সংলাপে অর্থ উপদেষ্টা
অর্থ পাচার বন্ধে নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভবিষ্যতে কেউ যাতে অর্থ পাচার করতে না পারে, তার বন্দোবস্তই অন্তর্বর্তী সরকার করছে। আমরা একটি রাস্তা তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে যে সরকারই আসুক, সরকারি-বেসরকারি যে সাইড হোক, কেউ টাকা পাচার করতে পারবে না। এ জন্য নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে। আর ইতোমধ্যে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।
শনিবার ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের আয়োজনে ফিন্যান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক রিফর্মস ইন বাংলাদেশ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এতে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বাংলাদেশের দুটো কিডনি। একটি ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর, আরেকটি এনার্জি সেক্টর। দুটোই খেয়ে ফেলেছে বিগত সরকার। আর ‘যারা এনার্জি সেক্টর খেয়েছে, তারাই আবার ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর খেয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের মেরামত যদি না হয় তবে শুধু সংস্কার দিয়ে আগানো যাবে না। ফলে এজন্য প্রথমে ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা’ আনতে হবে।
শনিবার ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের আয়োজনে ফিন্যান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক রিফর্মস ইন বাংলাদেশ শীর্ষক সংলাপে তারা এসব কথা বলেছেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সংলাপে দেশের আর্থিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার নিয়ে প্যানেল আলোচনা, পোস্টার প্রেজেন্টেশন এবং আর্থিক খাতের চলমান চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়।
সেখানে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশের অর্থনীতিতে যে গভীর ক্ষত হয়েছে, তা বাইরে থেকে কল্পনা করা যাবে না। ‘পৃথিবীর আর কোনো দেশের অর্থনৈতিক খাতে এত বিশৃঙ্খলা নাই। এ ক্ষতি পুনরুদ্ধারে স্বল্পমেয়াদি সংস্কার কাজ চলছে। তবে সংস্কারের মাধ্যমে পুরো অর্থনীতি দ্রুত আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়। যদিও ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রায় কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরছে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমাদের যেটা হয়েছে- উন্নয়ন কৌশলে ভুল ছিল। অর্থনীতিতে শুধু উন্নয়ন দেখানোর যে প্রবণতা, সেই উন্নয়ন কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।’
বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের পরও দাম না কমার জন্য ‘চাঁদাবাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের’ দায়ী করেন উপদেষ্টা। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগের সরকারের ভুল নীতির কারণে মূল্যস্ফীতি কমছে না, যদিও নিয়ন্ত্রণে আনতে নানা ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর আগে দেওয়া তথ্য নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তথ্য প্রবাহ ঠিক রাখতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ ভুল তথ্যে ভুলনীতি প্রণয়ন ঠিক হবে না। আগে এগুলো ঠিক করা হয়নি, কারণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছিল না। একের পর এক দুর্নীতি ও অন্যায় হয়েছে, যার মাশুল দিচ্ছে দেশের জনগণ।
সরকার পরিবর্তনের পরই একটি সংস্থা আমাদের উচ্চ সুদে ঋণ দিতে চেয়েছিল। আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ উচ্চ সুদের ঋণ নিলে আমরা পরিশোধ করতে পারব না। যদিও আগে ফিজিবিলিটি পরীক্ষা ছাড়াই অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। একটি প্রকল্প থেকে কত টাকা আয়-ব্যয় হবে, কতদিন লাগবে এবং প্রকল্পের বিপরীতে নেওয়া ঋণের সুদের হার কী হবে, এসব বিষয়ে কোনো গবেষণা না করেই উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়া হতো।
সদ্য সাবেক গভর্নর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৪২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করতে করতে ৩০ বিলিয়নে নিয়ে আসলেন তিনি। কারণ ছিল বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল করা। কিন্তু কোনো কাজই হয়নি। ১২ বিলিয়ন ডলার নিঃশেষ করে তিনি এখন ঘুমিয়ে আছেন। কিন্তু কোথায় আছেন জানি না। আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পলিসিগত লিগ্যাসি বা নীতিগত দীর্ঘসূত্রতা পেয়েছি। যার কারণে কোনো কিছু পরিবর্তন করতে চাইলেই দ্রুত করা যাচ্ছে না।
ওই সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘মাসোহারা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতরে লোক রাখা হয়েছিল। তারা টাকা ছাপিয়েছে, ভুয়া রিজার্ভ দেখিয়েছে। ব্যাংক চালানোর মতো যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও এমন ব্যক্তিকে ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে প্রবৃদ্ধির তথ্য ও উপাত্তে মারাত্মক সমস্যা ছিল। তথ্যে রাজনীতিকীকরণ হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ ছাড়া প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে, যেখানে ট্যাক্স জিডিপি বাড়েনি। ট্যাক্স নেই, বিনিয়োগ নেই আর দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখাতে গিয়ে সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য শিক্ষায় গুরুতর অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রের মেরামত প্রশ্নে সবার আগে বিনিময় হার, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণসহ অর্থনীতির অন্যান্য জায়গায় স্থিতিশীলতা আনার অনুরোধ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর সেলিম আর এফ হোসেন এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ফারজানা লালারুখ।