দুই শিশুকে হত্যার পর বাবার আত্মহত্যার চেষ্টা
যুগান্তর প্রতিবেদন ও মিরপুর (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর পল্লবী এলাকায় রোহান (৭) ও মুসা (৪) নামের দুই শিশুকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এরপর শিশু দুটির বাবা আ. আহাদ মোল্লাও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পল্লবীর বাগেরটেক এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় এই ঘটনা ঘটে। পুলিশের ধারণা, পারিবারিক কলহ ও আর্থিক অনটনের কারণে শিশু দুটিকে হত্যার পর বাবা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। দুই শিশুর মরদেহ রাখা হয়েছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। আর গুরুতর আহত আহাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, আহত আহাদের শ্বাসনালি কেটে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রতিবেশী হাসান বলেন, শনিবার সকাল দশটার দিকে ভাড়া বাসায় দুই শিশু সন্তানকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর তার বাবা আহাদ নিজের গলায় নিজেই ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশের সহযোগিতায় আহাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মাকছেদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে পারিবারিক কলহ, আর্থিক অনটনসহ নানাবিধ কারণে ছুরি দিয়ে দুই শিশুর গলা কেটে হত্যা করেছেন তাদের বাবা আহাদ। একই ছুরি দিয়ে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। স্থানীয় লোকজন শিশু দুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ডিসি মাকছেদুর রহমান আরও বলেন, এ ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। আহাদের স্ত্রী জানিয়েছেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ বাধত।
জানা গেছে, আহাদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায়। আহাদ ও তার স্ত্রী রোজিনা আক্তার সন্তানদের নিয়ে পল্লবীর বাগেরটেক এলাকার একটি তিনতলা বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। আহাদ বাসাবাড়িতে নিরাপত্তার কাজ ও রোজিনা মেসে রান্না করেন।
শনিবার দুপুরে পল্লবীর বাগেরটেক এলাকার ওই বাসায় গিয়ে কথা হয় রোজিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, স্বামী আহাদ কাজ শেষে শনিবার সকালে বাসায় আসেন। তিনি দুই সন্তানকে বাবার কাছে রেখে মেসে রান্না করতে যান। এরপর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একটি কক্ষে আহাদ চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন দুই সন্তানকে। এরপর নিজের গলায়ও ছুরি চালান আহাদ। খবর পেয়ে রোজিনা বাসায় ছুটে আসেন। বাবা আহাদ মোল্লাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেশী তাহমিনা বলেন, বড় ছেলে রোহান বাসার সামনে খেলছিল। সেখান থেকে ডেকে নিয়ে যায় বাবা। ছোট ছেলে বাসায় ছিল। পরে তাদের নানার চিৎকারে জানতে পারি বাচ্চা দুটিকে গলা কাটে হত্যা করা হয়েছে। ওই বাড়ির মালিক মো. নাসির বলেন, আহাদ তার পরিবার নিয়ে আমার বাড়িতে দুই মাস যাবত বসবাস করে আসছিলেন। তাদের কোনো খারপ কিছু আমার চোখে পড়েনি।
পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আদিল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, পারিবারিক কলহ ও অভাব অনটনের বিভিন্ন বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। আহাদকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটির তদন্ত চলছে। এরপরই জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা কী।