সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত
আন্দোলন স্থগিত করলেন তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীরা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সংগৃহীত
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলন আপাতত স্থগিত করেছেন শিক্ষার্থীরা। কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা সম্ভব কি না, তা যাচাইয়ের জন্য কমিটি গঠনের আশ্বাস দেওয়ায় আন্দোলন স্থগিতের কথা জানান তারা। মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলামের বৈঠকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এতে আপাতত রাজপথে ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু মহাখালী’ কর্মসূচি স্থগিত থাকবে এবং কলেজের অন্যান্য কার্যক্রম চলমান থাকবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে তিতুমীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে কমিটি গঠন করবে সরকার। কমিটি যাচাই-বাছাইয়ের পর সিদ্ধান্ত নেবে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা যায় কি না। এই সাত দিন সড়কে কোনো আন্দোলন করা হবে না। তবে ক্যাম্পাসের ভেতর আমাদের কার্যক্রম চলবে। ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষা আগের মতোই চলবে। যদি সাত দিনের মধ্যে কোনো অগ্রগতি না হয় তবে আবারও রাজপথে নামব আমরা।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা উত্তরে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। আজকের মিটিংয়ে এই যুক্তি দেখিয়েছি আমরা। সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে সাত কলেজের আন্দোলন যেটি চলে আসছিল সেটি এখন ছয় কলেজের আন্দোলন। আমরা আর তাদের সঙ্গে নেই। তিতুমীর আলাদা করে বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করছে।
ট্রেনে ইট-পাটকেল মারার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন এই শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, এ ঘটনায় ট্রেনের চালকও দায়ী। আমরা আহতদের চিকিৎসা ব্যয় দিতে প্রস্তুত। ছাত্রদের মধ্যে যারা এই ঘটনায় দায়ী তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীদের ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ক্যাম্পাস থেকে সচিবালয়ে যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণের প্রেক্ষিতে বৈঠকের জন্য। ১৪ সদস্যের এই দলে ছিলেন মাহমুদ হাসান মুক্তার, মোশাররফ রাব্বি, নায়েক নূর মোহাম্মদ, আব্দুল হামিদ নূরুদ্দিন জিসান, মতিউর রহমান জয়, জাহাঙ্গীর সানি মেহেদী হাসান মাল, আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ বেল্লাল, আল নোমান নিরব, হাবিবুল্লাহ রনি, তোয়াহা ও কাউসার।
এদিকে এদিন সকাল থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে ‘ক্লোজডাউন’ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের ফটকে অবস্থান নিয়ে ‘তিতুমীরের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘টিসি না টিইউ’, ‘টিইউ টিইউ’, ‘ডিমান্ড টু গুলশান, তিতুমীর ভার্সিটি’, ‘ডিমান্ড টু বনানী, তিতুমীর ভার্সিটি, ‘অধ্যক্ষ না ভিসি, ভিসি ভিসি’, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে, আমরাই থাকব’, ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় কলেজের বাইরে ব্যাপকসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন দেখা যায়।
এদিন সকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ সদস্যদের প্রবেশের জেরে উত্তেজনা বিরাজ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কলেজের মূল ফটকের ভেতরে পুলিশ সদস্যরা প্রবেশ করেন। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে তারা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে বাইরে অবস্থান নেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়া মুয়াজ বলেন, ক্যাম্পাসের ভেতরে কীভাবে পুলিশ ঢুকল এটার জবাব দিতে হবে। এর প্রতিবাদে আমরা ক্যাম্পাসের ভেতরে বিক্ষোভ মিছিল করেছি।
এর আগে সোমবার মহাখালীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক সাড়ে ৪ ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। কিছু সময় রেলপথও অবরোধ করে রাখেন তারা। এতে ঢাকার সঙ্গে দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে মহাখালী রেললাইন ক্রসিংয়ে মঙ্গলবার সেনাবাহিনী মোতায়েন দেখা যায়।
সম্প্রতি তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীরা তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে তিন দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে ৭ কলেজ থেকে তিতুমীর কলেজকে পৃথক করতে হবে। তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের লক্ষ্যে কমিশন গঠন করতে হবে। তিতুমীরকে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
ওভারনাইট কোনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব নয়-আইন উপদেষ্টা : ওভারনাইট কোনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব নয়। এটি অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলন না করার পরামর্শ দিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ট্রেনে আক্রমণ করে নারী-শিশুকে আহত করা অমানবিক। সরকারকে আন্দোলনকারীরা কিছুটা পেয়ে বসেছে। তবে সরকার যখন কঠোর হবে তখন কঠোর হওয়ার মতোই হবে।