গুম-খুনের শেষ দেখে ছাড়ব: আইন উপদেষ্টা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ফ্যাসিবাদের শেকড় অনেকদূর ছড়িয়েছে। ফ্যাসিস্টের শেকড় এতটাই গভীরে চলে গেছে যে, এর বিরুদ্ধে লড়াই সহজ নয়। ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদের শেকড় কয়েক সপ্তাহে মোকাবিলা করা কঠিন। তবে আমরা থেমে থাকব না। আমাদের সক্ষমতার ঘাটতি থাকলেও আন্তরিকতা আর সাহসে কোনো ঘাটতি নেই। আমরা গুম-খুনের শেষ দেখে ছাড়ব। শুক্রবার মানবাধিকার সংস্থা এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসএপিরেন্সের (এএফএডি) এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা এমন মন্তব্য করেন।
আসিফ নজরুল আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের চেয়েও গুম খারাপ অপরাধ। আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সক্ষমতার ঘাটতি থাকলেও গুমের বিরুদ্ধে আইন করার ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতা আর সাহসে কোনো ঘাটতি নেই। গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সরকার চিন্তা করছে। গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সরকার সব সরকারের মতো নয়। আমরা কোনো পলিটিক্যাল ফিগার নই। আল্লাহর রহমতে আমরা প্রত্যেকে আমাদের প্রফেশনে প্রতিষ্ঠিত। তাই আগের সরকারের পুনরাবৃত্তির প্রশ্নই আসে না। তিনি আরও বলেন, গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য কোনো সরকার কমিশন গঠন করেনি। কিন্তু এ সরকার করেছে। সরকার পরিচালনায় কোনো ভুল হলে আপনারা নিশ্চয়ই সমালোচনা করবেন। অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, বর্তমান সরকার গুম হওয়া মানুষের পরিবারের সঙ্গে রয়েছে। গুমের শিকার হয়েছেন শুধু তারাই নয়, যারা শেখ হাসিনার আমলে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। এ সরকার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চায়। সম্পত্তির উত্তরাধিকার বা অন্য কোনো আইনি সমস্যায় যাতে গুমের শিকার পরিবার না পড়ে সেজন্য একটি অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারির অনুরোধ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, গুমের মতো মানবতাবিরোধী ঘটনা ভবিষ্যতে আর যেন না ঘটে, আর এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আইন উপদেষ্টার কাছে গুমের মতো অপরাধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়া প্রয়নের অনুরোধ করছি। যাতে এ ধরনের অপরাধ কেউ না করতে পারে।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সভাপতি সি আর আবরার বলেন, আমরা গুমের ঘটনার অবসান ঘটাব। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার দোসরদের সবাই বিদেশে যেতে পারেনি। অনেকেই বিপুল সম্পদ নিয়ে দেশে আছে। ছাত্র ও জনগণ সমর্থিত শাসনের কর্তৃত্ব খর্ব করার চেষ্টা করবে তারা। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেল এএফএডি’র দুদিনব্যাপী অষ্টম কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে গুমের শিকার ভুক্তভোগী ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ‘দ্য কমিশন ফর মিসিং অ্যান্ড ভিক্টিমস অব ভায়োলেন্স ইন ইন্দোনেশিয়া’র কো-অর্ডিনেটর ইয়াত্রি আন্দ্রিয়ানি বলেন, ইন্দোনেশিয়া কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে আমি আশা করি, বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সফল হবে। সব বাধা অতিক্রম করে অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
গুমের শিকার ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের তিক্ততার কথা জানান। স্বজনদের ফিরে পেতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান। বিএনপি নেতা ফিরোজের স্ত্রী আমিনা আক্তার বলেন, ২০১২ সাল থেকে তার স্বামী ও ভাই নিখোঁজ। এখনো তাদের ফিরে আসার অপেক্ষায় আছি। ১০ বছর ধরে সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রওশন আরা। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে রাতের অন্ধকারে গুম করা হয়েছে। কত জায়গায় খুঁজেছি কোথাও পাইনি। স্বামীকে হারিয়ে পাঁচ বছর ধরে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন-জানিয়ে নাসরিন জাহান বলেন, অন্ততপক্ষে আমাদের একটি সন্ধান দিন যে সে আছে বা নেই।