৩১ দফা নিয়ে কর্মশালায় তারেক রহমান
ষড়যন্ত্র চলছে জনগণকে সচেতন করতে হবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সংগৃহীত
ষড়যন্ত্র এখনো থেমে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে দেশের কোথাও ষড়যন্ত্র চলছে। তাই জনগণকে সচেতন করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে রাখতে হবে, থাকতে হবে। একই সঙ্গে দেশ ও জনগণকে নিয়ে আমাদের যে লক্ষ্য, সেই ৩১ দফার প্রতিটি কথা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমাদেরকে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনপ্রতিনিধিরা জানবে যে, তাদেরকে জনগণের কাছে ফিরে যেতে হবে। সেটি ভোটের জন্য হোক বা জবাবদিহির জন্য হোক।
মঙ্গলবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটি আয়োজিত ঢাকা বিভাগীয় কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক কর্মশালায় ঢাকা বিভাগের প্রতিটি মহানগর, জেলা, উপজেলা মূল দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা অংশ নেন। বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির নেতারা দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেন। এ সময় রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও প্রশিক্ষকরা। এর আগে সকালে কর্মশালা উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তারেক রহমান বলেন, আজকের পর থেকে আমাকে দেশনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক বলবেন না। তিনি এ সময় উল্লেখ করেন, ‘একজন সহকর্মী হিসাবে অনুরোধ রইল এবং আপনাদের নেতা হিসাবে দয়া করে আমার নামের সঙ্গে আজকের পর থেকে দেশনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক ব্যবহার করবেন না।’
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখেছি, অনেকেই অনেক সংস্কারের কথা বলছে। রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা আমাদেরকে (নেতাকর্মী) মাঠে নিয়ে যেতে হবে। শুধু ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। দফায় উল্লেখ থাকা বিষয়গুলো প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে। বিএনপির মূল দলের নেতৃত্বে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন মিলে ভাগে ভাগে গ্রাম থেকে ইউনিয়নে ছোট ছোট উঠান বৈঠকের প্রস্তুতিও নিতে হবে।
তিনি বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমরা যদি দল ও নেতাকর্মীদের ঐক্য বজায় রাখতে পারি, জনগণের চাহিদা অনুযায়ী চলতে পারি, তাহলে বিএনপি সরকার গঠন করবে। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে নেতাকর্মীদের নেতৃত্বের ওপর। অতীতে যেভাবে আমরা ১৯ দফার আলোকে দেশ পরিচালনা করেছি, এর সঙ্গে আরও কিছু ধারা যোগ করে ৩১ দফা দিয়েছে। যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে আমরা দেশ পরিচালনা করতে চাই। প্রথমে ছিল ২৭ দফা, পরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যেসব দল আমাদের সঙ্গে শরিক ছিল, তাদের মতামতের ভিত্তিতে ৩১ দফা গঠিত হয়েছে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বাংলাদেশে যত দল আছে, তাদের সম্মিলিত চিন্তার ফসলই হচ্ছে ৩১ দফা।
তিতুমীর কলেজের ছাত্রদলের এক নেতার বক্তব্যের উদ্ধৃত করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি যদি না হয়, তাহলে যে সংস্কারই করি না কেন, কোনোটি কাজে লাগবে না। রাজনৈতিক মুক্তি হচ্ছে জনগণের কাছে জবাবদিহি। যার যা ইচ্ছা করে যাবে, সেটি হবে না। সরকারি দল, বিরোধী দল, এমপি, মন্ত্রী যেই হোক, জনগণের কাছে এর জবাব দিতে হবে। আর এটি নিশ্চিত করতে হলে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভোটের মাধ্যমেই জবাবদিহি তৈরি হবে। যার জন্য আমাদের হাজারো সহকর্মী গুম, খুন হয়েছে। আমরা যুদ্ধ করেছি ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কাজেই যে কোনো মূল্যে এ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে।
তিনি বলেন, একটি রাজনীতি রুগ্ণ হলে অর্থনীতি রুগ্ণ হয়। রাজনীতি ও অর্থনীতি রুগ্ণ হলে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা-সব ব্যবস্থাই রুগ্ণ হবে। মানুষ কোনো সুফল পাবে না। কাজেই প্রথম কাজ হচ্ছে দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, জবাবদিহি প্রতিষ্ঠিত করা। স্বৈরাচারের সময়ে দেশে কোনো জবাবদিহি ছিল না, যার কারণে মানুষ গুম-খুন হয়েছে, নিশিরাতে ভোট হয়েছে, ডামি নির্বাচন হয়েছে। জবাবদিহি ছিল না বলেই প্রশাসন ও বিচার বিভাগের অবস্থার অবনতি হয়েছে। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এসব কিছু আমাদের ঠিক করতে হলে অবশ্যই জবাবদিহিকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেটি সম্ভব সঠিক ভোট প্রয়োগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যে কোনো মূল্যে শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। প্রাইমারি শিক্ষাব্যবস্থার ওপর বেশি জোর দিতে হবে। শিক্ষকদের ওপর জোর দিতে হবে। মৌলিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে হবে। দুর্নীতি নির্মূল করতে হলে প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করতে হবে। শিক্ষার পাশাপাশি জনগণের স্বার্থের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে হবে।
কর্মসংস্থানের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, দেশে এক কোটির বেশি বেকার রয়েছেন। আমাদের ৩১ দফায় উল্লেখ আছে, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে তাদের এক বছর পর্যন্ত সহায়তা করব বা ভাতা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। আমাদের এক কোটির বেশি মানুষ প্রবাসে আছেন। তাদের মধ্যে অনেকই কর্মসংস্থান সম্পর্কে অভিজ্ঞ নন, তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের গার্মেন্টস ও রেমিট্যান্সের বাইরে নতুন সেক্টর তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি করার সুযোগ আছে। আমি চেষ্টা করি, হয়তো অত দ্রুত পারব না। অনেকাংশে সমস্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম হব। রাতারাতি সব হবে না। দেশ সবার, প্রত্যেকের অবস্থান থেকে একটু একটু এগিয়ে আসি। প্রত্যেকে যদি চেষ্টা করি, তাহলে ভালো কিছু করতে সক্ষম হব।
এর আগে প্রশ্নোত্তর-পর্বে তারেক রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুবারের বেশি হতে পারবেন না, তবে সংসদ-সদস্যের মেয়াদ নির্ধারণের বিষয়টি জনগণের ওপর নির্ভরশীল। যদি জনগণ কাউকে বিশ্বাস করে ও ভালোবাসে, তাহলে তিনি বারবার সংসদ-সদস্য হতে পারবেন। না হলে তা সম্ভব হবে না।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুলের সভাপতিত্বে কর্মশালা সঞ্চালনা করেন বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব এবিএম মোশাররফ হোসেন। ৩১ দফা নিয়ে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটি আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, প্রশিক্ষণ কমিটির সদস্য বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, কেন্দ্রীয় নেতা রাশিদা বেগম হীরা, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, অ্যাডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আরলী, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন ও আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।
এদিকে সকালে উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজ যারা সংস্কারের কথা বলছেন, তাদের অনেককে আন্দোলন-সংগ্রামে দেখিনি। তিনি বলেন, আজ আমরা দেখছি, যারা বিখ্যাত লোক, টেলিভিশনে বড় বড় বক্তব্য দিচ্ছেন, বিগত বছরগুলোয় যখন বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশ, এসবি, ডিবির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েছিল, তখন দেখিনি।
মঈন খান বলেন, জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের কৃতিত্বদারি কোনো একজন মানুষ নয়। এই গৌরবের অধিকারী দেশের প্রতিটি মানুষ, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। এ গণতন্ত্রের জন্যই ১৯৭১ সালে লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছিল।
বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনচেতা উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, তাই পাকিস্তানকে তাড়িয়েছে, বাকশালকে তাড়িয়েছে। তাই ৩১ দফাকে উপলব্ধি করতে চাইলে এ প্রেক্ষাপটকে উপলব্ধি করতে হবে।