Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

জুলাই-আগস্ট গণহত্যা

হাসিনাকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট চেয়ে চিঠি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হাসিনাকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট চেয়ে চিঠি

জুলাই-আগস্টে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের জন্য রেড অ্যালার্ট নোটিশ চেয়ে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, পুলিশের মহাপরিদর্শকের মাধ্যমে রোববার এ চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসাবে শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ অন্তত পাঁচশ জনের বিরুদ্ধে ১১১টি অভিযোগ জমা পড়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এতে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। আবেদনে সংগঠন হিসাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ চাওয়া হয় আবেদনে। ১৭ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন এই ট্রাইব্যুনাল।

চিফ প্রসিকিউটর মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত পরশু (রোববার) ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ পাঠানোর জন্য বা রেড অ্যালার্ট জারি করার জন্য অনুরোধ করেছি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মামলার আসামি, তিনি পলাতক আছেন। চিফ প্রসিকিউটর অফিস থেকে আমরা রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি ইন্টারপোলের কাছে।’

শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পুলিশিং সংস্থা হিসাবে ইন্টারপোল যেন তাকে গ্রেফতার করার ব্যবস্থা নেয় এবং রেড অ্যালার্ট জারি করে, সে ব্যাপারে আমরা রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। আমরা সরাসরি ইন্টারপোলকে এই চিঠি লিখেছি।’ ‘তিনি (শেখ হাসিনা) মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা পেন্ডিং আছে। কিন্তু বাংলাদেশের আওতার বাইরে তিনি চলে গেছেন’, যোগ করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে মঙ্গলবার দুটি আবেদন তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। প্রথম আবেদনে ট্রাইব্যুনাল জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জাকির হোসেনসহ ৪ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে বলে জানান প্রধান প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, আমরা চারজন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছিলাম, আদালত সেটা মঞ্জুর করেছেন। এই চারজনের মধ্যে একজন যাত্রাবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন। এক তরুণকে বুকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন এই পুলিশ অফিসার ও তার লাশকে নানাভাবে বিকৃত করেন। জাকির হোসেন এখন পলাতক আছেন। জাকির হোসেনসহ আরও তিনজন পুলিশ অফিসার যাত্রাবাড়ীর নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ আছে তদন্ত সংস্থার কাছে।

দ্বিতীয় আবেদন প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার সাবেক ডিজি বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ এসেছে তদন্ত সংস্থার কাছে। হত্যাকাণ্ড, গুমের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। তিনি অলরেডি আমাদের ট্রাইব্যুনালের আদেশে গ্রেফতার আছেন। তাকে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। আদালতের কাছে একদিনের জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেছিলাম, আদালত আবেদন মঞ্জুর করেছেন। কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে এই তারিখ আমরা জানাচ্ছি না।’

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, হয়রানির শিকার হতে পারে ভেবে পুলিশ বাহিনী নানাভাবে দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করছে। কোনো নির্দোষ পুলিশ কর্মকর্তাকে হয়রানি করা হবে না। তবে যাদের বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যাবে, তারা কেউ ছাড় পাবেন না।

গত ২৭ অক্টোবর গ্রেফতার সাবেক ১০ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টাসহ ২০ জনকে হাজিরের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আদেশে সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব, বিচারপতিসহ ১৪ জনকে ১৮ নভেম্বর এবং ছয়জন সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাকে ২০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ১৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন এই আদালত। তাদের গ্রেফতার করে ২০ নভেম্বর আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ইন্টারপোলের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত এবং সাময়িকভাবে গ্রেফতারের জন্য অনুরোধ হিসাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য রেড নোটিশ জারি করা হয়। এটি আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা নয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম