গাজীপুরে সড়ক অবরোধ বিক্ষোভ ভাঙচুর আগুন
দুই কারখানা শ্রমিক ও এলাকাবাসীর ত্রিমুখী সংঘর্ষে আহত ৬, অন্তত ২০ কারখানা বন্ধ ঘোষণা
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গাজীপুরে সোমবার সকালে বেক্সিমকো ও ডরিন ফ্যাশন কারখানার শ্রমিক এবং এলাকাবাসীর মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। পরে উত্তেজিত শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানায় হামলা-ভাঙচুর করে। তারা জিরানি বাজারসংলগ্ন অ্যামাজন নীট ওয়্যার নামে একটি পোশাক কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নেভাতেও বাধা দেয় তারা। এতে কারখানার মূল্যবান যন্ত্রপাতি পুড়ে যায়। এসময় আতঙ্কে অন্তত ২০টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে উভয় কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। মহাসড়ক বন্ধ থাকায় আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রী ও পরিবহণ শ্রমিকরা। দুপুর ২টার দিকে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
জানা গেছে, বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে বেক্সিমকোর শ্রমিকরা শনিবার থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আসছে। তৃতীয় দিন সোমবার সকাল ৭টায় তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চক্রবর্তী মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এদিন পাশের ‘ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড’ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় ওই কারখানার শ্রমিকরাও সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় ডরিন ফ্যাশন ও বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।
পরে শ্রমিকরা মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে নির্বিচারে ভাঙচুর ও মারধর করলে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে তাদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে দুই কারখানার শ্রমিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ বেধে যায়। দফায় দফায় চলে ধাওয়া-পালটাধাওয়া। এতে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন।
আহতরা স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। উত্তেজিত শ্রমিকরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পার্শ্ববর্তী জিরানি বাজারসংলগ্ন অ্যামাজন নীট ওয়্যার নামের একটি পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা গেলে তাদের বাধা দেয় তারা। এতে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে বিলম্ব হওয়ায় কারখানার ফেব্রিকস, তৈরি পোশাকসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি পুড়ে যায়। এছাড়া শ্রমিকরা নির্বিচারে যানবাহন ভাঙচুর এবং বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে হুমকি ও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকলে আশপাশের প্রায় ২০ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক বন্ধ থাকায় সব যানবাহন কাশিমপুর, কোনাবাড়ি, পাইনশালন, ভবানীপুরসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে প্রবেশ করে। এতে ওইসব সড়কে দিনভর তীব্র যানজট লেগে থাকে। তবে, দুপুর ২টার পর থেকে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতির ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কিছু যাত্রীবাহী বাস, লরি ও বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, মহানগরীর কাশিমপুরের সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা তাদের অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। মহাসড়কের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিকল্প পথে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শ্রমিকরা জানান, বেতন পরিশোধ না করলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। যতদিন টাকা না পাবেন, ততদিন তারা বাসায় ফিরবেন না। বিক্ষোভকারীদের একজন আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বকেয়া বেতন পাওয়ার কোনো আশ্বাস পাইনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আজ শ্রমিকরা খুব বেশি উত্তেজিত ছিল! কাউকে দেখলেই মারধর ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেছে। পুলিশ ও সেনাসদস্যরা এসে তাদের মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করে। দুপুরের পর চান্দ্রা-নবীনগর সড়কে শ্রমিকদের দেখা যায়নি।
বেঙ্গল কারখানার অপারেটর মাসুদ রানা বলেন, গার্মেন্টস না থাকলে আমরা কী খাব? আমার মনে হয় যেসব ইস্যু নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে এগুলো পরিকল্পিত। বেতন ভাতা পরিশোধ, না পরিশোধ এটি সম্পূর্ণ মালিক ও শ্রমিকের নিজস্ব বিষয়। এ নিয়ে অহরহ রাস্তা অবরোধ, ভাঙচুর ও ফ্যাক্টরি জ্বালিয়ে দেওয়া কোনো শ্রমিকের কাজ হতে পারে না। নিশ্চয়ই গার্মেন্টস সেক্টরকে ধবংস করার জন্য এর পেছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।
শিল্প পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে পোশাক ও সিরামিক কারখানায় ৪১ হাজার কর্মী রয়েছে। তাদের মধ্যে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে সড়ক অবরোধ করে অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানায়। রোববার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল ও চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে রাখে তারা। রাতে অবরোধ তুলে নিলেও সোমবার সকাল থেকে পুনরায় ওই সড়ক অবরোধ করে বেতন পরিশোধের দাবি জানায়। গাজীপুর দমকল বাহিনীর উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, কাশিমপুর দমকল বাহিনীর দুটি ইউনিট দুপুর ২টার দিকে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। আগুনে কারখানার ফেব্রিকস, তৈরি পোশাকসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে।