফেরত এবং ঠিকমতো কর দেন, তাদের কোনো সমস্যা হবে না। তারাই ভীতু হয়ে আছেন, যারা বিগত সরকারের সময়ে নানাভাবে অনেক কিছু করেছেন।

সরকারের ব্যয় প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অত্যাবশকীয় ব্যয় ছাড়া অন্যসব ব্যয় প্রস্তাব গ্রহণ করা হচ্ছে না। সরকারি ব্যয় কৃচ্ছ সাধন করা হচ্ছে। কোনো ধরনের গাড়ি কেনা হচ্ছে না। শুধু নষ্ট হওয়ার কারণে পুলিশের গাড়ি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়ানো এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ। সেটি না বাড়াতে পারলে উন্নয়ন খাতে ব্যয় সম্ভব হবে না।

রাজনৈতিক বিবেচনা বা অহেতুকভাবে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে কোন প্রকল্পের কতটা অগ্রগতি সেটিও দেখা হচ্ছে।

পুঁজিবাজার ঠিক করতে নতুন কোম্পানি আনা হবে। তবে বিমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। সেগুলো দেখা হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব আদায় এখন চ্যালেঞ্জ। লোকবল বেশি দিলে ভালো কাজ হবে সেটি নয়। সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। হয়রানি প্রতিরোধ ও স্বচ্ছতা বাড়াতে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে এনবিআরকে। কর আদায় এবং কর আরোপ এজন্য পৃথক দুটি সংস্থা করা যায় কিনা ভাবা হচ্ছে। কারণ একজন ব্যবসায়ীর ওপর কর চাপিয়ে তারাই আবার কর কমানোর প্রস্তাব দেয় ভিন্নভাবে। পৃথক অফিস হলে সেটি হবে না।

এদিকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৬০ কোটি এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৫০ কোটি মার্কিন ডলার দিচ্ছে বলে ওই সংবাদ সম্মেলনে জানান অর্থ সচিব। তিনি আরও বলেন, অতিরিক্তি সহায়তা হিসাবে আরও ১০০ কোটি ডলার নিয়ে আলোচনা চলছে। আগামী ডিসেম্বরে আইএমএফ প্রতিনিধি দল ঢাকা আসবে। তখন আলোচনা করে চূড়ান্ত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ সচিব বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের প্রদত্ত গাড়ি সঠিক ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর অপব্যবহার রোধ এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী জানান, প্রতি বছর ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া সংশোধন করে আরও ৭২ কোটি ডলার সংস্থান করা হবে। এটি আগামী ডিসেম্বর নাগাদ চূড়ান্ত হবে। তিনি বলেন, এই দাতা সংস্থা গ্যাস খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেওয়া শুল্ক সুবিধা বাজারে কাজে আসছে না প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটি রোজা পর্যন্ত বহাল রাখা হবে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা মানুষকে ধৈর্য ধরতে বলি। কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে ধৈর্য ধরা কঠিন। এক হাজার টাকা নিয়ে বাজারে গেলে অল্প কিছু বাজার করা যায়। আমিও সেটা টের পাই, আপনারা সবাই টের পান। আমিও তো বাজারে যাই, আমারও দুঃখ লাগে। সাধারণ মানুষের জ্বালা আছে, তারা সেটা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো: আবদুর রহমান খান বলেন, ডিমের দাম কমেছে, চিনিতে ১৫ টাকা নিচে নেমেছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এই সময়ে দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক পণ্যে সেটি কার্যকর হয়নি।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কিছু সংস্কার আছে যা মধ্য মেয়াদে ছাড়া শেষ হবে না। সেটি জোর করে স্বল্পমেয়াদে করা যাবে না। আর কিছু কাজ দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কার প্রয়োজন। সেগুলোয় হাত দিচ্ছি না। এটি আমাদের কাজ নয়। যে সরকার আসবে তার কাজ। স্বল্পমেয়াদি সংস্কারের পাশাপাশি আমরা পায়ের ছাপ রেখে যাব। আমরা যে সংস্কারের রূপরেখা দিয়ে যাব, পরবর্তী যে সরকার আসবে তারা সেটি বাস্তবায়ন করবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম